নারীদের গৃহস্থালি কাজের মূল্য সমাজ দিচ্ছে না: শিরীন হক

রায়হান আহমেদ
রায়হান আহমেদ রায়হান আহমেদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২৪
নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা ও মানবাধিকারকর্মী শিরীন পারভিন হক

আজ ৮ মার্চ, বিশ্বব্যাপী নানান আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসে নারীর অধিকার, কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা ও মজুরি বৈষম্য, নারীর আইনগত অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা ও মানবাধিকারকর্মী শিরীন পারভিন হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক রায়হান আহমেদ।

কথার শুরুতেই শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘নারী দিবস একটি প্রতীক মাত্র। প্রতিদিন নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে হয়। নারীকে শ্রদ্ধা করতে হবে, তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে, নির্যাতন করা যাবে না। এগুলো বিশেষ এই দিনে মেসেজ হিসেবে আবারও সবার কাছে তুলে ধরা হয়।’

শ্রমজীবী নারী মাত্রই শোষিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারীকে ঘরে এবং বাইরে দুই জায়গায় কাজ করতে হয়। শ্রমজীবী পুরুষকে কিন্তু সেটি করতে হচ্ছে না। পুরুষরাও কর্মক্ষেত্রে শোষিত, তারাও বৈষম্যের শিকার। কিন্তু দিনশেষে ঘরে এসে তাদেরকে গৃহস্থালির কাজ করতে হয় না। যেটা নারীকে করতে হয় এবং যুগ যুগ ধরে করে যাচ্ছে। তাকে সংসারের চাকা ঘোরাতে হয়। সংসারের কাজ তো দুইজন (স্বামী-স্ত্রী) করছে না। যতদিন সংসারের হাল দুজন না ধরবে, ততদিন নারী অতিরিক্ত শোষণের শিকার হবে।’

এসময় সমাজের খেটে খাওয়া নারীরা বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন শিরীন পারভিন হক। তিনি বলেন, ‘শুধু চাকরি করলেই নারীরা সফল না। গৃহস্থালির গৃহিণীরাও সফল। কিন্ত তাদের কাজের স্বীকৃতি সমাজ দিচ্ছে না। তাদের এই ত্যাগ সমাজে দৃশ্যমান হচ্ছে না। তাদের গৃহস্থালির কাজের মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। আমরা ভাবি যে, নারীদের কাজই তো এটা। ঘরের কাজ তারা করবে না তো করবে কে? বলতে গেলে নারীদের গৃহকর্মের স্বীকৃতি একেবারেই নেই।’

শুধু চাকরি করলেই নারীরা সফল না। গৃহস্থালির গৃহিণীরাও সফল। কিন্ত তাদের কাজের স্বীকৃতি সমাজ দিচ্ছে না। তাদের এই ত্যাগ সমাজে দৃশ্যমান হচ্ছে না। তাদের গৃহস্থালির কাজের মূল্য দেওয়া হচ্ছে না।

আমাদের আইন ব্যবস্থা নারীবান্ধব নয় দাবি করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘নারী ও শিশু অধিকার আইন থাকলেও ততটা প্রয়োগ হচ্ছে না। কোনো ধর্ষণ কিংবা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগী নারী থানায় বিচারের জন্য যাচ্ছেন না। (বিচার প্রক্রিয়ার) প্রথমেই তারা হোঁচট খান। এখানেও তারা সহিংসতার একটা ভয় করছেন। বিচার দাবি করলেও পুরুষবেষ্টিত আদালতে তাকে আবার ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দিতে হয়। বিচার পেতে এমন অসংখ্য সমস্যার কারণে তারা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন না।’

আরও পড়ুন
ছোট উদ্যোগে সফল নারীরা, বাড়িতে তৈরি পণ্য যাচ্ছে বিদেশে
নারী সুরক্ষার প্রধান অন্তরায় ভুক্তভোগীর বিচার না চাওয়া
নারী সব পারে, যদি সে উদ্যোগী হয়

আইন কিংবা সামাজিক জীবনে বৈষম্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সমাজে এখন নারীকে পণ্যবস্তু হিসেবে তৈরি করতে সবাই ব্যস্ত। অর্থনীতি থেকে শুরু করে করপোরেট কালচার- সব জায়গায় একই চিত্র। তারা নারীকে পণ্য হিসেবে ধরছে। মনে করছে এটা একটা পণ্যবস্তু, তাকে যথেচ্ছা ব্যবহার করা যাবে।’

এবারের নারী দিবসের স্লোগানের সমালোচনা করে শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘উন্নয়নে জন্য নারীর প্রতি বিনিয়োগ করে নারীকে পণ্য বানানো যাবে না। এবারের স্লোগান আমরা পাল্টে দিয়েছি, আমাদের স্লোগান হচ্ছে- নারীর সুরক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করুন। নারীর সুরক্ষার জন্য যত পদক্ষেপ দরকার সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে।’

পোশাকশিল্পে নারীদের মজুরির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে নারীর প্রতি এমন বৈষম্য হয়ে আসছে। কম মজুরি দিয়ে ওভার টাইমের লোভ দেখিয়ে বেশি সময় খাটাচ্ছে। আবার তাদেরকে ঘর ও বাচ্চা-কাচ্চা সামলাতে হচ্ছে। এই পুরো প্রক্রিয়াটা অমানবিক।’

সমাজে এখন নারীকে পণ্যবস্তু হিসেবে তৈরি করতে সবাই ব্যস্ত। অর্থনীতি থেকে শুরু করে করপোরেট কালচার- সব জায়গায় একই চিত্র। তারা নারীকে পণ্য হিসেবে ধরছে। মনে করছে এটা একটা পণ্যবস্তু, তাকে যথেচ্ছা ব্যবহার করা যাবে।

‘দেশে এখন ক্ষমতার এত দাপট! বেশিরভাগ গার্মেন্টস মালিকরা সংসদে বসে আছেন। আমরা কোথায় যাবো? আমরা যখন প্রথম নারী দিবস পালন করি তখন সংসদ এলাকায় মিছিল করেছিলাম। আমাদের মূল স্লোগান ছিল- সংসদের কাছে আমার দাবি আছে। এখন সংসদে যারা বসে আছেন তাদের কাছে আমরা কী চাইবো?’

নারীপক্ষের এই নেত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি দেখছি ঘরে ঘরে শিশু গৃহকর্মীরা নির্যাতিত হচ্ছে। অথচ এসব বন্ধে আইনের বাস্তবায়ন নেই। তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা নিজেরা নিজেদের ভূমিকাও পালন করি না। সমাজে অনেক প্রগতিশীল মানুষ আছেন যার বাড়িতে শিশু গৃহকর্মী আছে।’

সমাজে নারীদের প্রতিষ্ঠিত ও ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘নারীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে পরিবার থেকে সহযোগিতা করা হলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে তাকে হোঁচট খেতে হয়। চাকরি থেকে শুরু করে ব্যবসা- সব খাতে নারীরা প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে আর কারও সহায়তা পায় না। তারা আর সামনে এগোতে পারে না।’

আরএএস/কেএসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।