ইতিহাস-ঐতিহ্য আর দর্শনীয় স্থানে ঠাসা ময়মনসিংহ
‘হাওর-জঙ্গল-মহিষের শিং, এই তিনে ময়মনসিং’। তৎকালীন ভারতবর্ষের বৃহত্তম জেলা ময়মনসিংহকে এ প্রবাদেই পরিচয় করানো হতো। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ঠাসা এ জেলাটি ১৩টি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত। এখানে রয়েছে দেখার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান। বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা ময়মনসিংহকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।
জেলাটি ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে- শশীলজ, আলেকজান্ডার ক্যাসেল, গৌরীপুর লজ, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, জয়নুল আবেদিন উদ্যান, মিনি চিড়িয়াখানা, ময়মনসিংহ জাদুঘর, সার্কিট হাউজ, এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়ামে বিরল বাদ্যযন্ত্রের সংগ্রহশালা, স্বাধীনতা স্তম্ভ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে মাছের জাদুঘর, মুক্তাগাছার জমিদারবাড়ি, ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি জাদুঘর, চেচুয়াবিল বা শাপলাবিল, গৌরীপুরে রাজবাড়ি, রামগোপালপুর জমিদারবাড়ি, ঈশ্বরগঞ্জে জমিদারবাড়ি, ফুলবাড়িয়ার অর্কিড বাগান, রাবারবাগান, ধোবাউড়ার চিনামাটির পাহাড়, হালুয়াঘাটের গাবরাখালী পার্ক ও গফরগাঁওয়ে ভাষাসৈনিক আবদুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘরসহ ভালুকার কুমিরের খামার।
শশীলজ
ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে লাল ইটের একটি রাজবাড়ি। প্রতিষ্ঠাতা জমিদার সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এই প্রাসাদের নাম রাখা হয় শশীলজ। ৯ একর জমির ওপর সবুজের সমারোহে নান্দনিক এক দর্শনীয় স্থান এটি। রাজবাড়ীতে প্রবেশের শুরুতেই দেখা মিলবে বাগান। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ১৬টি গম্বুজের দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদটির প্রধান ফটক। ফটক থেকেই দুদিকে রাস্তা মিলেছে প্রাসাদের মূল ভবন।
এছাড়া প্রাসাদের মার্বেল পাথর, কারুকার্য, শৈল্পিক সব জিনিসপত্র চোখে পড়বে। প্রাসাদের মূল ভবনের পেছনে রয়েছে বিশাল পুকুর। মার্বেল পাথরের পুকুরঘাটে রয়েছে নারীদের বিশাল স্নানঘর ও সুড়ঙ্গ। ধারণা করা হয়, এই সুড়ঙ্গপথে মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে শশীলজ জাদুঘর নামে পরিচিত। এখানে মুক্তাগাছা, গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জের জমিদার পরিবারের ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাব, পেইন্টিং, তৈজসপত্র, কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি, প্লাস্টার অব প্যারিস মূর্তি, হাতি, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণীর শিং স্থান পেয়েছে।
শশীলজের সৌন্দর্য উপভোগের সময় কথা হয় ফারজানা খাতুনের সঙ্গে। তিনি কিশোরগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফারজানা খাতুন বলেন, ‘আমি একজন সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। পাশাপাশি কবিতা লেখালেখি করতে ভালো লাগে। ময়মনসিংহ নগরীর কালিঝুলি এলাকায় আমার বোনের বাড়ি। যখন বোনের বাড়ি বেড়াতে আসি, তখন সবাই একসঙ্গে দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার চেষ্টা করি। এতে সঙ্গে থাকা ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা আনন্দ উপভোগসহ ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।’
- আরও পড়ুন
- একদিনের ময়মনসিংহ ভ্রমণে যা যা দেখবেন
- ময়মনসিংহ ভ্রমণে কী কী দেখবেন?
- ময়মনসিংহে ভিনদেশি লিলিয়াম ফুল চাষ
শশীলজ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্ননিদর্শন উল্লেখ করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ময়মনসিংহের কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ঐতিহাসিক এই স্থাপনা দেখতে আসেন। ইতিহাসের নিদর্শন নিজ চোখে দেখে ঋদ্ধ ইতিহাসের ঐতিহ্য তারা গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। সেই সঙ্গে আনন্দও উপভোগ করেন সবাই। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দিতে প্রাচীন স্থাপনাগুলোতে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন তাদের অভিভাবকদের। তা না হলে, ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না নতুন প্রজন্ম।’
আলেকজান্ডার ক্যাসেল
আলেকজান্ডার ক্যাসেল নান্দনিকতা ও আভিজাত্যে পরিপূর্ণ। এটি নগরীর জজ আদালতের পেছনে অবস্থিত। লোহার ব্যবহারের কারণে এটি স্থানীয়ভাবে লোহার কুঠি নামেও পরিচিত। ১৮৮৯ সালে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের সম্পত্তি রক্ষার্থে চীন থেকে আনা কারিগর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। প্রধান ফটকের সামনে মার্বেল পাথরের দুটো মূর্তি রয়েছে। ভবনটি বর্তমানে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
গৌরীপুর লজ
নগরীর জুবিলীঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক একটি জমিদারবাড়ির নাম গৌরীপুর লজ। দ্বিতল এই স্থাপনাটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে লোহা, টিন ও কাঠ। চীন থেকে মিস্ত্রি এনে ১৮২৮ সালে মহারাজা শশীকান্তের শাসনামলে গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর দৃষ্টিনন্দন এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়িটি দেখলে যে কারও কল্পনায় ভাসবে জমিদারের আভিজাত্যের ছবি। বর্তমানে সোনালী ব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই বাড়ি।
জয়নুল সংগ্রহশালা
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালাটি ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়েই অবস্থিত। ময়মনসিংহ শহরের জিরো পয়েন্টের কাছেই জয়নুল সংগ্রহশালা। ১৯৭৫ সালে সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৩টি চিত্রকর্ম নিয়ে সাজানো এ সংগ্রহশালা। এখানে চিত্রকর্মের পাশাপাশি শিল্পাচার্যের ব্যবহার্য জিনিসও রয়েছে। সংগ্রহশালায় উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন দেশ ভ্রমণকালে শিল্পাচার্যের অঙ্কিত ছবি, গুণটানা, নদী পারাপারের অপেক্ষায় পিতা-পুত্র এবং দুর্ভিক্ষ।
এছাড়া রয়েছে শিল্পাচার্যের ব্যবহৃত জুতা, কোট, রংতুলি, চিত্রপট, কলম, শার্ট, প্যান্ট ও খাটসহ কিছু স্থিরচিত্র। স্থিরচিত্রগুলো ভবনের দোতলার বারান্দায় স্থান পেয়েছে।
জয়নুল উদ্যান
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশে অবস্থিত জয়নুল আবেদিন পার্ক ময়মনসিংহ শহরের অন্যতম বিনোদনের স্থান। বিনোদনের জন্য এই পার্কে রয়েছে দোলনা, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকা, মিনি চিড়িয়াখানা, বৈশাখী মঞ্চ, ঘোড়ার গাড়ি, চরকি ও বিভিন্ন খাবারের দোকান। যারা নদের বুকে ভাসতে চান, তাদের জন্য সারি সারি নৌকার ব্যবস্থাও রয়েছে। নদীর ওপারে ফুচকার দোকান, নাগরদোলা, হরেক রকম জিনিসপত্রের সমাহার দেখলে মনে হবে গ্রামীণ কোনো মেলা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)
ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় এক হাজার ২০০ একর জায়গা নিয়ে এটি অবস্থিত। এখানে রয়েছে ফুলের বাগান, বৈশাখী চত্বর, লিচু ও আমবাগান, সবুজ মাঠ, লেক, ফিশ মিউজিয়াম, কৃষি মিউজিয়াম, সেন্ট্রাল মসজিদ, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, মাছ চাষের পুকুর, গবাদিপশুর খামার, নান্দনিক সড়ক, বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশন ও বিভিন্ন দর্শনীয় ভাস্কর্য।
বোটানিক্যাল গার্ডেন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই অবস্থিত প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই বোটানিক্যাল গার্ডেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেনটি। এখানে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অঞ্চলের বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় কয়েক হাজার উদ্ভিদের বিশাল সম্ভার। দেশি প্রায় সব প্রজাতির উদ্ভিদের পাশাপাশি বিদেশি অনেক বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে এখানে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন আনোয়ার হোসেন। তিনি ঢাকায় একটি বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার সঙ্গে কথা হলে জাগো নিউজকে বলেন, সবুজে ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্য বিলাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা। আমবাগান ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরেছি। এই গার্ডেনে বহু অপরিচিত গাছের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। স্ত্রী-সন্তানও আনন্দে সময় উপভোগ করেছে।
ফিশ মিউজিয়াম
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে রয়েছে ফিশ মিউজিয়াম। ১৬৯ প্রজাতির মাছ নিয়ে এই মিউজিয়াম। দেশীয় মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বিশাল সংগ্রহশালাটি দেশের প্রথম মৎস্য জাদুঘর। সহজেই মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারা, বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তপ্রায় সব স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক মাছ এবং জলজ প্রাণী সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই জাদুঘরটি।
মুক্তাগাছার জমিদার বাড়ি
মুক্তাগাছা জমিদার বাড়িটি সবার কাছে পরিচিত। ময়মনসিংহ শহর থেকে এই জমিদারবাড়ির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। আচার্য্য চৌধুরী ১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তাগাছায় জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৫০-৬০ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তাগাছার আটআনি অঞ্চলের এই জমিদার বাড়িটি গড়ে তোলা হয়। জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণে রয়েছে নাটমন্দির, দুর্গামন্দির, রাজ রাজেশ্বরী মন্দির, তিন শিব মন্দির, তোশাখানা, লোহার নির্মিত দ্বিতল হাওয়াখানাসহ মিদার শশীকান্তের প্রাসাদ ও বড় হিস্যার বাড়ি। ঐতিহ্যবাহী গোপাল পালের মণ্ডার দোকানে মণ্ডার স্বাদ নিতেও এখানে অনেকে আসেন।
ত্রিশালে যা দেখা যাবে
কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য ত্রিশাল। এখানেই কেটেছে কবির শৈশব। ত্রিশালে দুটি স্থানে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। একটির অবস্থান ত্রিশালের বৈলর ইউনিয়নের কাজীর শিমলা গ্রামের দারোগা বাড়িতে, যা ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরত্বে। অন্যটির অবস্থান ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়িতে। এটি শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দুটি স্মৃতিকেন্দ্র পরিচালিত হয়। এখানে রয়েছে কবির নানান স্মৃতি। কবির স্মৃতি রক্ষার্থে ৫৭ একর জায়গার ওপর ত্রিশালে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতেও ঘুরতে আসেন অনেকে। ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রামপুর ইউনিয়নে রয়েছে বিশাল চেচুয়াবিল, যা এখন শাপলাবিল নামে পরিচিত। দর্শনার্থীরা নৌকায় করে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন এখানে।
গৌরীপুরে জমিদারবাড়ি
আনুমানিক ১৭০০ সালের দিকে গৌরীপুর জমিদারবাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে পাশাপাশি দুই জমিদারের জমিদারি ছিল। তাই তাদের আলাদা দুটি বাড়ি ছিল। স্থানীয় লোকজন একটিকে আনন্দ কিশোরের ও অন্যটিকে সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহিড়ীর জমিদারবাড়ি বলেন। জমিদার আনন্দ কিশোরের বাড়িটি এখন গৌরীপুর মহিলা কলেজ এবং জমিদার সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহিড়ীর বাড়িটি গৌরীপুর সরকারি কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঈশ্বরগঞ্জে জমিদারবাড়ি
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্বে অগ্রসর হলেই আঠারোবাড়িতে চোখে পড়বে জমিদারবাড়ির বিশাল অট্টালিকা। ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন এই জমিদারবাড়িতে। এখানে তার ছাত্র জমিদার প্রমোদ রায় চৌধুরীর কাছারিঘর উদ্বোধন করার জন্য আসেন। সেই কাছারিঘরটি এখনো আছে। জমিদারবাড়ির সামনে রয়েছে বিশাল পুকুর। পুকুরে রয়েছে রাজঘাট। কবিগুরুর আগমনের স্মৃতি বহন করে সুবিশাল সেই জমিদারবাড়িটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। জমিদারবাড়ির আঙিনায় ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আঠারোবাড়ি ডিগ্রি কলেজ।
ফুলবাড়িয়ায় যা আছে
ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে এনায়েতপুর গ্রামে গেলে দেখা মিলবে অর্কিড বাগানের। বাংলাদেশের একমাত্র অর্কিডবাগান এখানে। বাগানে দুই শতাধিক প্রজাতির অর্কিড আছে। কাছেই নাওগাঁও ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে আছে রাবারবাগান। প্রায় ১০৬ একর জমি নিয়ে অবস্থিত এই রাবারবাগান। বাগান থেকে সংগৃহীত রাবার প্রক্রিয়াজাত করে দেশ-বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
হালুয়াঘাটে গাবরাখালী গারো পাহাড়
ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট পৌর এলাকা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গাজীরভিটা ইউনিয়নে গাবরাখালী গারো পাহাড়ের অবস্থান। এখানকার অপরূপ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে সবাইকে। এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রটি আকর্ষণীয় করতে প্রবেশমুখেই রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের মনোরম ঝরনাধারা। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকের ওপর ঝুলন্ত সেতু। পাহাড়ের টিলায় ওঠার জন্য করা হয়েছে স্টিলের সিঁড়ি। বিশাল লেকের পাড়ে বসে কিংবা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সীমান্তের ওপারের নৈসর্গিক দৃশ্যে প্রাণ জুড়ায়।
ধোবাউড়ার চিনামাটির পাহাড়
ভারত সীমান্তঘেঁষা ধোবাউড়া উপজেলা। এই উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পুঁটিমারি বাজারের পাশেই অবস্থিত সাদা সোনা নামে খ্যাত চিনামাটির পাহাড়। এখানে ছোট-বড় নানান আকারের চিনামাটির পাহাড়ের ফাঁকে রয়েছে চোখজুড়ানো নীল রঙের পানির ছোট-বড় জলাশয়। সব মিলিয়ে অপার সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি এই চিনামাটির পাহাড়টি।
গফরগাঁওয়ে ভাষাসৈনিক আবদুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষার জন্য ঢাকায় সালাম, বরকত, রফিকের সঙ্গে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন গফরগাঁওয়ের আবদুল জব্বার। তার স্মৃতি রক্ষার্থে জন্মস্থান গফরগাঁওয়ের পাঁচুয়া গ্রামে ৪০ শতক জায়গার ওপর ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে চার হাজারের বেশি বই। এখানে অনেক দুর্লভ বই রয়েছে।
- আরও পড়ুন
- ময়মনসিংহে কমলা চাষে সফল দুই তরুণ, আয় লাখ টাকা
- ইতিহাসের পাতায় মুক্তাগাছা রাজবাড়ি
- একদিনের ত্রিশাল ভ্রমণে যা যা দেখবেন
ভালুকার কুমিরের খামার
২০০৪ সালে ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে কুমিরের খামার। ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড’ নামে দেশের প্রথম বাণিজ্যিক এই কুমিরের খামারে রয়েছে আড়াই হাজারের বেশি কুমির।
এছাড়া অনেকে অরণ্যের স্বাদ পেতে চলে যান উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নে অবস্থিত কাদিগড় জাতীয় উদ্যানে। এই ইউনিয়নের সিডস্টোর বাজার থেকে সখিপুর যাওয়ার রাস্তায় পরে কাচিনা বাজার। এই বাজার থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে পালগাঁও চৌরাস্তার পাশেই এই উদ্যানের প্রধান প্রবেশপথ।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াত ব্যবস্থা
সড়কপথে মহাখালী থেকে বাসে এলে (যানজট না থাকলে) পৌঁছাতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। রেলপথে কমলাপুর বা বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে ওঠা যায়। বাসের চেয়ে ট্রেনে একটু বেশি সময় লাগে। ভোর থেকে রাত অবধি অনেক ট্রেন চলাচল করে এ পথে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এমএমএআর/জিকেএস