শখের বশে নাশতা বানানো থেকে ক্যাটারিংয়ের মালিক ফৌজিয়া
চাকরির সুবাদে বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিতে হতো ফৌজিয়া নাজনীনের। সেখানে যে নাশতা দেওয়া হতো তা পছন্দ হতো না। এদিকে নিজের রান্নার হাতও ছিল চমৎকার। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একসময় শখের বশে নিজেই নাশতা তৈরি করে সরবরাহ করা শুরু করেন এসব কর্মশালায়। পাঁচ বছরে ফৌজিয়া একটি ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার অধীনে কাজ করেন অনেকে। শুধু নাশতা নয়, এখন সরবরাহ করেন দুপুর ও রাতের খাবারও। পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা।
ফৌজিয়া নাজনীন নোয়াখালী জেলা শহরের উজ্জ্বলপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের অধীনে চাকরি করেন। ২০১৯ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর জয়াগ গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টে চাকরি করতেন। এ সুবাদে বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিতেন। এসব কর্মশালার নাশতা তার পছন্দ হতো না।
পরে ফৌজিয়া ভাবলেন, কম টাকায় ভালোমানের নাশতা তৈরি করে তো সরবরাহ করা যায়। যে ভাবা, সেই কাজ। ২০১৯ সালে ইউনিয়ন পরিষদের ৩০ জন সচিবের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় খাবার সরবরাহের কাজ চেয়ে নেন ফৌজিয়া। দুদিনের কর্মশালায় দিনে দুই বেলা খাবার ও সকাল-বিকেলের নাশতা সরবরাহ করতে বলা হয় তাকে। শুরুতে কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। মানুষকে তৃপ্ত করা কঠিন বিষয়। বিশেষ করে প্রত্যেকের স্বাদের অনুভূতি আলাদা। কিন্তু ফৌজিয়া প্রথমবারই দারুণ সফল হন। খাবার খেয়ে প্রত্যেকেই খুব প্রশংসা করেন এবং তাকে উৎসাহ দেন।
এরপর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য খাবার সরবরাহের কাজ পেতে শুরু করেন ফৌজিয়া। গড়ে তোলেন ‘মিডিয়া পয়েন্ট’ নামে নিজের একটি ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান। বাসায় তৈরি করা নাশতাসহ হরেক রকমের খাবার সরবরাহ করেন তিনি। তার তৈরি সমুচা, পাকোড়া, রোল, নানা ধরনের পিঠা, রুটিসহ হরেক রকমের নাশতা এখন বিভিন্ন অফিস ও বাড়িতে যাচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠানে একজন পুরুষ ও আট নারীসহ অনেকে খণ্ডকালীন চাকরি করছেন।
আরও পড়ুন
- যেভাবে সফল নারী উদ্যোক্তা হলেন মনিরা
- নারী উদ্যোক্তা তৈরির ‘উদ্যোক্তা’ ফাহমিদা নিজাম
- দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন নারী উদ্যোক্তারা
নাশতার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো দুপুরের খাবারও সরবরাহ করেন তিনি। প্রথম প্রথম মফস্বল এলাকায় ফৌজিয়ার পক্ষে এমন উদ্যোগের কথা ভাবা রীতিমতো দুঃসাহসিক ছিল। সব বাধা পেরিয়ে খাবারের ব্যবসা অর্থাৎ ক্যাটারিং করেই তিনি এখন মাসে ৬০ হাজার টাকার মতো আয় করেন। পাশাপাশি করছেন চাকরিও। তার এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে তাকে সম্মাননা দেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।
ফৌজিয়া নাজনীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘চাকরির সূত্রে বিভিন্ন কর্মশালা বা সভায় যেতে হতো আমাকে। সেখানে অংশগ্রহণকারী হিসেবে নাশতাসহ যেসব খাবার দিতো, তার স্বাদ ও মান বেশির ভাগ সময় ভালো লাগতো না, যা একজন নারী হিসেবে আমাকে কষ্ট দিতো। পরে আমি শখের বশে নিজ উদ্যোগে খাবার তৈরি করে সরবরাহ শুরু করি। এখন প্রতিদিন অনলাইনে ও মোবাইলে প্রচুর অর্ডার আসে। ব্যবসা পরিচালনায় আমার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ও স্বামী সহযোগিতা করেন।’
ফৌজিয়া আরও বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান মিডিয়া পয়েন্ট থেকে নারকেল পুলি, পাটিসাপটা, সবজি রোল, চিকেন রোল, ডিমের পিঠা, তালের পিঠা, কলার পিঠা, দুধচিতই, ভাপা পিঠা, ডিমচিতই, ফুলঝুরি, সবজি অন্থন, চিকেন অন্থন, সবজি সমুচা, সবজি পাকোড়া, শিঙাড়া, মুগ পুলি, মুগ পাকন, সুজির পিঠা, সবজির পুলি, ডালের পুলিসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা সরবরাহ করা হয়। রয়েছে হাঁসের মাংস ও রুটি। এছাড়া দুপুর ও রাতের খাবার হিসেবে কাচ্চি ছাড়া সব ধরনের বিরিয়ানি ও চিকেন পোলাও নিয়মিত সরবরাহ করা হয়। বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের আচারও।’
সফল এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমি মাত্র ২০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এখন সব খরচ বাদ দিয়ে এ ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আসে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের কাছে খাবার সরবরাহ করে আসছি। আমার ইচ্ছা অন্য নারীরাও ঘর সামলে এ ধরনের ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ হোক। মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পৌঁছে দেওয়াই আমার মূল লক্ষ্য।’
ইকবাল হোসেন মজনু/এএসএ/জিকেএস