অভিজিৎ হত্যা : আনসারুল্লাহ নাকি আল-কায়েদা!


প্রকাশিত: ০১:৪৩ পিএম, ০৩ মে ২০১৫

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যার ঘটনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হলো। ঘটনার দুই মাস সাত দিন পর হত্যার দায় স্বীকার করে ভিডিও বার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা। রোববার সংগঠনটির পক্ষে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে একই ঘটনায় দায় স্বীকার করে আনসার বাংলা সেভেন নামের একটি সংগঠন।

সূত্রগুলো বলছে, আনসারুল্লাহ বাংলা দেশের অভ্যন্তরীণ জঙ্গি সংগঠন। কিন্তু আল-কায়েদা হত্যার দায় স্বীকার করায় দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় কিনা সে বিষয় নিয়ে এখন প্রশ্ন ওঠেছে।

এবছরের গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে বই মেলা থেকে স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় খুন হন অভিজিৎ রায়। তবে ঘটনার প্রকৃতি কোন চিত্র উৎঘাটন করতে পারেনি আইন-শৃংখলা বাহিনী।

গত বছরের শেষের দিকে আল কায়েদা বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের শাখা খোলার কথা জানিয়ে এক বার্তা দেয়। ওই ভিডিও বার্তার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, দেশে আল কায়েদার আপতত কোন শাখা নেই। তবে আমরা ভিডিও বার্তাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখছি।

জানা গেছে, অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত কাজ করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ডিবি পুলিশের কাছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবি পরিদর্শক ফজলুর রহমান।

তিনি জানান, শোনা যাচ্ছে নতুন করে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল-কায়েদা। এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ খবর না নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এদিকে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে আল-কায়েদার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে যেহেতু আল-কায়েদা দাবি করেছে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হবে।

ব্লগার অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করে আল কায়েদা যে ভিডিও বার্তা প্রচার করেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে অভিজিতের বাবা ড. অজয় রায় তাৎক্ষনিকভাবে কিছু বলেননি।

অন্যদিকে গত সোয়া দুই মাসে অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা হত্যায় কারো সংশ্লিষ্টতার বিষয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহতের পরিবার ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি উগ্রপন্থী ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সদস্যরা এ খুন করতে পারে। ব্লগে লেখালেখির কারণে অভিজিতকে টার্গেট করা হয়েছিল। তবে আনসারুল্লাহ নাকি আল-কায়েদা তা নিশ্চিত করার মতো কোন তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঠিক দুই ঘণ্টা পরেই অভিজিৎ হত্যায় দায় স্বীকার করে টুইট করেন আনসারউল্লাহ বাংলা-৭ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন। টুইটারে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পোস্ট করা বার্তায় সংগঠনটি অভিজিৎ রায়কে হত্যার ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। আল-কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ সংগঠনটি অভিজিৎ রায়কে ‘ইসলামের শত্রু’ বলেও আখ্যা দেয়। সেখানে আরো বলা হয়, ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধ করায় অভিজিৎ রায়কে গত ৩/৪ বছর ধরে ‘টার্গেটে’ রাখা হয়েছিলো। অভিজিৎ রায়কে হত্যার পর টুইটারে ‘হ্যাঁ, আমরা পেরেছি’ বলেও উল্লাস প্রকাশ করে সংগঠনটি।

এই টুইট বার্তার পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় গত ২ মার্চ প্রধান সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবীকে যাত্রাবাড়ী থেকে আটক করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তবে কয়েক দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও মামলার বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

অভিজিৎ রায় হত্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বোতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, মামলায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে, তথ্য পাওয়া গেছে -এমন কথা বলেই সীমাবদ্ধ থেকেছে পুলিশ। এছাড়া দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে দাবি করেছে অভিজিৎ রায়ের পরিবার।

এদিকে ঘটনার দুই মাস সাত ৭ দিন পর রোববার এই হত্যার দায় স্বীকার করে ভিডিও বার্তা দিয়েছে আল-কায়েদা। শনিবার জিহাদি ফোরাম নামের একটি ওয়েবসাইটে ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার প্রধান অসীম উমর।

## ব্লগার অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার আল কায়েদার

জেইউ/আরএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।