সিরাজ মাস্টার ও আকরামের রায় আজ


প্রকাশিত: ০৭:২২ পিএম, ১০ আগস্ট ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাগেরহাটের দুই রাজাকার শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার এবং খান আকরাম হোসেনের রায় ঘোষণা করা হবে আজ। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করবেন।

এর আগে গত শনিবার রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করে তারিখ ঘোষণা করেন আদালত। তারও আগে গত ২৩ জুন মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে যেকোনো দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখা হয়।

এ মামলার তিন আসামির মধ্যে আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদার গত ২৮ জুলাই কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান। তাই তার মামলার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

রায় ঘোষণার দিন ধার্য করার পর প্রসিকিউটর সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে মোট সাতটি অভিযোগে মোট ৩২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী ও দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছি। আশা করি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে।

অপরদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী এম সারোয়ার বলেন, আমি তাদের আইনজীবী হিসেবে মনে করি ন্যায় বিচার পাবো। তিনি বলেন, তাদের নাম বাগেরহাটের রাজাকারের তালিকায় ছিল না। তাদের একজনের নাম ছিল কচুয়া থানার রাজাকার তালিকার ১০৬ নম্বরে। অপর দিকে রাষ্ট্রীয় খরচে সিরাজ মাস্টারের পক্ষে ট্রাইব্যুনালের নিযুক্ত আইনজীবী গাজী তামিম বলেন, আমি মনে করি সিরাজ মাস্টার খালাস পাবেন।

এ মামলায় ১৫, ১৭ ও ২৩ জুন প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও মোশফেক কবির। অন্য দিকে ১৭ ও ২১ জুন সিরাজ মাস্টারের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল হাসান এবং আসামি খান আকরাম হোসেন ও লতিফ তালুকদারের পক্ষে ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন যুক্তিতর্ক পেশ করেন।

২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে গত ২৯ মার্চ পর্যন্ত তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হেলাল উদ্দিনসহ ৩২ জন সাক্ষী প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। এরপর গত ৬, ৭ ও ২১ এপ্রিল আসামি পক্ষে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন সাফাই সাক্ষী।

২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর রাজাকার কমান্ডার ‘বাগেরহাটের কসাই’নামে খ্যাত কুখ্যাত রাজাকার সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংগঠিত সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তাদের মধ্যে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে তিনটি করে অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের শাঁখারিকাঠি বাজার, রনজিৎপুর, ডাকরা ও কান্দাপাড়া গণহত্যাসহ আট শতাধিক মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং শতাধিক বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ। ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর ২০০৯ সালে নিমাই চন্দ্র দাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এ তিন আসামিসহ ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাটের আদালতে একটি মামলাটি দায়ের করেন। বাগেরহাটের আদালত এ মামলাটি ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন। পরে এ মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী টিম প্রতিবেদন দাখিল করে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ২০ মামলায় ২২ আসামির বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ এ ৯টি ও ট্রাইব্যুনাল-২-এ ১১টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তিন রাজাকার শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ ও খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলায় রায় হবে ট্রাইব্যুনালের ২১ তম ও ট্রাইব্যুনাল-১এর ১০ম রায়।

এফএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।