নৌকায় চড়ে রাতারগুল ভ্রমণে যা যা দেখবেন

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৩:২১ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
পানিতে জন্মানো এই বন এক বিরল সৌন্দর্যের সৃষ্টি

হেমন্তের বিকেলে সিলেটের রাতারগুল জলাবনে প্রবেশের আগেই দেখলাম দূর থেকে সবুজের ছাদ আর নীল আকাশ মিলে এক অনন্য ছবি এঁকেছে। সরু এক জলে ভাসমান নৌকাগুলো আমার চোখে অপরূপ এক সিম্ফনি রচনা করছে।

যুবক বয়সের এক নৌকার মাঝি, তার নৌকায় উঠলাম। তিনি কেবল নৌকার চালকই নন, এই জঙ্গলের বুনো গল্পের এক বিশিষ্ট পথপ্রদর্শক, ভালো গায়কও বটে।

নৌকায় চড়ে রাতারগুল ভ্রমণে যা যা দেখবেন

নৌকায় বসে যখন রাতারগুলের গভীরে প্রবেশ করি, গাছগুলো যেন আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। সবুজ বুনো চাঁদোয়ার নিচে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। পথে হিজল, বরুণ, বট গাছ ইত্যাদির সবুজের এই মেলবন্ধন যেন গাঢ় হয়ে উঠছে।

মনে হচ্ছে গাছগুলো তাদের সবুজ ডাল-পালা ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের সান্নিধ্যে আমাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। ভেতরে যত প্রবেশ করছি, ততই গভীর নিরবতা আর শান্তির পরশ পাচ্ছি।

নৌকায় চড়ে রাতারগুল ভ্রমণে যা যা দেখবেন

মাঝির কথা থেকে জানলাম, পানিতে জন্মানো এই বন এক বিরল সৌন্দর্যের সৃষ্টি। যেখানে দেশের নানা প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ওরা বর্ষার মৌসুমে দল বেধে অনেকেই মাছ শিকার করে। এই জলাবনের জীববৈচিত্র্য যেন আশ্চর্যজনক আর রোমাঞ্চকর।

আরও পড়ুন

বনের ভেতর পাখির ডাক আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার মৃদু আওয়াজ এই শান্ত পরিবেশে এক অন্যরকম সুর তুলে দিয়েছে। কখনো ঘুঘু কখনো মাছরাঙা পাখির গান যেন এক অভূতপূর্ব সঙ্গীতমালা।

নৌকায় চড়ে রাতারগুল ভ্রমণে যা যা দেখবেন

মাঝি জানালেন, এখানে সাপ, মেছো বাঘ, বানর আর শীতকালে পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি এই বনকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলে। তবে পর্যটকদের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

সাপ নিয়ে এই অঞ্চলে একটি অদ্ভুত কথা প্রচলিত আছে, যেটি আমাদের মাঝে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে এমন এক ধরনের সাপ রয়েছে যার উপর দিয়ে মানুষ হেটে গেলে সাপটি গর্ভবতী হয়!’

নৌকায় চড়ে রাতারগুল ভ্রমণে যা যা দেখবেন

‘বর্ষায় রাতারগুল ভরে ওঠে ৮-১০ ফুট পানি, আর এই জলাভূমি তখন আরও মায়াময় হয়ে ওঠে। এখন পানি কম, তবে গাছগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো নববধূ স্নান করে উঠে এসেছে।’

ঢাকা থেকে আসতে সিলেটে সড়ক, রেল, আকাশপথ সবই আছে। সিলেট শহর থেকে ২৫-২৮ কিলোমিটার দূরে রাতারগুল যেতে সিএনজি বা অটোরিকশা ব্যবস্থাও সহজেই পাওয়া যায়। থাকার জন্য সিলেট শহর কিংবা আশপাশে হোটেল-রিসোর্টেরও ব্যবস্থা আছে।

নৌকায় চড়ে রাতারগুল ভ্রমণে যা যা দেখবেন

রাতারগুল ভ্রমণে নৌকা ছাড়া পথ নেই, জলাবনের সবুজ ছাদের নিচে নৌকা ভ্রমণের অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। এটি মনকে শান্ত করে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে এক স্নিগ্ধ শীতল পরশে মনকে করে তোলে অভিভূত।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।