এক ট্রাফিক কর্মকর্তার আত্মতৃপ্তি


প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দিন দিন কল্যাণমুখী হয়ে উঠছে পুলিশ। নিঃসন্দেহে এটি দেশের জন্য মঙ্গল বার্তা। সম্প্রতি দেশের বেশ কিছু পুলিশ সদস্য কল্যাণকর কিছু কাজ করেছেন। এজন্য ইতোমধ্যে তারা পুরস্কারও পেয়েছেন।

এর মধ্যে অন্যতম ঘটনা হলো, চট্টগ্রামে মনির আহমেদ নামে এক ট্রাফিক পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল থেকে ডুবন্ত এক শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ বিভাগে সুনাম কুড়িয়েছেন। এজন্য অবশ্য ওই পুলিশ সদস্যকে নগদ অর্থ হিসেবে ২০ হাজার টাকার পুরস্কার দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।

দুদিন আগে চট্টগ্রাম পুলিশ বিভাগের আরেক সদস্য (এএসআই) নগরীর রাস্তা থেকে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরানো এক পাগলীকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই নারী একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেন। এ ঘটনাটিও সারাদেশে পুলিশে সুনাম কুড়িয়েছে। পুলিশের এই কল্যাণকর মানসিকতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও।
beggerবুধবার দুপুরেও এমন একটি কল্যাণকর কাজ করেছে গাজীপুর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

কল্যাণকর এই কাজটির নায়ক হলেন, ট্রাফিক বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন। তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে এ নিয়ে একটি আত্মতৃপ্তি তুলে ধরেছেন।

পাঠকের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :


”স্যার গো স্যার , আমাগো একটু সাহায্য করেন ।”

ট্রাফিক বিভাগ, গাজীপুরঃ

আজ দুপুরে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তার ট্রাফিক বক্সে এসে হাই হাউ মাউ করে কাদঁতে শুরু করলেন দুই জন মহিলা ।

সৌভাগ্যক্রমে আমিই বসা ছিলাম ।

বললাম, ”চাচী. কি হয়েছে? বলেন ।”

“আমাগো মহাখালি পর্যন্ত নামায় দেয়ার কথা । হেই জন্য ভাড়াও নিছে ১৫০ টাকা । কিন্তু আমাগো এহন এইহানে চৌরাস্তায় নামায় দিছে । আমরা এখন ক্যামনে যামু ?”

আবার হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো ।

এই কান্না শুধু ১৫০ টাকা ভাড়া হারানোর নয় , এ কান্না যেন এক প্রতারণার শিকার হওয়া নারীর !

সাথে সাথে আরো কিছু লোকজন চলে আসলো । সবারই একই অভিযোগ ।
যাওয়ার কথা মহাখালি । নামিয়ে দিয়েছে চৌরাস্তায় ।
কেউ গাড়ির নাম্বার বলতে পারছে না । শুধু শেরপুরের গাড়ি, জেবি পরিবহন । এই টুকু তথ্য ।

সাথে সাথে পাশে দাড়াঁনো আমাদের দুধর্ষ ট্রাফিক সার্জেন্ট সাবেক সাংবাদিক ও বর্তমানে কবি ওমর ফারুক এর দিকে তাকালাম ।

সে বুঝতে এক সেকেন্ড ও সময় নিলো না কি বলতে যাচ্ছি । কিছু বলার আগেই বললো
“স্যার আমি মটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া করি । দেখি কতদূর গেছে ? ব্যাটাদের শায়েস্তা না করলেই নয় ।”

সাথে সাথে বের হয়ে পড়লো সার্জেন্ট ওমর ফারুক ।
যেহেতু যাত্রী সব নামিয়ে দিয়ে গেছে আবার ইউটার্ণ করে ঘুরে আসতে পারে এই জন্য চৌরাস্তার দুই পয়েন্ট এ দুই সহকারী সার্জেন্ট (এটিএসআই) কে দাঁড় কারলাম ।

আমি ওয়্যারলেস যোগে খবর দিলাম সামনের দিকের সব ট্রাফিক পয়েন্টে । যেকোন মূল্যে গাড়িটি আটকাতে হবে ।

ধাওয়া করে ভোগড়া মোড় পর্যন্ত গিয়েও সিগনালে গাড়ি না পেয়ে পেট্রোল পাম্পগুলোতে খোজঁ শুরু হলো।

অবশেষে এক পেট্রোল পাম্প এর এক কোণা থেকে গাড়ি সহ চালক ও হেলপার কে ধরে আনা হলো ।

“স্যার গো, আমাদের মাফ করে দেন “ এবার হাউমাউ ড্রাইভার আর হেলপারের ।

আমি বললাম “উনাদের কাছে মাফ চাও । মায়ের বয়সী মহিলাদের সাথে যে অন্যায় আর প্রতারণা করছো সেটা তারাই মাফ করতে পারেন ।”

পরে মহিলাদের হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে ক্ষমা চাইল ।
কিন্তু মহিলারা তখনও কাদঁছে ।
তাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না মানুষ এমন প্রতারণা কিভাবে করে!
তাদের কে বিপদে ফেলতে পারে !

পরে তাদের ভাড়ার সব টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিলে তারা টাকা ফেরত দেয় ।

মহিলারা টাকা ফেরত পেলেন কিন্তু ক্ষমা করলেন কিনা বুঝা গেলো না ।
পরে আমরা মহাখালীর বাসে তুলে দিলাম তাদের ।

আর আমরা আইনের লোক তো আর ক্ষমা ভান্ডার নিয়ে বসি নাই ।

তাই আর আমরা গাড়িটি আটক করে ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে দিয়ে আইনী ব্যবস্থা নিলাম ।

সাখাওয়াত হোসেন
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার
ট্রাফিক বিভাগ

# সবাই যখন দেখছিলেন মনির তখন ঝাঁপিয়ে পড়লেন
# পুরস্কার পেলেন সেই ট্রাফিক কনস্টেবল

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।