৫০০ কোটির এক টাকাও আমার হাত দিয়ে খরচ হয়নি


প্রকাশিত: ০৪:১৩ পিএম, ২৯ জুন ২০১৫

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত তার আমলে আর্থিক লেনদেনের অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করায় সিন্ডিকেট সদস্য ও বর্তমান প্রশাসনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

তিনি দাবি করেন, বিএসএমএমইউকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলতে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ৪৮৫ কোটি টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে। তার হাত দিয়ে একটি টাকাও খরচ হয়নি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে যেসব অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন কেনাকাটা হয়েছে তা বিভিন্ন কমিটির সুপারিশ ও যথাযথ নিয়মনীতি মেনেই করা হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে স্বপ্রণোদিতভাবে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আই ওয়ান্ট টু বি ক্লিয়ার মাইসেলফ এজ বিফোর’ (আমি আগে যেমন পরিষ্কার ছিলাম তেমনি নিজেকে এখনো পরিষ্কার রাখতে চাই)। আমি চাই তদন্ত কমিটি সবকিছু খতিয়ে দেখুক।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত ১১টা ৫৬ মিনিটে জাগো নিউজে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ৬শ’ কোটি টাকা দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেদিন সকালেই সিন্ডিকেটের ৫৮তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সাবেক ভিসির দুই দফায় ছয় বছরের আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠিত হয়।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসানকে সভাপতি করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বিএসএমএমইউর ফ্যাকাল্টি অব সার্জারি অনুষদের ডিন প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও সাংসদ রুস্তম আলী ফরায়েজী।

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদনটি সম্পর্কে সুদূর মার্কিন মুলুকে বসে অবহিত হন সাবেক ভিসি ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। সোমবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক লেনদেন কীভাবে হয় তা বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন।

তিনি জানান, বিএসএমএমইউকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্পের সভাপতি স্বাস্থ্যসচিব। এ প্রকল্পের একজন প্রকল্প পরিচালকও রয়েছেন। এ প্রকল্পে মোট ৪৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। তিনি জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউডির মাধ্যমে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করা হয়েছে।

প্রজেক্ট প্রোফাইল অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করা হয়েছে। পিডব্লিউডির চিফ ইঞ্জিনিয়াররা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে ধাপে ধাপে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ করেছে।

পিডব্লিউডি প্রতিটি ধাপে উন্নয়ন কাজ শেষে যত টাকার কাজ হয়েছে তার বিল উত্থাপন করলে কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত বিল তৈরি করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি হিসেবে তিনি শুধুমাত্র চূড়ান্ত বিল পরিশোধের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করতেন। পিডব্লিউডি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিল উত্থাপন করে অর্থছাড় সাপেক্ষে বিল ওঠাতেন। বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি কোনো টাকা খরচ করতো না বলে তিনি জানান।

প্রকল্প ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে যে সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম ও কেনাকাটা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি জানান, ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রথম থেকেই তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে বিভিন্ন কার্যক্রম বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করে সম্পন্ন করেছেন।

বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন পরিচালকসহ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখভাল করতেন। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানদের নেতৃত্বে বিভাগীয় ক্রয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা হতো। প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় ক্রয় কমিটি সেগুলো যথাযথভাবে টেন্ডারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ক্রয়নীতি অনুসরণ করে করা হলো কি-না তা খতিয়ে দেখে অর্থ পরিশোধের প্রস্তাব রাখতো। তিনি ভিসি হিসেবে শুধু অর্থ অনুমোদনে স্বাক্ষর করতেন বলে দাবি ডা. প্রাণ গোপালের।

তিনি বলেন, সব ডকুমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে। তাই কমিটি সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে কোনো আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে পারে। তিনি আগামী ২ অথবা ৩ জুলাই দেশে ফিরবেন বলে জানান।

এমইউ/বিএ/এআরএস/এসআরজে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।