গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিলের বিপক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও
সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সরকারি চাকরিজীবিরা। সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন খোদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও। বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা ও সকল সরকারি চাকরিজীবিদের এই অবস্থানে সরকার রীতিমত বিপাকে পড়েছে।
এরই মধ্যে এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ বলছেন সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল না থাকলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা আর্থিক দিক থেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আবার কেউ বলছেন প্রস্তাবে যা ছিল তাই করা হয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে কারা কারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে জনবল সংখ্যা ২১ লাখ। তাদের মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীই বেশি। এরপরই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির এসব কর্মচারীর বেশির ভাগেরই পদোন্নতির সুযোগ নেই। তাঁরা যে পদে চাকরিতে প্রবেশ করেন সেই পদ থেকেই বিদায় নেন।
প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির। সারা দেশে তিন লাখের বেশি সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। চাকরিজীবনে তাঁদের কোনো পদোন্নতি নেই। পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি না করে তাঁদের সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল কাটা হলে সেটা হবে অমানবিক। সারা দেশে প্রায় এক লাখ স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী রয়েছেন। তৃতীয় শ্রেণির এসব পদে কোনো পদোন্নতি নেই। তাঁদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কেড়ে নেওয়ার খবরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
আবার সেনাবাহিনীর সিপাহি, বিমানবাহিনীর বিমানসেনা, নৌবাহিনীর নৌসেনা, পুলিশের কনস্টেবল ও হাবিলদার, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবির সৈনিক, কারারক্ষী এবং ফায়ারম্যানের পদগুলোও তৃতীয় শ্রেণির। এসব পদের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। এই বিপুলসংখ্যক সেনার বেশির ভাগই চাকরিতে প্রবেশের পর দীর্ঘদিন একই পদে কাজ করেন। তাঁদেরও সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভুঁইয়া মিলন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা গত কয়েক দিনে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের বেশির ভাগই আমাদের সমস্যা উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল হলে আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।
এদিকে বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ফরাসউদ্দিনের প্রস্তাব অনুযায়ী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে এক শ্রেণির কর্মচারী হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কিন্তু যারা নতুন চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন, তাঁরা লাভবান হবেন।
অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। কারণ ক্যাডার সার্ভিস ছাড়া আর কারো চাকরিতেই নিয়মিত পদোন্নতি হয় না। আবার ক্যাডার সার্ভিসেও সবার নিয়মিত পদোন্নতি হয় না।
অপরদিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান রোববার বলেছেন, `কর্মচারী নেতারা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে আমার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। তারা তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চয়ই সহানুভূতির সঙ্গেই বিবেচনা করবেন।`
আবার অন্য এক সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা করা হবে। সরকার নিশ্চয় সরকারি কর্মকর্তাদের খারাপ কিছু কমনা করে না। এই সিদ্ধান্তে তারা যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহলে মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মচারী যখন স্কেলের শেষ ধাপে পৌঁছে যান তখন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে পরের স্কেলে উন্নীত করা হয়। কিন্তু পদোন্নতি না দিতে পারলে তখন তাঁকে টাইম স্কেল দিয়ে তাঁর আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে ক্যাডার সার্ভিসে টাইম স্কেল দেওয়া হলেও নন-ক্যাডারে দেওয়া হয় ১৯৮৩ সালে। ১৯৭৭ সাল থেকে সিলেকশন গ্রেড চালু হয়। একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করতে বাধ্য হলে একজন সরকারি কর্মচারী তাঁর চাকরির ৮, ১২ ও ১৫ বছরে গিয়ে সিলেকশন গ্রেড পান।
# অবশেষে চূড়ান্ত হলো সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো
# দুই ধাপে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করবে সরকার
# চূড়ান্ত হলো অষ্টম বেতন কাঠামো
# নতুন পে স্কেলের ওপর সচিব কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত
# প্রতিবেদনের পর পে-কমিশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত : মুহিত
# বরাদ্দ বাড়ছে বেতন-ভাতা খাতে
# ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ
# অর্থমন্ত্রীর কাছে নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ
# নববর্ষ ভাতা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা
# পে স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ
# সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দিয়েই চূড়ান্ত পে স্কেল
# টাইম স্কেল বাতিল : ক্ষোভ তীব্র হচ্ছে প্রশাসনে
জেআর/এআরএস/এমএস