ক্যাবল কারে মেঘের রাজ্য গ্যান্টিং হাইল্যান্ডে
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে সকাল বিদায় নিয়েছে। দুপুরে পুডো সেন্ট্রালের বহুতল বিশিষ্ট বাস টার্মিনালের তৃতীয় তলায় গেলাম বাসের টিকিট সংগ্রহ করতে। গন্তব্য গ্যান্টিং হাইল্যান্ড। ১১ রিঙ্গিতে স্কাইওয়ে ক্যাবল কার ভ্রমণসহ বাসে আসা যাওয়া (১ রিঙ্গিত ২০.৫০ পয়সার সমমান)। টিকিট সংগ্রহের সময় ফিরে আসার সময়ও ঠিক করে নিতে হয়। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় যথেষ্ট পুরো হাইল্যান্ডটি ঘুরে দেখার জন্য। তবে চাইলে সারারাতও কাটানো যায়।
যেমন তেমন বাসও নয়। বিলাসবহুল স্ক্যানিয়া। ঠিক দুপুর দেড়টায় বাস রওনা হলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে দুরন্ত গতিতে। পাহাড়ের সাথে পাহাড়ের সংযোগ ঘটেছে প্রশ্বস্ত ফ্লাইওভারে। তাও আবার একদিকে চলাচল বিশিষ্ট রাস্তা।
১ ঘণ্টা শেষ হতেই আমরা গ্যান্টিং হাইওয়ের বাস টার্মিনালে। হঠাৎ একটা চ্যানেলে ঢুকে পড়লাম। চার কোণা একটি বক্সে উঠে নতুন যাত্রা শুরু। যাওয়ার আগেই ক্যামেরায় ক্লিক। শুরু হলো খোলা আকাশের নিচে তার বেয়ে এগিয়ে চলা। উপরে যাচ্ছি তো যাচ্ছি! পথ আর শেষ হয় না। একেকটা পিলার কত নিচ থেকে ক্যাবলগুলোকে আটকে রেখেছে। প্রায় ৩৮টার মতো পিলার টপকে তখন আমরা ৬ হাজার ফিট উচ্চতায়।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ক্যাবল কার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হলো গেন্টিং হাইল্যান্ডে। ওপারে নামতেই তোলা ছবির প্রিন্ট প্রস্তুত। ৫ তারকা হোটেলের ক্যাসিনোগুলোর পরিব্যাপ্তি কিলোমিটারের মতো। পৃথিবীর নামকরা প্রথম সারির ক্যাসিনোগুলোর বেশ কয়েকটি এখানেই অবস্থিত। গ্যান্টিং গ্রান্ড নামে একটি হোটেল রয়েছে এখানে। ২৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মধ্যদুপুরের তাপমাত্রা ঠান্ডার মতোই ছিল। সময় গড়িয়ে বিকেল আসতেই মেঘে ঢেকে গেলো পুরো হাইল্যান্ড। পাহাড়কে অতিরিক্ত না কেটে ভিত্তিপ্রস্তর বাড়িয়ে পাঁচতলা পর্যন্ত পার্কিংগুলোর কারণে প্রকৌশলীরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আরও হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে এখানে। সুউচ্চ ভবনের এই হোটেলগুলোর প্রতিটিতে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, ক্যাসিনো, শপিং মলসহ নানাবিধ সুবিধা। হোটেল ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড, হোটেল রিসোর্ট, হোটেল থিমপার্ক, ম্যাক্সিমসসহ রয়েছে বেশ কয়েকটি নামকরা হোটেল। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে কিডস ওয়ার্ল্ড, কফি শপসহ কী নেই এই হাইল্যান্ডে?
বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে আসা ঢাকায় বসবাসকারী ব্যবসায়ী মো. মাসুদ বলেন, ‘এখানে এসে আমি অভিভূত। আসার আগে জানা ছিলো না ক্যাবল কারে এতো উপরে উঠবো। যতো উপরে উঠছিলাম, ভয়ও হচ্ছিল আবার রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। চারিদিকের দৃশ্যগুলো ছিলো দেখার মতো। এবার বন্ধুসহ বেড়াতে এসেছি। পরের বার পরিবার নিয়ে নিশ্চিত বেড়িয়ে যাবো এই আকর্ষণীয় হাইল্যান্ডটি।’
বিকেলের শেষে তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি। শীতে তখন কাবু হতে শুরু করেছি। আবার ক্যাবল কারে করে ফিরে আসার মুহূর্তগুলো ছিল আরো রোমাঞ্চকর। নামতে নামতে পথ যেন আর ফুরোয় না। পাক্কা ১৬ মিনিট ভ্রমণ শেষে ক্যাবল কারে আবার ফিরে আসা যাবে টার্মিনালে। তবে এক টিকেটে আপনি যদি ক্যাবল কার চড়তে ভালোবাসেন তাহলে যতোবার ইচ্ছে ততোবার আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
স্পেন থেকে আসা জেনিফার হাইকন বেশ ব্যস্ত ক্যামেরা নিয়ে। একের পর এক ক্লিক করে যাচ্ছেন। সময় নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি জাগোনিউজকে বলেন, ‘আমি দ্বিতীয়বারের মতো এখানে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি। এছাড়া আমার পছন্দের অনেক গেম রয়েছে ক্যাসিনোগুলোতে। প্রতিবার ছু্টিতে এখানে আসলেও আমি বিরক্ত হবো না।’
ক্যাবল কার থেকে নেমে আচারসহ অন্যান্য ড্রাই আইটেমের দোকানে গিয়ে দেখি আজব কাণ্ড! প্রতিটি ড্রাই আইটেমের খাবারের পণ্যগুলোর স্বাদ যাচাইয়ের জন্য আলাদা কৌটায় রাখা আছে খাবারগুলো। ইচ্ছেমতো খান। কেউ কিচ্ছু বলবে না। নিলেন কি নিলেন না সে প্রশ্ন তো উঠবেই না। পর্যটকরাও বেশ ঘুরেফিরে স্বাদ যাচাই করে কিনছেন তার মুখরোচক প্রিয় খাবারটি।
ফেরার পথে পাহাড়ি রাস্তাগুলো দৃষ্টি কেড়ে নেয়। তবে চাইলে টেক্সিক্যাবেও যাওয়া যায় এই আকর্ষণীয় স্থানটিতে। মালয়েশিয়া বেড়াতে আসলে অবশ্যই গ্যান্টিং হাইল্যান্ড ভ্রমণ করা উচিত।
আরএম/এসইউ/এবিএস