সিরাজ মাস্টারের মৃত্যুদণ্ড : আকরামের আমৃত্যু কারাদণ্ড


প্রকাশিত: ০৬:২৯ এএম, ১১ আগস্ট ২০১৫

একাত্তরে মানবাতাবিরোধী অপরাধে বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড এবং খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় দেন। ট্রাইব্যুনালে অপর দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো.জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক।

রায় পাঠ করার আগে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, আজ বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেন মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। তবে এই মামলার অপর আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদার মৃত্যুবরণ করায় তার মামলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ দিয়েছি।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টার সময় সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেনকে ট্রাইব্যুনালে হাজত খানায় আনা হয়। পরে ১০ টা ৫৫ মিনিটে আদালতের এজলাস কক্ষে আসামীর কা্ঠগড়ায় আনা হয় এবং ১১ টার দিকে রায় পাঠ শুরু করেন।

এ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সাতটি সুর্নিদিষ্ট অভিযোগের মধ্যে ৬টিই সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন প্রসিকিউশন। মোট ১৩৩ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়।

রায়ের প্রথম অংশ পড়েন বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সবশেষে মূল অংশ পাঠ ও রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

রায়ে বলা হয়, আসামি সিরাজের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর আকরাম দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনটি অভিযোগের মধ্যে একটিতে। রায়ে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে, অথবা গুলি করে সিরাজ মাস্টারের দণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে। ৭ টি অভিযোগের মধ্যে আসামি সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে ১,২,৩,৪ ও ৫ নং অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

প্রমাণিত ৫টি অভিযোগেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আসামি আকরামের বিরুদ্ধে ৭ নং অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। ৬ নং অভিযোগটি প্রমাণিত হয়নি।

প্রসিকিউটর সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন রায়ের পর তার প্রতিক্রিয়ায় রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আসামিরা ভয়ংকর অপরাধ করেছেন। এ দণ্ড তাদের প্রাপ্য ছিল। এ রায় দেশের বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের জন্য আরো একটি মাইলফলক। দেরিতে হলেও নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্থরা ন্যয়বিচার পেয়েছেন।                         

এ মামলার তিন আসামির মধ্যে কারাবন্দি অবস্থায় আব্দুল লতিফ তালুকদার গত ২৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করায় গত ৫ আগস্ট তাকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়।

গত ২৩ জুন মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে যে কোন দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছিল। এ মামলার তিন আসামির মধ্যে আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদার গত ২৮ জুলাই কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন।

এ মামলায় ১৫, ১৭ ও ২৩ জুন প্রসিকিউশন পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও মোশফেক কবির।

অন্যদিকে আসামিপক্ষে ১৭ ও ২১ জুন সিরাজ মাস্টারের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এডভোকেট আবুল হাসান এবং  আসামি খান আকরাম হোসেন ও লতিফ তালুকদারের পক্ষে ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন যুক্তিতর্ক পেশ করেন।

গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে গত ২৯ মার্চ পর্যন্ত তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হেলাল উদ্দিনসহ ৩২ জন সাক্ষী প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন।  গত ৬, ৭ ও ২১ এপ্রিল আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন ৫ জন সাফাই সাক্ষী।
 
গত বছরের ৫ নভেম্বর রাজাকার কমান্ডার ‘বাগেরহাটের কসাই’ নামে খ্যাত কুখ্যাত রাজাকার সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংগঠিত সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

তাদের মধ্যে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে ৩ টি করে অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের শাঁখারিকাঠি বাজার, রনজিৎপুর, ডাকরা ও কান্দাপাড়া গণহত্যাসহ ৮ শতাধিক মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং শতাধিক বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর ২০০৯ সালে নিমাই চন্দ্র দাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এ ৩ আসামিসহ ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাটের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। বাগেরহাটের আদালত এ মামলাটি ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন। পরে এ মামলাটি আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী টিম প্রতিবেদন দাখিল করে।
 
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ২০ মামলায় ২২ আসামির বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ এ ১০টি ও ট্রাইব্যুনাল-২-এ ১১টি মামলার রায় ঘোঘণা করা হয়েছে। রাজাকার সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলায় রায় ট্রাইব্যুনালের ২১ তম ও ট্রাইব্যুনাল-১এর ১০ম রায়।

#সিরাজ ও আকরামের বিরুদ্ধে যে ৬ অভিযোগ প্রমাণিত
# সিরাজ মাস্টার ও আকরামের রায় আজ
# সিরাজ মাস্টার ও আকরামের রায় পড়া চলছে


এফএইচ/এসকেডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।