গ্রামীণ নারী বেশি অবহেলিত : নাজনীন সুলতানা


প্রকাশিত: ০৬:২২ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৬

স্বাধীনতার ৪০ বছর পর প্রথম কোনো নারী ডেপুটি গভর্নর পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে সোমবার জাগো নিউজের বিশেষ আয়োজনে কথা বলেছেন তিনি। এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে নিজ দফতরে কথা বলেন তিনি।

নাজনীন সুলতানা বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে সব কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতেও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আরো পাল্টাতে হবে। সমাজে গ্রামীণ নারী বেশি অবহেলিত বলেও জানান তিনি। তার মতে, নারীকে কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এ পথে আমাদের আরো অনেক দূরের পথ চলতে হবে।

বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে, প্রশ্নে নাজনীন সুলতানার জবাব, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন দুটোই হয়েছে। তবে আরো আগে আরো বেশি উন্নয়ন হতে পারত। সে প্রশ্নে যাব না।

তিনি স্মৃতিচারণ করেন সেই ১৯৮০ সালে পেশাজীবন শুরুর বিষয়টি নিয়ে। বলেন, আমরা যখন বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেই তখন বাংলাদেশ ব্যাংকে মাত্র ২ জন নারী কর্মকর্তা ছিলো। আমরা ওই সময় আরো ২ জন যোগ দেই। ফলে ৪ নারী কর্মকর্তার পরিবার হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু আজ অনেক নারী বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হিসেবে সফলতাও দেখাচ্ছে। তবে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আরো পাল্টাতে হবে।

তার প্রশ্ন, স্বাধীনতার ৪০ বছর পর কেন প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক? আরো আগেই এটি হতে পারতো। নারীর পেশাগত চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেয়া এই নারী।

তিনি বলেন, ‘সংগ্রাম করে নারীকে টিকে থাকতে হয়। নারী হিসেবে আমাকে ও আমার অন্য সহকর্মীদের দুই চরিত্রে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অফিসে পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা। আবার পুরুষ সহকর্মী ঘরে গিয়ে টিভি দেখে, সোফায় বসে সময় কাটালেও নারীকে সংসার সামলাতে হয়। সন্তান জন্মদান, লালন পালন, পড়াশোনা করানো সব দায়িত্ব গিয়ে নারীর কাঁধে পড়ে। আবার নারীকে শ্বশুর বাড়ির পক্ষ, বাবার বাড়ির পক্ষ, আত্বীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবার দিকে মেহমানি মনোভাব দেখাতে হয়। এটি কঠিন কাজ। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এখানে খুব ইতিবাচক নয়।’

হাসতে হাসতে বলেন, আমার সঙ্গে যারা পুুরুষ সহকর্মী ডেপুটি গভর্নর হিসেবে কাজ করছে, তাদের প্রতিদিনের জীবন, আর আমার প্রতিদিনের জীবনে অনেক পার্থক্য রয়েছে। মাঝে মধ্যে এসব লিখতে ইচ্ছে করে।

নারীকে স্রোতের বিপরীতে চলতে হয়, যোগ করেন নাজনীন সুলতানা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

বলেন, স্রোতের বিপরীতে কাজ করে আমাদের সফলতার পথে যেতে হয়। তবে আমরা প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে পারি। কাজ ছাড়া এগিয়ে যেতে চাই না।

আন্তর্জাতিক নারী দিসবে তার পরামর্শও সুনির্দিষ্ট। তিনি বলেন, নারীকে তার সময় সুনির্দিষ্টভাবে ও গুণগতভাবে ব্যবহার করতে হবে। তবেই অনেক দূর যেতে পারবে নারীরা।

তবে নারীর এজন্য কর্ম পরিবেশ এখনো ততটা তৈরি হয়নি বলেও মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পদে থাকা এই নারী। বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও কর্ম পরিবেশ অন্য খাতের থেকে বেশি হলেও সব খাতে হয়নি। এটি নিশ্চিত করতে হবে। আর গ্রামীণ নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে।

এসএ/এসএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।