খেলাধুলা

ইংল্যান্ডের না আসাটা হবে ‘কুঠারাঘাত’

গুলশান ট্র্যাজেডি আর শোলাকিয়ায় প্রাণনাশি সন্ত্রাসী- জঙ্গি হামলার পর ইংল্যান্ড কি সত্যিই আসবে? নাহ পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে করতে এক সময় গিয়ে না বলে দেবে? নাকি বাংলাদেশের নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখে শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে সত্যিই ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে পা রাখবে ইংলিশরা!বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত, সমর্থক ও অনুরাগী সবার মাথায় ঘুরে-ফিরে ওই দুটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। বোর্ড কর্তাদেরও একই অবস্থা। একবার মনে হচ্ছে আসবে। পরক্ষণে চলে আসছে নেতিবাচক ভাবনা। নাহ, মনে হয় আসবে না। আকরাম খান-জালাল ইউনুস পড়েছেন বিপাকে। তাদের মন বলছে একটা। আর মাথায় আসছে আরেক রকম ভাবনা। দুজনার কারো মন কিছুতেই নেতিবাচক চিন্তা করতে চায় না। বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরামের মনের কথা, ‘মানছি পরিস্থিতি তত অনুকূল না। এমন অবস্থায় যে কোন বিদেশি দল এক মাসের দীর্ঘ সফরে আসার আগে অনেক কিছুই ভাববে। পরিবেশ-পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণও করবে। তারপরও আমার মনে হয় ইংল্যান্ড আসবে। এখন পর্যন্ত না আসার কোন আলামত তো দেখছি না।’ একই সুরে কথা বলেছেন বিসিবি মুখপাত্র, মিডিয়া কমিটি প্রধান জালাল ইউনুসও। তারও কথা, ‘ইংলিশরা আসবে না, এমন ভাবতে চাই না আমি। সবচেয়ে বড় কথা ইসিবি এখন পর্যন্ত একটি নেতিবাচক কথাও বলেনি। উল্টো সিরিজ চলাকালীন, ইংলিশ ক্রিকেটারদের ক্রিকেট গিয়ার্স চট্টগ্রাম পাঠাতে কয়টি বড় বাস লাগবে? তার বিস্তারিত বর্ণনা চেয়ে বিসিবিতে এই কদিন আগেও মেইল পাঠিয়েছে ইসিবি।’ বোর্ডের দুই পরিচালকের ওপরের কথাবার্তা শুনে ভাববেন না, ওইটুকুই শেষ কথা। আরও কথা আছে। জালাল ইউনুসের চিন্তা একটু গভীরে। ‘কি যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছি, বলে বোঝানো কঠিন। ইসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভয় লাগছে। এই বুঝি না বলে দেয়। তাও আমরা (বিসিবি) চুপচাপ আছি।’ ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খানের মাথায়ও রাজ্যের দ্বিধা-সংশয়, চিন্তা এসে বাসা বেঁধেছে। শুধু আকরাম খান আর জালাল ইউনুসের কথা বলা কেন? বিসিবির বেশিরভাগ পরিচালকের মন এখন পেন্ডুলামের মত দুলছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত, সুহৃদ ও শুভানুধ্যায়ী সবার মনেই এখন দুই রকমের ভাবনা এসে ভর করেছে। দেশের ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থ, সত্যিকার কল্যাণ- মঙ্গল ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে মনে হচ্ছে ইংলিশরা আসলেই ভালো। সিরিজটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলে ক্রিকেটের রথ সচল থাকবে। আবার সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার কথা মনে পড়তেই পরক্ষণে দুশ্চিন্তা মাথা চাড়া দিচ্ছে- ‘আচ্ছা এমন দু’দুটি বড় প্রাণনাশী সন্ত্রাসী-জঙ্গি হামলার পর ইংল্যান্ড তো নাও আসতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, সত্যি সত্যি যদি ইংল্যান্ড না আসে, তখন কি হবে? এক কথায় সেটা হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে ‘কুঠারাঘাত।’ কেউ কেউ হয় তো বলবেন, বিশ্ব যুব ক্রিকেটে তো অস্ট্রেলিয়াও আসেনি। তাই বলে কী বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা থেমে ছিল? ইংল্যান্ড নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত না আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কি ই বা এমন ক্ষতি হবে? এমন প্রশ্নকারীদের জন্য বলা, বিশ্ব যুব (অনূর্ধ্ব-১৯) ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার না আসা, আর ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সফর বাতিল এক নয়। এর একটা সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেটা বিশ্ব যুব ক্রিকেটে অজিদের না আসায় পড়েনি। সেটা এক বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছে। বাংলাদেশের নেয়া কঠোর ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেস্টনির পরও অজি যুবাদের খেলতে না আসা বরং সমালোচিত হয়েছে; কিন্তু ইংল্যান্ডের মূল দল না এলে সেটা সমালোচিত হবার বদলে উল্টো নেতিবাচক উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে। তার নেতিবাচক প্রভাব অনেক বেশি হবে।   ইংলিশরা না আসলে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ার খেলতে আসার কথা, অজিরাও নানা টালবাহানা করবে। কে জানে ওই সফরও বাতিল হয়ে যেতে পারে। ইংল্যান্ড- অস্ট্রেলিয়ার সফর বাতিল হবার অর্থ, নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকাও সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। মোদ্দা কথা উপমহাদেশের বাইরে জিম্বাবুয়ে ছাড়া আর কাউকে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বড় শক্তিগুলো ঘরের মাঠে টেস্ট খেলে না বললেই চলে। অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক নয়, এমন অজুহাতে ভারত এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে পুর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে ডাকেনি। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও অনেকদিন খেলার সুযোগ মেলে না বাংলাদেশের। তাই সম্বল শুধু ঘরের মাটিতে খেলা। সেটা বন্ধ হওয়া মানেই বড় দলের সাথে খেলার পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া। তাতে শুধু যে তুলনামুলক শ্রেয়তর প্রতিপক্ষের সাথে খেলার সুযোগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে তা নয়, আর্থিক দিক থেকে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন বাইরে কম সিরিজ খেললেও হোম সিরিজ আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মোটামুটি ভালই আয় করে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মত দল না আসলে সে আয়ের পথও দিনকে দিন বন্ধ হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আয়ের অন্যতম বড় উৎস এখন হোম সিরিজ। হোম সিরিজ যত বেশি হবে, যত বড় দলের সঙ্গে খেলার সুযোগ মিলবে আয়ও তত বেশি হবে; কিন্তু খেলা না হলে আয় হবে কোত্থেকে? আর আয়ের ওই বড় উৎসব কমে গেলে দেশের ক্রিকেটের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে যে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, তার জোগানও কমে যাবে। যার প্রভাব গিয়ে পড়বে নানা অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের ওপর। এইচপি ট্রেনিং, একাডেমি পরিচালনা, জাতীয় দল, ‘এ’ দল ও অনুর্ধ্ব ১৯, ১৭ দলের জন্য মোটা অংকের মাসোহারায় এখন হাই প্রোফাইল বিদেশি কোচ, বোলিং কোচ, ফিল্ডিং কোচ, ট্রেনার, ফিজিও কাজ করছেন। বোর্ডের আয় কমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে সে সংখ্যাও যাবে কমে। তাতে উন্নয়ন কর্মকান্ড চরমভাবে ব্যাহত হবে। মোদ্দা কথা, বাংলাদেশের হোম সিরিজ গুলো নিয়মিত হলে কোন সমস্যা নেই। না হলেই সমস্যা ঘনিভূত হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিসিবি নিজেদের ভাল-মন্দ ভালই বোঝে। বোর্ড প্রাণপন চেষ্টা করবে যে কোন মুল্যে ইংল্যান্ডকে আনতে। দেশের পরিস্থিতি যেমন অশান্ত ও উত্তপ্তই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ চাইলে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পারে। চার স্তরের ভিভিআইপি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেকর্ড  বিদেশি দলের অংশ গ্রহণে গত বছর বিশ্ব যুব (অনুর্ধ্ব-১৯) ক্রিকেটের সফল ও নির্বিঘ্ন আয়োজন তার বড় দলিল হয়ে আছে। তখন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছিল চারিদিক। টিম হোটেল, তার আশ পাশ, বিমান বন্দর থেকে টিম হোটেলে যাবার পথ, হোটেল থেকে প্র্যাকটিসে কিংবা ম্যাচের দিন মাঠে যাবার পথ ও স্টেডিয়ামে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শতভাগ ছিল বিদেশি দলগুলো। নিরাপত্তা নিয়ে একটা কথাও ওঠেনি। ইংল্যান্ডকে আনতে নিশ্চয়ই তেমন কঠোর ও নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাই নেয়া হবে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও তত্বাবধান করা হবে। কাজেই আশার জালই বোনাই যায়- ইংলিশরা হয়তো আসবে। তাই যেন হয়। তাহলে ক্রিকেটের জয়রথ সচল থাকবে।জাগো নিউজের বিশেষ ই-ম্যাগাজিন জাগো স্পোর্টসের ৭ম সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন এই লিংকে…আইএইচএস/পিআর

Advertisement