সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামো গত বুধবার থেকেই কার্যকর হয়েছে; তবে কাঁটছাট বা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামী ৫ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলার পর বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের আলোচনার পর চূড়ান্ত করা হবে। এরই মধ্যে অবশ্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই বেতন কাঠামোর প্রস্তাবে স্বাক্ষর করে মন্ত্রিসভায় প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখা বা বাদ দেয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। বিষয়টি ছেড়ে দেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তের ওপর। তার আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সরকারি চাকরিজীবীরা নতুন মূল বেতনের সঙ্গে সব ধরনের ভাতা পুরনো হারেই পাবেন। উদাহরণস্বরূপ অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল হচ্ছে ৮ হাজার ২৫০ টাকা।সূত্র জানায়, নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী চাকরিজীবীরা জুলাই থেকে বেতন পেলেও অপেক্ষা করতে হবে ভাতার জন্য। ১ জুলাই থেকে নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ীই বেতন নির্ধারিত হবে। তবে ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেল পেয়েছেন তাদের নতুন কাঠামো অনুযায়ী বেতন নির্ধারণ হবে। যদি মন্ত্রিসভার বৈঠকে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড না রাখা হয় তবে ১ জুলাই থেকে আর কারও নতুন করে সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেল দেয়া হবে না।অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও পে-স্কেল পর্যালোচনা-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সদস্য মাহবুব আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর বাস্তবায়ন শুরু হবে।চলতি (২০১৫-১৬) অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেতন ও চাকরি কমিশন ২০১৩ গঠন করেছিলাম। ১ জুলাই ২০১৫ থেকে নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়ন শুরু হবে। গৃহীত পদক্ষেপগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করবো।’তবে পর্যায়ক্রমে পে-স্কেল বাস্তবায়নের বিষয়টি ভালোভাবে দেখছেন না সরকারি চাকরিজীবীরা। তাদের মতে, পে-স্কেল বাস্তবায়নের সঙ্গে সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে। আর এটি যদি দুই বছরে বাস্তবায়ন হয়, তাহলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়বেন তারা। কারণ পাঁচ বছর পর পে-স্কেল বাস্তবায়ন হয়। এক বছর আগেই এ সময় শেষ হয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়ন করতে আরো দুই বছর লাগলে ক্ষতিতে পড়বেন কর্মকর্তারা।তারা আরো জানান, পে-স্কেল বাস্তবায়নের ঘোষণা যখনই দেয়া হোক, বাস্তবায়নটা সব সময় ছয় মাস বা এক বছর আগে থেকে দেয়া হয়। এতে চাকরিজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন না। কিন্তু এবার আগের সব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর পর বাস্তবায়ন হচ্ছে।প্রস্তাবিত পে-স্কেলে টাইম স্কেল না থাকা ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান নিম্নস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এ প্রসঙ্গে বলেন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কর্মচারীদের আন্দোলনের ফসল। কিন্তু পে-কমিশন এটি বাতিলের সুপারিশ করেছে। পে-কমিশনে সরকারি কর্মচারীদের সঠিক প্রতিনিধিত্ব না থাকায় তাদের স্বার্থ দেখা হয়নি।সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে নতুন পে-স্কেলের মূল বেতনের সঙ্গে অন্য ভাতাগুলোও পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুলাই থেকে নতুন পে-স্কেল পুরোপুরি কার্যকর হবে। অষ্টম বেতন কাঠামো পর্যালোচনার জন্য গঠিত সচিব কমিটির প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নতুন স্কেলের শুধু বেতন বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত পাঁচ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৫ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু বেতন বাবদ সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।প্রস্তাবিত বাজেটে একই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। তবে বিভিন্ন ধরনের ভাতা বাস্তবায়ন করা হবে না বিধায় প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বেশি বাড়ানো হয়নি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিভিন্ন ধরনের ভাতা বাস্তবায়নের জন্য ১৬ হাজার ২৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে একই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুনভাবে অনেকে চাকরিতে যোগদান করায় তাদের কারণে ভাতার বরাদ্দ বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অষ্টম পে-স্কেলে সর্বোচ্চ বেতন হচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা। নতুন কাঠামোতে বেতনের গ্রেড থাকছে ২০টি। তবে মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্য সচিবের বেতন ধরা হয়েছে ৯০ হাজার টাকা (নির্ধারিত) এবং সিনিয়র সচিবের বেতন ৮৪ হাজার টাকা (নির্ধারিত)।উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেতন ও চাকরি কমিশন ২০১৩ গঠন করেছিলাম। আশা করি নতুন বেতন কাঠামো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে স্বস্তি এনে দেবে। অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চালনে আর একটি অবদান হবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, যা অর্থনীতির সার্বিক প্রবৃদ্ধির হারে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।’ জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চালন করেছে। পাশাপাশি কয়টি ধাপে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। ফলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বাজেট ঘোষণার পরের দিন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন স্কেল কয়টি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এ নিয়ে একাধিকবার অর্থমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উত্তর তিনি দেননি। তবে সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী জানান, অনেক প্রশ্নের উত্তর সব সময় দেয়া সম্ভব হয় না। যতটুকু সম্ভব উত্তর দেয়া হয়েছে।# বেতন স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে শেষ মুহূর্তে জটিলতা# অনুমোদনের অপেক্ষায় চূড়ান্ত বেতন কাঠামো# নতুন বেতন নির্ধারণে অভিন্ন নীতিমালার দাবি# নতুন পে স্কেলে বেতন জুলাই থেকে# অর্থমন্ত্রীর কাছে নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ# নববর্ষ ভাতা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা# পে স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ# সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দিয়েই চূড়ান্ত পে স্কেল# দুই ধাপে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করবে সরকার# চূড়ান্ত হলো অষ্টম বেতন কাঠামো # নতুন পে স্কেলের ওপর সচিব কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত# প্রতিবেদনের পর পে-কমিশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত : মুহিত# বরাদ্দ বাড়ছে বেতন-ভাতা খাতে # ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ# অবশেষে চূড়ান্ত হলো সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো# পে-স্কেল : মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে সচিব কমিটির সুপারিশ
Advertisement
বিএ/এমএস