সম্ভাবনা অপার, পৃষ্ঠপোষকতায় পিছিয়ে নওগাঁর পর্যটন
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের লীলাভূমি উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। ইউনেসকো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এ জেলারই বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত। এছাড়া এ জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পতীসর কাছারি বাড়ি, আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান, কুসুম্বা মসজিদ, দিবর দিঘিসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে খুব বেশি এগোতে পারছে না।
গবেষকদের ভাষ্যমতে, ইতিহাস ও সংস্কৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের ঘুরে বেড়ানোর তালিকায় শীর্ষে থাকে নওগাঁ জেলার নাম। কয়েকশ বছরের পুরোনো স্থাপত্যশৈলী থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ জলাভূমির শান্ত জল এ জনপদের প্রাচীন যুগের গল্প বলে। এ যেন ইতিহাসের এক জীবন্ত ক্যানভাস। এ অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকদের যাতায়াত, রাতযাপন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে নওগাঁকেন্দ্রিক পর্যটন আরও বিকশিত হবে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার
বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রাচীনতম বৌদ্ধবিহার ‘পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার’ নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। এর প্রাচীন নাম ‘সোমপুর বিহার’। পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল অষ্টম শতাব্দীর শেষ দিকে অথবা নবম শতাব্দীর শুরুর দিকে ৭০ দশমিক ৩১ একর জমির ওপর এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। এরপর দীর্ঘদিন তা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। ১৮৭৯ সালে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম খনন করে বর্গাকার ইমারত আবিষ্কার করেন। এরপর আরও বেশ কয়েকজন প্রত্নতত্ত্ববিদ খনন কাজ চালান।
‘পাহাড়পুরের আধ্যাত্মিক পরিবেশ আর স্থাপত্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। সেই দিক বিবেচনায় দর্শনার্থীদের রাতযাপনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সেখানে গড়ে ওঠেনি। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বিহারের মাঝখানে। এসব সংকট নিরসনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও ট্যুরিজম বোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।’- প্রভাষক বাকী বিল্লাহ
ইউনেসকোর মতে, দক্ষিণ হিমালয়ের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বৌদ্ধবিহার ‘পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার’। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক কারণে মহাবিহারটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও আজও এই অপূর্ব বিহারটি এশিয়ার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বৌদ্ধবিহার বলে সগৌরবে দণ্ডায়মান। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সেখানে একটি জাদুঘর, একটি রেস্ট হাউজ ও কয়েকটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করেছে। প্রতি বছর দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক বিহারটি দেখতে আসেন।
পর্যটনপ্রেমী নওগাঁ সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘প্রাচীন বৌদ্ধ মঠের ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় জটিল পোড়ামাটির ফলক দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ফলকগুলো সামাজিক জীবন থেকে শুরু করে আদিম সভ্যতার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। পাহাড়পুরের সেই আধ্যাত্মিক পরিবেশ আর স্থাপত্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। সেই দিক বিবেচনায় দর্শনার্থীদের রাতযাপনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সেখানে গড়ে ওঠেনি। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বিহারের মাঝখানে। এসব সংকট নিরসনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও ট্যুরিজম বোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।’
- আরও পড়ুন
- পাহাড়পুর ভ্রমণে কী দেখবেন, কীভাবে যাবেন?
- যেভাবে এলো নওগাঁর বিখ্যাত ‘প্যারা সন্দেশ’
- ঘরবন্দি মানুষের মনে প্রশান্তির ছোঁয়া দিচ্ছে হাঁসাইগাড়ী বিল
- গান্ধী আশ্রম হতে পারে অপার সম্ভাবনার পর্যটন কেন্দ্র
পতিসর কাছারি বাড়ি
কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাংলাদেশে শিলাইদহ, শাহাজাদপুর ও কালিগ্রাম পরগনাসহ মোট তিনটি জমিদারি ছিল। নাগর নদীর তীরে অবস্থিত কালিগ্রাম স্টেটের কাছারি বাড়ি ছিল পতিসরে। ভাগবাটোয়ারা সূত্রে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগে পড়ে কালিগ্রাম পরগনা। জমিদারি পেয়ে ১৮৯১ সালে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার নিঝুম-নিস্তব্ধ-নিভৃত গ্রাম পতিসরে প্রথম আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত নিয়মিত এই কুঠি বাড়িতে আসতেন তিনি। এখানে বসেই রচনা করেন অনেক কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ। তার সাহিত্যের বড় একটি অংশ জুড়ে আছে এখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি। কাছারি বাড়িটির পাশেই রয়েছে দেবেন্দ্র মঞ্চ ও রবীন্দ্র সরোবর। যেখানে প্রতি বছরের ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়। এছাড়া প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে।
‘কবিগুরুর রেখে যাওয়া কাছারি বাড়ির স্থাপত্যশৈলী, পারিবারিক ছবি ও ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী দেখতে বছরজুড়ে দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। কবি ভক্তরা আশপাশের নান্দনিক পরিবেশ ও তার নিজ হাতে লেখা কবিতা এবং গল্প দেখে মুগ্ধ হন। এখানে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একেবারে নেই বললেই চলে।’ পতিসরের রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রাহক এম মতিউর রহমান মামুন
পতিসরের রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রাহক এম মতিউর রহমান মামুন বলেন, কবিগুরুর রেখে যাওয়া কাছারি বাড়ির স্থাপত্যশৈলী, পারিবারিক ছবি ও ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী দেখতে বছরজুড়ে দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। কবি ভক্তরা আশপাশের নান্দনিক পরিবেশ ও তার নিজ হাতে লেখা কবিতা এবং গল্প দেখে মুগ্ধ হন। এখানে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একেবারে নেই বললেই চলে। রাতযাপনসহ ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দূর থেকে আসা পর্যটকের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। এই সংকট কাটাতে ট্যুরিজম বোর্ড ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বহুমুখী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।
‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলতাদিঘিতে আসা পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ উন্নয়নের গল্প সামনে এনে নির্বিচারে শালবনের সহস্রাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এজাতীয় উদ্যান দর্শকপ্রিয়তা হারিয়েছে। ছায়াঘেরা সবুজ এলাকা মরুভূমির আকার ধারণ করেছে।’- ধামইরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম
আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত আলতাদিঘি। পাড়সহ জেলার বৃহত্তর এই দিঘির আয়তন ৫৫ দশমিক ৪৬ একর। দিঘির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ শূন্য দশমিক ২০ কিলোমিটার। দিঘির পাড়ের আয়তন ১২ দশমিক ৬৪ একর। ২০১১ সালে আলতাদিঘিসহ এর চারদিকে বিস্তৃত ৬৫২ দশমিক ৩৭ একর জায়গাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। প্রতিনিয়ত হাজারো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যানে।
- আরও পড়ুন
- নওগাঁয় প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান
- নওগাঁয় দর্শনীয় স্থানে উপচেপড়া ভিড়
- নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী ঘুঘুডাঙার তালতলি
ধামইরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলতাদিঘিতে আসা পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ উন্নয়নের গল্প সামনে এনে নির্বিচারে শালবনের সহস্রাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এজাতীয় উদ্যান দর্শকপ্রিয়তা হারিয়েছে। ছায়াঘেরা সবুজ এলাকা মরুভূমির আকার ধারণ করেছে। এই সংকট কাটিয়ে পর্যটকদের কাছে আবারো আলতাদিঘিকে নতুনরূপে তুলে ধরতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে পর্যটকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বন বিভাগের আন্তরিকতা প্রয়োজন।
কুসুম্বা মসজিদ
নওগাঁর ঐতিহাসিক ঐশ্বর্যের আরেকটি প্রমাণ হলো সুলতানি আমলে নির্মিত কুসুম্বা মসজিদ। পাথরের মসজিদটি ইন্দো-আরবিক স্থাপত্যশৈলীর একটি চমৎকার উদাহরণ। জটিলভাবে খোদাই করা মিহরাব আর গম্বুজযুক্ত ছাদ সেই সময়ের কারিগরদের বিশেষজ্ঞ দক্ষতার প্রমাণ।
‘মসজিদের ভেতরের বেশ কিছু জায়গায় ফাটল ধরেছে। এসব সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে অতিসত্বর সংস্কার করা না গেলে ঐতিহাসিক এই মসজিদটি দর্শকপ্রিয়তা হারাবে।’- কুসুম্বা মসজিদের মুয়াজ্জিন ইসরাফিল আলম
ইতিহাসবিদদের বর্ণনায় ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে আফগানদের শুর বংশের শেষ দিক শাসক গিয়াস উদ্দীন বাহাদুর শাহর শাসনামলে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৪৬৫ বছরের এই পুরাকীর্তির মূল গাঁথুনি ইটের তৈরি হলেও সম্পূর্ণ দেওয়াল কালো পাথরে মোড়ানো। দেওয়াল, মিনার ও গম্বুজে নকশা খোদাই করা। মসজিদের দেয়ালজুড়ে থাকা প্রাচীন টেরাকোটার দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য, মেহরাবের বিচিত্র ফুল, লতাপাতা, ঝুলন্ত শিকল ও মনোরম শিল্পকর্ম প্রতিনিয়ত আকৃষ্ট করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। ঐতিহাসিক এই মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে ৫৮ ফুট লম্বা। চওড়া ৫২ ফুট। ছাদের ওপর রয়েছে গোলাকৃতির মোট ছয়টি গম্বুজ।
কুসুম্বা মসজিদের মুয়াজ্জিন ইসরাফিল আলম বলেন, ‘সুলতানি আমলের ঐতিহাসিক এ নিদর্শন দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে যারা আসেন তাদের থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের রেস্ট হাউজে স্বল্প খরচে পর্যটকরা থাকতে পারছেন। দর্শনার্থীদের আগমন ঘিরে এখানে অনেক দোকানপাট গড়ে উঠেছে। অনেক উন্নয়নকাজ চলমান। তবে মসজিদের ভেতরের বেশ কিছু জায়গায় ফাটল ধরেছে। এসব সংস্কার করা জরুরি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে অতিসত্বর সংস্কার করা না গেলে ঐতিহাসিক এই মসজিদটি দর্শকপ্রিয়তা হারাবে।
‘দিবর দিঘিকে কেন্দ্র করে অনেক দোকানপাট গড়ে উঠলেও পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। রাতযাপনের সুব্যবস্থা নেই। প্রায় সময়ই এখানে নানান দুর্ঘটনা ঘটে। মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এই এলাকা। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে জেলা প্রশাসনের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’- স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম
দিবর দিঘি
নওগাঁর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে পত্নীতলা উপজেলায় প্রায় ২০ একর জমির ওপর অবস্থিত ঐতিহাসিক দিবর দিঘি। ইতিহাসবিদদের তথ্যমতে, ঐতিহাসিক এই দিঘি পাল সাম্রাজ্যের সময় উদ্ঘাটন করা হয়েছিল। সংস্কৃত শব্দ ‘কৈবর্ত’ থেকে ‘দিবর’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। ‘দিবর’ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের মতে, ‘দিবর’ নামটি পাল রাজা দেবপালের অপভ্রংশ। এই দিঘির মাঝখানে অবস্থিত ‘দিব্যক জয়স্তম্ভ’ বহুকাল ধরে বাঙালি আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে আসছে। গোলাকৃতির আট কোণ বিশিষ্ট গ্রানাইট পাথরের তৈরি এই জয়স্তম্ভের উচ্চতা ৩১ ফুট ৮ ইঞ্চি। যার ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি পানির নিচে এবং ২৫ ফুট ৫ ইঞ্চি পানির ওপরে দৃশ্যমান থাকে। দিব্যক জয়স্তম্ভের ওপরের অংশে রয়েছে খাঁজকাটা নানা রকমের কারুকার্য। প্রতি বছর দূর-দূরান্ত থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটক, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক মানুষ ঐতিহাসিক দিবর দিঘি ভ্রমণ করতে আসেন। দিঘির চারপাশের সুন্দর মনোরম পরিবেশ মুগ্ধ করে তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, দিবর দিঘির মাঝখানে দণ্ডায়মান ‘দিব্যক জয়স্তম্ভ’ দীর্ঘ বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়। বর্তমানে নওগাঁ জেলা প্রশাসন এটি দেখভাল করছে এবং তাদের থেকে ইজারা নিয়ে স্থানীয়রা এখানে মাছ চাষ করেন। এই দিঘি কেন্দ্র করে অনেক দোকানপাট গড়ে উঠলেও পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। রাতযাপনের সুব্যবস্থা নেই। প্রায় সময়ই এখানে নানান দুর্ঘটনা ঘটে। মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এই এলাকা। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে জেলা প্রশাসনের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
সম্ভাবনার নতুন দুয়ার ও সংকটে থাকা দর্শনীয় স্থান
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চক চান্দিরার ৩৬৫ পুকুর, নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা ও সাপাহার উপজেলার জবই বিল পর্যটনখাতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও ভাইরালের পর আট বছরের ব্যবধানে হঠাৎ এসব স্থান জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছে। যার প্রভাবে এসব এলাকায় পিছিয়ে থাকা মানুষদের জীবনযাত্রায় উন্নতির হাওয়া লেগেছে বড়োসড়ো করেই।
বিপরীতে, এক দশক আগেও জেলার বদলগাছী উপজেলার হলুদ বিহার, ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল বিহার ও ভীমের পান্টি, সদর উপজেলার দুবলহাটি রাজবাড়ি ও বলিহার রাজবাড়ি এবং রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর রাজবাড়িকেন্দ্রিক পর্যটনের অপার সম্ভাবনা ছিল। প্রায়ই এসব স্থানে ভিড় জমাতেন দর্শনার্থীরা। তবে সময়ের ব্যবধানে এসব এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে বসেছে। দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্প হাতে না নেওয়ায় দর্শকপ্রিয়তা হারিয়েছে এসব স্থান।
- আরও পড়ুন
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আলতাদিঘি
- এক গ্রামে ৩৬৫ পুকুর, আসছে দর্শনার্থী
- নিরাপত্তা শঙ্কায় কমেছে পর্যটক, দুশ্চিন্তায় মাঝিরা
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল জাগো নিউজকে বলেন, জেলার বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থানই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হওয়ায় সরাসরি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এসব নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সেখানে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। তবে ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর বাইরে যেসব রয়েছে সেখানে পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। জবই বিলে ইতোমধ্যে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলো কী অবস্থায় সেটি খোঁজখবর নিয়ে পর্যায়ক্রমে কাজ করা হবে।
তবে জেলা প্রশাসকের দাবি উড়িয়ে দিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পাহাড়পুরের কাস্টোডিয়ান মুহাম্মদ ফজলুল করিম জাগো নিউজ বলেন, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ছাড়াও নওগাঁ জেলায় অন্তত ১০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কুসুম্বা মসজিদ ছাড়া বাকি সবগুলোই ধ্বংসস্তূপে পরিণত। পর্যটন শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে এসব এলাকায় জেলা প্রশাসন চাইলেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়ন কাজ করতে পারে। তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। যার ফলে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার আজ সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে।
এএইচআরএন/এমএমএআর/জিকেএস