নারীদের প্রণোদনাপ্রাপ্তি সহজ করতে উদ্যোগ নেয়া জরুরি

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৩:১২ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২১

ঢাকার মেয়ে নাসিমা আক্তার নিশা নারীদের সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা শুনতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলেন ২০১৭ সালে।। যার নাম ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)’। গ্রুপটি দ্রুতই বিভিন্ন বয়সী নারীদের যোগাযোগের সেরা প্লাটফর্মে পরিণত হয়। যার বেশিরভাগই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এই গ্রুপ ই-কমার্স ও এফ-কমার্সে নাম লেখানো নারীদের পণ্যের প্রচারণা চালানোর দারুণ মাধ্যম হয়ে ওঠে।

গ্রুপটিতে সরাসরি পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও প্রতি মাসে এর মাধ্যমে এক থেকে তিন কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করছেন নারী উদ্যোক্তারা। এখানে তাদের বিভিন্ন মেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। চলতি মাসে জাপান, মালয়েশিয়া ও ইংল্যান্ডে খোলা হবে উইয়ের শাখা। সেখানে বিক্রি হবে উই গ্রুপের উদ্যোক্তাদের পণ্য।

এসব বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল হক মিঠু।

জাগো নিউজ: এমন একটা প্লাটফর্ম খোলার চিন্তা কীভাবে মাথায় এল?

নাসিমা আক্তার নিশা: ব্যক্তিজীবনে নারীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করতাম। আমার মনে হতো নারীদের একটা প্লাটফর্ম থাকা উচিত, যেখানে নারীরা নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারবে। প্রবলেম শেয়ার থেকে কোনো না কোনো সমাধান বের হবে। এমন চিন্তা থেকে ২০১৭ সালে গ্রুপটি খোলা। আমার ইচ্ছা ছিল এমন একটা প্লাটফর্ম হবে, যেখানে নারীরা বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যগুলো নিয়ে যেতে পারবে। এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম। ২০২০ সালে এটার গ্রোথ অনেক বাড়ল। ২০২১ সালে এসে অলরেডি আমরা এক্সপোর্ট শুরু করেছি।

জাগো নিউজ: নারীরা আগে গৃহিণী বা চাকরি করতেন। এখন এসবের পাশাপাশি নিজে কিছু করছেন। ক্ষুদ্র উদ্যোগ থেকে শুরু করে অনেকেই ব্যবসা বড় করছেন। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

jagonews24

নাসিমা আক্তার নিশা: এই জিনিসটা হওয়ার দরকার ছিল। ঘরের কাজ বা চাকরির পাশাপাশি তারা কিছু করার চেষ্টা করছে। নারীদের একটা আলাদা সত্তা থাকা দরকার। করোনার সময় এটার অনেক গ্রোথ হয়েছে। আমরা দেখেছি, গৃহিণী ছিল, কিংবা যাদের বিয়ে হয়েছে এমন নারী, যারা উপার্জন করবেন বা কিছু করবেন; এমন কথা কখনো চিন্তাও করেননি। সংসারের হাল ধরার জন্য তারা কিছু করা শুরু করলেন। আবার অনেকেই তিন-চারজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তবে অর্থনীতিতে তাদের কন্ট্রিবিউশন মাত্র ২৪ শতাংশ। এটা অর্ধেক হওয়া উচিত। এই নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা বিভিন্ন মোটিভেশনের ব্যবস্থা করছি, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।

জাগো নিউজ: এফ-কমার্সে (ফেসবুকভিত্তিক) নারীরা কী ধরনের সমস্যায় পড়ছেন?

নাসিমা আক্তার নিশা: নারীরা যখন ফেসবুকে একটা পেজ খোলেন, তারা সাত-পাঁচ না ভেবেই খুলে বসেন। তারা দেখেন না, এই নামে আরও ১০টা পেজ আছে কিনা। পরে যখন পেজটা পপুলার হয় তখন তারা সমস্যায় পড়েন। এ জন্য আমি বলব, যখন পেজ খুলবেন দেখে নেবেন সে নামে পেজ আছে কিনা। কিংবা পেজের ইউনিকনেস নিশ্চিত করে পেজ খুলতে হবে।

এছাড়া ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। অনেকে অনেক কাপড় বা পণ্য নিয়ে আসেন। অনেক সময় সেগুলো বিক্রি না হলে তার পুঁজিটা আটকে যায়। তারা হতাশায় ভোগেন। এজন্য আমি বলি অল্প পণ্য নিয়ে শুরু করেন। সেগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করেন। একটা বিজনেস প্ল্যান নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা কম।

jagonews24

জাগো নিউজ: নারী উদ্যোক্তাদের কি কোনো প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করে উই?

নাসিমা আক্তার নিশা: প্রতি মাসেই আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেই। এন্ট্রাপ্রেনিউর মাস্টার ক্লাসের নামে একটা প্রশিক্ষণ দেই। সেখানে একজন নারী কীভাবে উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে তার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এটাতে নারীদের রেসপন্স খুব ভালো।

জাগো নিউজ: নতুন বাজেটে আপনাদের চাওয়া কী?

নাসিমা আক্তার নিশা: নারীরা যেন প্রণোদনা প্যাকেজটা সহজেই পেতে পারে, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া জরুরি। ট্রেড লাইসেন্স করার প্রক্রিয়াটা আরও সহজ শর্তে করার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। কারণ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয় না, নারীরা প্রণোদনা পায় না। ট্রেড লাইসেন্সের খরচটা কমানো, ঠিকানাটা কমর্শিয়াল হতেই হবে—এ বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নিলে নারী উদ্যোক্তারা লাভবান হবে।

জাগো নিউজ: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

নাসিমা আক্তার নিশা: আমরা দেশের বাইরে কয়েকটি জায়গায় উইয়ের ব্রাঞ্চ খুলব। অলরেডি কাজ শুরু করেছি। সেসব দেশে উইয়ের উদ্যোক্তাদের প্রোডাক্টগুলো রফতানি করব। জাপানে ৮-৯ তারিখের দিকে আমাদের ব্রাঞ্চ খুলব। এই মাসের শেষে মালয়েশিয়া ও ইংল্যান্ডে আরও দুটি ব্রাঞ্চ খোলা হবে।

এসএম/জেডএইচ/এসএইচএস/এইচএ/জিকেএস

নারীরা যেন প্রণোদনা প্যাকেজটা সহজেই পেতে পারেন, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া জরুরি। ট্রেড লাইসেন্স করার প্রক্রিয়াটা আরও সহজ শর্তে করার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। কারণ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয় না, নারীরা প্রণোদনা পায় না

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।