শুধু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নয় সরকারিসহ প্রায় সব নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, জালিয়াতি ও কক্ষে পরীক্ষার্থীদের সুবিধা মতো সীট প্লাটের কাজ করেন ইউজিসি’র সহকারি পরিচালক ওমর সিরাজ।শুক্রবার বিকেলে আগারগাঁওস্থ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।এর আগে সকালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)২য় তলায় অভিযান চালিয়ে ওমর সিরাজসহ তিনজনকে আটক করে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা।আটককৃতরা হলেন, যশোরের শার্শা উপজেলার সোনারহোপ গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ও ইউজিসির সহকারী পরিচালক ওমর সিরাজ, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার ভাওয়ালখোলা গ্রামের আনসার আলীর ছেলে ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) স্টোর কিপার রেজাউল করিম (৩২) ও বগুড়ার গকুল উপজেলার আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে ঈশান ইমতিয়াজ হৃদয় (২২)। এসময় তাদের কাছ থেকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ২০১৪ এর সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র ২৩টি, একই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ২টি, নগদ দুই লক্ষ টাকা, বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের সীল, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, তিনটি মোবাইল, একটি আইপ্যাড উদ্ধার করা হয়।বিকেলে আগারগাঁওয়ে র্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা ইউজিসির সহকারি পরিচালক ওমর সিরাজ। শুধু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নয় কৃষি ব্যাংকের অফিসার, জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তরপত্র সরবরাহকারী চক্রের মূলহোতাও তিনি।তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, চক্রের মূলহোতা ওমর সিরাজ, সহকারী পরিচালক, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের কর্মরত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রের বাকি সদস্যদের সঙ্গে অসাধু উপায় ও জালিয়াতি করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহ করে আসছিল।জিজ্ঞাসাবাদে মূলহোতা ওমর সিরাজ জানায়, মূলত তিন ধাপে জালিয়াতি করে থাকে সে। প্রথম ধাপে বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় তার পূর্বে বাছাইকৃত একটি গ্রুপকে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থী হিসেবে প্রেরণ করা এবং এই গ্রুপের কাজ হচ্ছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কৌশলে হল থেকে বের করে অপেক্ষমান অপর একটি গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা।দ্বিতীয় ধাপে প্রশ্নপত্র সংগ্রাহক গ্রুপটি প্রশ্নপত্রটি দ্রুত সমাধান করে মূলহোতা ওমর সিরাজের কাছে সরবরাহ করে। সর্বশেষ ধাপে মূলহোতা ওমর সিরাজ ও আরো কিছু সহযোগীর সহায়তায় পূর্বে থেকেই চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের মাঝে অত্যন্ত সুকৌশলে উন্নত প্রযুক্তির ডিভাইসে (চীন থেকে আমদানীকৃত মাস্টারকার্ড ও ব্লুটুথ যা অতিক্ষুদ্র এবং কানের মধ্যে লুকানো থাকে) মাধ্যমে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়। আটককৃত অপর দুই সদস্যের মধ্যে ঈশান ইমতিয়াজ ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকেই এবং রেজাউল করিম (স্টোর কিপার, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন এ চাকুরীরত অবস্থায়) উক্ত চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওমর সিরাজ আরো জানায়, ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার জমাকৃত উত্তরপত্র অত্যন্ত সুকৌশলে রেজাউল করিম (স্টোর কিপার, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন) এবং কন্ট্রোলার পার্সোনাল অফিসার নাজিমের সহায়তায় বের করে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের দিয়ে পুনরায় উত্তরপত্র তৈরী করে জমা করে দিত।এক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষার্থী পরীক্ষার উত্তরপত্র সুকৌশলে পরীক্ষার হল থেকে বের করে নিয়ে পুনরায় উত্তরপত্র তৈরী করে ওমর সিরাজের কাছে জমা দেওয়ার জন্য দিয়ে দিত। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান জানান, অসাধু উপায় অবলম্বনের জন্য মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ চক্র প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৫ লাখ, কৃষি ব্যাংকের অফিসার নিয়োগের জন্য ছয় লাখ এবং জুডিসিয়ার সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগের জন্য দশ লাখ টাকা অথবা চেক নিতো।তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।# সহজ প্রশ্নে সবার মুখে হাসি# ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল# বরিশালে ১০ লাখ টাকায় মেডিকেলের প্রশ্নপত্র!# মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসে অত্যাধুনিক ডিভাইসজেইউ/এএইচ/পিআর
Advertisement