ইহরাম বাধলে যা করা নিষেধ
ইহরাম হজের প্রথম রুকন। হজের জন্য ইহরামের গুরুত্ব অত্যধিক। ইহরামের মাধ্যমেই মানুষ হজ ও ওমরার প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। যার ফলে ইহরামের মাধ্যমে অবৈধ সব কর্মকাণ্ড তো বটেই, সাধারণ সময়ের বৈধ কাজও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ইতোমধ্যে ইহরামের পূর্বাপর বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। ইহরাম বাধার পর হজ ও ওমরাকারীর জন্য কিছু কাজ নিষিদ্ধ ও বর্জনীয় রয়েছে। আবার কিছু কাজ করা মাকরূহ। ইহরামের নিষিদ্ধ ও বর্জনীয় কাজগুলো পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হলো।
ইহরামকারীর জন্য যা নিষিদ্ধ বা বর্জনীয়
১. এক সঙ্গে হজ বা ওমরায় গমণকারী স্বামী-স্ত্রীগণ পরস্পরের সঙ্গে যৌন সম্ভোগ নিষিদ্ধ। এমনকি এ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনাও নিষিদ্ধ।
২. পুরুষের জন্য সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করা, তবে স্ত্রীলোকদের জন্য তা নিষিদ্ধ নয়।
৩. মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা, তাঁবু ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়। স্ত্রীলোকগণ মাথা ঢাকতে পারেন তবে মুখ অনাবৃতই রাখবেন।
৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. চুল বা পশম কাটা বা উপড়ানো।
৬. নখ কাটা, তবে ভাঙ্গা নখ ভেঙ্গে ফেলায় ক্ষতি নেই।
৭. কোনো স্থলজ পশু শিকার করা। আল্লাহ বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু লা তাক্বতুলুস সাইদা ওয়া আনতুম হুরুমুন। অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! ইহরামরত অবস্থায় শিকার করো না। (সূরা মায়িদা : আয়াত ৯৫) অনুরূপভাবে শিকারকে হাঁকানো বা কাউকে দেখিয়ে শিকারের কাজে সহযোগিতা করা বা যবেহ করা নিষিদ্ধ।
৮. নিজের শরীর বা মাথা থেকে উকুন বা উকুন জাতীয় প্রাণী বধ করা। তবে সাপ, মশা-মাছি, ডাশ, গিরগিটি, ইঁদুর, পাগলা কুকুর ইত্যাদি মারার বৈধতা রয়েছে।
ইহরামকারীর জন্য যা মাকরূহ
১. শরীর থেকে ময়লা দূর করা, মাথা বা দাড়ি ও দেহ সাবান দ্বারা ধৌত করা।
২. মাথায় চুল বা দাড়ি চিরুণীর দ্বারা আঁচড়ানো। এমনভাবে চুলকানোও নিষিদ্ধ যে, চুলকানোর সময় উকুন পড়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দেয়।
৩. দাঁড়ি খিলাল করাও মাকরূহ, তবে দাঁড়ি পড়ে যায় না এমনভাবে খিলাল করায় কোনো ক্ষতি নেই।
৪. লুঙ্গি অর্থাৎ নিম্নাঙ্গের কাপড়ের সামনের দিকে সেলাই করা। তবে কেউ সতর ঢাকার নিয়্যাতে এরূপ করলে তা ওয়াজিব হয় না।
৫. গিরা দিয়ে চাদর অথবা লুঙ্গি পরা, সুই পিন ইত্যাদি লাগানো বা সূতা ও দড়ি দিয়ে তা বাঁধা।
৬. সুগন্ধি স্পর্শ করা অথবা ঘ্রাণ নেয়া, সুগন্ধি লাভের উদ্দেশ্যে সুগন্ধি বিক্রেতার দোকানে বসা, সুগন্ধিযুক্ত ফল অথবা ঘাসের ঘ্রাণ নেয়া।
৭. মাথা ও মুখ ব্যতিত শরীরের অন্যান্য অংশে বিনা প্রয়োজনে পট্টি বাঁধা। প্রয়োজনে পট্টি বাঁধা মাকরূহ নয়।
৮. কা’বা শরীফের পর্দার নিচে এমনভাবে দাঁড়ান যে তা মাথায় বা মুখে লেগে যায়।
৯. লুঙ্গিকে ফিতা লাগাবার মত ভাঁজ করে তা সূতা বা দড়ি দিয়ে বাঁধা
১০. নাক, থুতনী ও গাল কাপড় দিয়ে ঢাকা। তবে হাত দিয়ে ঢাকা যাবে।
১১. বালিশের ওপর মুখ রেখে উপুড় হয়ে শোয়া। মাথা বা গাল বালিশে রাখায় ক্ষতি নেই।
১২. রান্নাবিহীন সুগন্ধি খাবার খাওয়া। তরে রান্না করা সুগন্ধি খাবার মাকরূহ নয়।
সর্বোপরি কথা...
ইহরামকালীন সময়ে প্রত্যেক হজ ও ওমরা গমণকারীর জন্য উচিত, উপরোক্ত বিষয়গুলো সতর্কতার সহিত পরিহার করা। ইহরাম বাধার পর চার বারে সশব্দে তিনবার তালবিয়া পাঠ করার পর দরূদ পাঠ করা। অতপর এই দোয়াটি পড়া সুন্নাত- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিন গাদাবিকা ওয়ান নারি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশা করছি এবং আপনার অসন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’ হে আল্লাহ আপনি সব হজ ও ওমরা পালনকারীদের কবুল করুন। আমিন।
অবলম্বনে : দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, ইফা
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। ওমরা ও হজের ধারাবাহিক আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
# হজের প্রথম রুকন ইহরাম ও করণীয়
এমএমএস/আরআইপি