কর্ণফুলীর পাড়ে নতুন গন্তব্য কল্পলোক
আরিফুল ইসলাম তামিম
কর্ণফুলীর স্বচ্ছ জলরাশিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সাম্পান। সঙ্গে চলছে বিশাল আকৃতির সব জাহাজ। অন্যদিকে স্থানীয় কিছু জেলে ঝাঁকি জালে মাছ ধরছে। নদীপাড়ের মানুষজনের ব্যস্ত জীবনযাপনের মধ্যে দিয়েই বহমান চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কর্ণফুলী নদী।
একরাশ স্নিগ্ধতাঘেরা এমন মাধুর্য লুকিয়ে আছে চট্টগ্রামের কল্পলোক আবাসিকের পেছনের অংশে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে। সৌন্দর্যখচিত স্থানটি অনেকের কাছেই অজানা। এক সময় বিশাল চর ছিল এই অংশে। বর্তমানে চরের মধ্য দিয়ে নির্মিত হচ্ছে সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ ও চার লেনের সড়ক। এই সড়কের দুই প্রান্তে থাকবে দুই সেতুর ( কালুরঘাট ও শাহ আমানত) সংযোগ।
চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত রিং রোড হচ্ছে, যা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্পটির পুরোপুরি কাজ শেষ হওয়ার আগেই নদীর তীরে এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে বেড়িবাঁধ, ব্লক নির্মাণের ফলে কর্ণফুলীর সব সৌন্দর্য এখান থেকেই উপভোগ করতে পারছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
বেড়িবাঁধ দেখতে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের মতো হওয়ায় অনেক পর্যটকের কাছে এটি কল্পলোক আবাসিক বিচ নামেও পরিচিত। চট্টগ্রাম মহানগরের যে কোনো স্থান থেকে রিজার্ভ সিএনজি কিংবা লোকাল গাড়ি চেপে যাওয়া যায় নান্দনিক এই স্থানে।
লোকাল গাড়িতে যেতে হলে সর্বপ্রথম কল্পলোক মোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে লোকাল টমটম কিংবা ৩০-৪০ টাকায় অটোরিকশা যোগে চার রাস্তার মাথা বা নদীর পাড় বললেই নামিয়ে দিবে। চাক্তাই-কালুরঘাট সংযোগের এই রিং রোডে উঠলেই দেখা মিলবে অপার সৌন্দর্যের কর্ণফুলী।
কর্ণফুলীর স্নিগ্ধতা,গতিময়তা ও মাধুর্যের সবটাই দেখা যায় এখান থেকে। নদীর পারে নির্মিত বেড়িবাঁধ ও ব্লকগুলো এখানকার সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করে তুলেছে। দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্থানটি। বিকেল হলেই নদীর পাড়ে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও প্রিয়জনকে নিয়ে সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।
কর্ণফুলীর অপরূপ দৃশ্য উপভোগের পাশাপাশি নদীতে নৌকা ভ্রমণেরও সুযোগ আছে এখানে। জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়ায় কর্ণফুলী ব্রিজের সামনে পর্যন্ত গিয়ে আবার নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে আসে নৌকাগুলো। তবে কেউ চাইলে রিজার্ভ নৌকা নিয়েও ঘুরে আসতে পারেন।
কল্পলোকের নতুন এই পর্যটন স্পটে নৌকা ভ্রমণ না করলে আপনি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সুন্দর কিছু মুহূর্ত মিস করবেন। কর্ণফুলীর স্বচ্ছ জলরাশি ঠেলে এগিয়ে যায় নৌকা, মাঝে মধ্যে দু-একটি গাঙ্গেয় ডলফিনের ডিগবাজি দেখে আপনি চমকে উঠতে পারেন এ যাত্রায়।
তাছাড়া নদী ঘিরে বিভিন্ন পাখির ঝাঁক, সাম্পান নিয়ে ছুটে চলা মাঝি-মাল্লাদের গানের সুর, নদীর পানির কলতান, নদীর চারপাশে সবুজ গাছ, জেলেদের জনজীবন, চারপাশের প্রকৃতি যেন রূপকথার মতো রঙে আঁকা কোনো ছবি, নদীর এমন অবারিত বয়ে চলার দৃশ্য আপনাকে মাতিয়ে রাখবে কিছুক্ষণ।
কর্ণফুলীর বুকে সূর্যাস্তের সময় রক্তিম আভা দেখলে মনে হবে যেন রঙে আঁকা ক্যানভাসের চিত্র। প্রকৃতিপ্রেমীদের একবার হলেও এখান থেকে সূর্যাস্ত উপভোগ করা উচিত। চাক্তাই-কালুরঘাট এই রিং রোডের কাজ শেষ না হওয়ায় এখনো লাগানো হয়নি সড়কবাতি।
ফলে সন্ধ্যা নামতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশে অনিরাপদ হয়ে ওঠে পর্যটকরা। তাই এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই এখান থেকে ফিরে যাওয়া নিরাপদ। বর্তমানে সপ্তাহের শুক্রবার সবচেয়ে বেশি পর্যটকের উপস্থিতি থাকে এখানে। আপনি একজন নির্জন প্রকৃতিপ্রেমী হলে সপ্তাহের অন্য যে কোনোদিন বিকেলে এখানে ভ্রমণ করাই শ্রেয়।
ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়ায় নদীর আশপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী বিভিন্ন দোকান-পাট, ফুড কার্ট। এখানে ঘুরতে আসা অধিকাংশ পর্যটক এসব দোকানপাটের খাবার খেয়ে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছে।
ফলে দূষিত হচ্ছে নদীর পাড়, বিভিন্ন আবর্জনা বাতাসের সঙ্গে উড়ে আবার নদীতেও পড়ছে, ফলে নদী দূষণ হচ্ছে। ফলে এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের এক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে।
অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানটি যেভাবে পর্যটকদের মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে, কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নিলে এটিকে পরিপাটি পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
জেএমএস/জিকেএস