সম অধিকার ও মর্যাদার আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ


প্রকাশিত: ০৬:০২ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৬

নারী নয় কিংবা তুলনা পুরুষের সঙ্গেও নয়। মানুষ হিসেবেই মূল্যায়ন করতে হবে নারীদের। কারও মা, কারও বোন কারও বা সহধর্মিনী নারী। সুতরাং নারী তুলনায় পুরুষের চেয়ে কম কিসে। আজ ৮ মার্চ। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ‘অধিকার, মর্যাদায় নারী পুরুষ সমানে সমান’ এই শ্লোগানে পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

নারীর প্রতি সব রকম বৈষম্য ও অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটিয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব গড়ার কাজে পুরুষের ন্যায় সমান অধিকার ও মর্যাদার অধিকারী নারী। এই প্রত্যয় নিয়ে নারীর এগিয়ে চলা হোক সমান বেগবান।

এ দিবসটি এক শতাব্দী-প্রাচীন আন্তর্জাতিক দিবস। এই দিনটির শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন।

আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।

১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

এর পর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে।

এর দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এখন আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হয় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই।


বাংলাদেশেও প্রতিবছর দিবসটি নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়। নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংবাদমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশিত হয়।

উন্নত বিশ্ব ও বাংলাদেশের নারীর অবস্থার মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। দেশীয় বিবেচনায় নারীদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তবে নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য বা তুলনা করা হয় তবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে নারীরা। দীর্ঘদিনের মজ্জাগত বৈষম্যই নারীদের পিছিয়ে থাকার মূল কারণ বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।

নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনসহ নানা রকমের সহিংসতা দমনে রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যর্থতার পাল্লা যেন দিনে দিনে আরও ভারী হচ্ছে। পথে-ঘাটে ও কর্মক্ষেত্রে তো বটেই; ঘরের ভেতরেও নারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতা দূর হচ্ছে না।

জাতিসংঘ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ পুলিশ মিশনে খুব ভালো করছে বলে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা প্রশংসনীয় অবস্থানে রয়েছে।

সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।

তবে দেশেই অধিকারের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সমতায় আসেনি নারীদের অবস্থান। চাকরির ক্ষেত্রে নারী সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত; নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের মধ্যে নারীরা পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পায়।


স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের চেষ্টা খুব ফলপ্রসূ হচ্ছে না তাদের পুরুষ সহকর্মীদের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। জাতীয় রাজনীতিতেও নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়েনি।

নারীর সম-অধিকারের প্রশ্নটি কেবল নারীসমাজে অগ্রগতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বস্তুত, এতে রয়েছে নারী-পুরুষের মিলিত বিশ্বে সর্বজনীন প্রগতির প্রতিশ্রুতি। আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ সমতা অর্জনের পথে পশ্চাৎমুখি দৃষ্টিভঙ্গি এক বিরাট বাধা। শিক্ষায় নারীর আরও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হবে। সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মহিলা পরিষদ, টিআইবি, বিভিন্ন এনজিওসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে একাধিক নারী সংগঠন মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

জেইউ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।