সাহসিনী তিন কন্যার জয়
যুক্তরাজ্যে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে সাধারণ নির্বাচন। এখনও এ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হয় নি। তবে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের বাংলা কমিউনিটিতে নির্বাচনের ফল নিয়ে শুরু হয়েছে আনন্দ উল্লাস। কেননা চূড়ান্ত ফলের আগেই জিতে গেছে বাংলাদেশ। জয় হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন সাহসী কন্যার।
পার্লামেন্ট নির্বাচনে এমপি পদের জন্য লেবার দলের হয়ে লড়েছেন তিন বাংলাদেশি কন্যা রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা আশা হক। তারা প্রত্যেকেই মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষের।
তবে গতবারের নির্বাচনে (২০১০ সাল) জয়ী হয়ে প্রথম ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী। তাঁর বিজয়ের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশিদের অভিষেক ঘটে। এবারে তিনি আর একা নন। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরো দুইজন। এর মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক।
রুশনারা সিলেটি কন্যা। জন্ম বিশ্বনাথে। গতবার পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে প্রায় ১২ হাজার ভোট বেশি পেয়ে তিনি বিজয়ী হন। এবারও একই আসনে লড়েছেন তিনি। জয় পেয়েছেন ৬১ শতাংশ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন মাত্র ১৫ শতাংশ ভোট। যা দেখে বলা যায় রুশনার কাছে পাত্তাই পায় নি বিরোধী নেতা স্মিথ।
লেবার পার্টির হয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে। ২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির দখলে রয়েছে এ আসনটি। কিন্তু ২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবারদলীয় প্রার্থী গ্লেন্ডা জ্যাকসন অনেকটা হারতে হারতেই মাত্র ৪২ ভোটে জিতে যান এ আসনে। এ কারণেই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবার এ আসনটিকে টার্গেট সিট বানিয়েছিল। কিন্তু এ আসনে বঙ্গবন্ধুর নাততি টিউলিপ শক্ত হাতে হাতল ধরেন। ফলে হাজার ভোটের ব্যাবধানে বিরোধী নেতা মার্কোসকে পেছনে ফেলে জয় ছিনিয়ে আনেন তিনি। এ আসনটি ব্রিটেনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাঙালি অধ্যুষিত।
তবে জয় যত সহজে বলা যায় টিউলিপের জন্য বিষয়টা তত সহজ ছিল না। কেননা মা শেখ রেহানা হয়তো গর্বের সঙ্গেই বলবেন, তার মেয়ে টিউলিপের এ পর্যন্ত আসার পেছনে পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয় কোনো ভূমিকা রাখেনি। কিন্তু ঠিক ওই কারণেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপকে কিছু নোংরা রাজনীতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
টিউলিপের খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যখনই কোনো ছোটখাটো বিষয় সামনে এনেছে, তখনই তা লুফে নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছে ব্রিটেনের ডানঘেঁষা সংবাদমাধ্যমগুলো। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবি নিয়ে হৈচৈ এমনই একটি ঘটনা। তাই স্থানীয়দের মাঝে টিউলিপকে নিয়ে বাড়তি আগ্রহ দেখা যায় ভোটের আগে। যা বিজয়ে রুপ নেয়।
অপরদিকে, লন্ডনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকট। এ আসনে গতবার তিন হাজার ৭১৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন কনজারভেটিভ দলীয় প্রার্থী এঞ্জি ব্রে। ২০১০ সালের নির্বাচনে এঞ্জি ব্রে পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৯৪৪ ভোট। ১৪ হাজার ২২৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন লেবার দলের প্রার্থী। তবে এবারে শত চেষ্টা করেও বাঙ্গালী ব্রিটিশের কাছে রক্ষা হলো না তার। এঞ্জি ব্রে হার মানেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. রূপা হকের কাছে।
## ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জায়গা করে নিলেন রূপা হক
## হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতলেন টিউলিপ
## বিপুল ভোটে জয়ী রুশনারা
## জয়ের পথে রুশনারা এগিয়ে টিউলিপ
## টিউলিপ, রূপা ও রুশনারাকে রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন
এএইচ/পিআর