বুর্জ খলিফাসহ দুবাই ভ্রমণে যা যা দেখে চমকাবেন

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ১১ অক্টোবর ২০২৪

রুমেল আহসান, সাংবাদিক

দুবাইয়ের নাম শুনতেই সবার মাথায় আসে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু দালান ‘বুর্জ খলিফা’র নাম। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রধান, নিরাপদ শহর ও আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশের নাম হলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের মানুষের কাছে দুবাই পরিচিত শব্দ।

বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ ব্যবসায়িক কারণে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য পছন্দের শীর্ষে আছে দুবাই। তাই গত বছরের ১৭ অক্টোবর গিয়েছিলাম ‘চাকচিক্যের নগরী দুবাই’ ভ্রমণে।

বুর্জ খলিফাসহ দুবাই ভ্রমণে যা যা দেখে চমকাবেন

‘চাকচিক্যের নগরী দুবাই ভ্রমণে কী কী ঘুরে দেখবেন?’ এই পর্বে নিশ্চয়ই পড়েছেন দুবাই ভ্রমণে প্রথম চারদিন কোথায় কোথায় ঘুরেছি! আজ পড়ুন পঞ্চম দিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত যা যা দেখে চোখ জুড়িয়েছি।

পঞ্চম দিন

আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ এলাকায়ও সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। আল বিদিয়া থেকে গাড়িযোগে ফুজাইরাহ যেতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগে। সন্ধ্যায় রওনা হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার রাতে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।

শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় বৃহস্পতিবার রাতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাতের ওই অনুষ্ঠানে বাউল গানে মাতিয়ে রাখেন প্রবাসী ভাইয়েরা। আনন্দ ও উৎসবে কেটে যায় একটি রাত। পরদিন ফুজাইরাহ অঞ্চলের বিভিন্ন দর্শনীয় এলাকা ঘুরতে বের হয়।

শুক্রবার আরব আমিরাতের ছুটির দিন থাকায় সেদিন পার্ক থেকে শুরু করে সমুদ্রসৈকতে আরবের শেখ ও তাদের পরিজন আনন্দময় সময় কাটান। ফুজাইরাহ শহরে প্রবাসী বাংলাদেশি প্রায় ৭০ হাজার আছেন। এর মধ্যে অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। প্রবাসীরা সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন।

ষষ্ঠ দিন

চলে যায় দুবাইয়ে। প্রবাসীদের কথা অনুযায়ী আল বিদিয়া থেকে সন্ধ্যা ৬টায় বের হয়। সন্ধ্যায় মরুর বুক দিয়ে যখন গাড়ি যাচ্ছিন, তখন পাথরের পাহাড়ের বুক দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কে দ্রুত গতির গাড়িতে করে দুই ঘণ্টায় পৌঁছায় দুবাই শহরে।

চাকচিক্যের নগরী দুবাইয়ে সড়কে গিয়ে চোখ কপালে উঠার মতো কাণ্ড! গাড়ি দেখবো, নাকি বড় বড় অট্টালিকা দেখবো বুঝে উঠতে পারছি না। বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করছেন আরবের শেখরা। বড় বড় দালানকোঠা নানা রঙের আলোয় আলোকিত করে রেখেছে পুরো শহরকে।

বুর্জ খলিফার মনোমুগ্ধকর আলোসজ্জা

অবশেষে পৌঁছালাম বুর্জ খলিফায়। গাড়ি নির্ধারিত স্থানে পার্কিং করে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ আল খলিফার সামনে গেলাম। চোখ ধাঁধানো অবস্থা। বিদেশি (সাদা চামড়ার মানুষ) পর্যটকে মুখরিত দুবাই শহর। রাতে যেন বুর্জ খলিফায় বসে তারার মেলা।

বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে ঘুরতে আসা তারকাদের দেখা মিলে এখানে। ৩০ মিনিট পর পর বুর্জ খলিফার পাশে থাকা কৃত্রিম জলপ্রপাতে জলনৃত্য শুরু হলো। উপভোগ করলাম সেই দৃশ্য। মুঠোফোনে ভিডিও ধারন করলাম।

বুর্জ খলিফাসহ দুবাই ভ্রমণে যা যা দেখে চমকাবেন

হাজার হাজার দর্শনার্থী ফোয়ারার এই জলনৃত্য বা ওয়াটার ড্যান্স দেখার জন্য ভিড় করেন। ইংরেজি, হিন্দিসহ বিভিন্ন ভাষার গানের সঙ্গে ফোয়ারার নাচ মনোমুগ্ধকর। এ সময় বুর্জ খলিফার গায়ে নানা আলোকসজ্জা ভেসে ওঠে।

দুবাই মলের অ্যাকুয়ারিয়াম

বুর্জ খলিফার পাশে দুবাই মলে ঘুরতে গেলাম। বিদেশি পর্যটকেরা বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটা করছেন মল থেকে। দাম বেশি হলেও বিদেশিদের ডলার ও ইউরোর টাকায় এসব কিছু না। মলে বিশাল অ্যাকুয়ারিয়াম নজর কাড়ে। অ্যাকুয়ারিয়ামেও পর্যকদের ভিড়।

কেউ মুঠোফোনে তুলছেন ছবি আবার কেউ করছেন ভিডিও। বুর্জ খলিফা ও দুবাই মল ঘুরে রাতে দুবাইয়ে আমার আত্মীয় এক ভাইয়ের বাসায় থেকে গেলাম। দুবাই শহরে চারদিন থেকে পুরো শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখলাম।

বুর্জ খলিফাসহ দুবাই ভ্রমণে যা যা দেখে চমকাবেন

পাম জুমাইরার অবাক করা স্থাপত্যশৈলী

সমুদ্র ভরাট করে গড়ে তোলা দুবাই পাম জুমাইরা ঘুরতে গেলাম। অনেক দূর থেকে এই পাম জুমাইরার প্রধান ফটকটি দেখা যায়। বিদেশি পর্যটকেরা এই জুমাইরার হোটেলের স্থাপত্যশৈলী ওহোটেলের বিভিন্ন দিক থেকে সমুদ্র দেখতে ছুটে যান এখানে।

হোটেলের সামনে সমুদ্র ভ্রমণের সুযোগ থাকে স্পিডবোটযোগে। জুমেইরা বিচের পাশে সমুদ্রের মধ্যে বুর্জ আল আরব হোটেল। এর স্থাপত্যশৈলী পুরোনো পালতোলা জাহাজের মতো। রাতে এই হোটেলের আলোকসজ্জা এসে পড়ে সমুদ্রের পানিতে। মূহুর্তে মূহুর্তে রং বদলায় হোটেলটি। নীল, সাদা, গোলাপি ও লাল রং।

আর সমুদ্র তীরের বালুচরে বসে তা উপভোগ করতে লাগলাম। বলে রাখা ভালো, দুবাই ভ্রমণে গেলে রাতের শহর দেখতে না পারলে সবকিছু মিস করবেন। রাতের দুবাই পর্যটকদের কাছে অন্যরূপে দেখা দেয়।

৫০ মিলিয়ন ফুলের মিরাকেল গার্ডেন

পরদিন বিকেলবেলা দুবাই মিরাকেল গার্ডেনে গেলাম। দুবাই ল্যান্ডের কাছে অবস্থিত এই ফুলের বাগানে রয়েছে ৫০ মিলিয়ন তাজা ফুল। যা গাছেই ফুটেছে। ফুল দিয়ে তৈরি নানান রকম কার্টুন। বাগানটিতে পা রাখতেই এক ভালো লাগার আবেশে মনটা ভরে উঠলো।

বুর্জ খলিফাসহ দুবাই ভ্রমণে যা যা দেখে চমকাবেন

নারী, মিকি মাউস, মানব অবয়ব আপনাকে কাছে টানবে। কেটলি, চায়ের কাপ, হাতি, ফুলের তৈরি ঘরবাড়ি স্থাপনায় চোখ আটকে যাচ্ছে। মন চাইছে না বাগান থেকে বের হতে। অবশেষে বাগানে সারাদিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় বের বাসায় ফিরলাম।

ডেজার্ট সাফারি যেন সোনালি বালুচর

রাত কাটিয়ে পরদিন ঘুরতে গেলাম ডেজার্ট সাফারিতে। প্রথম দেখাতে মনে হচ্ছিলো, সোনালি বালুচর হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বালুতে গাড়ি চড়ার অন্যরকম অনুভূতি উপভোগ করছেন পর্যটকেরা। মরুর বালুর মধ্যে উঁচু-নিচু জায়গায় দ্রুতগতিতে ছুটে চলা ফোর হুইল গাড়িতে চড়তে চড়তে অ্যাডভেঞ্চারের পাশাপাশি একটু ভয় ভয়ও লাগতে পারে।

এখানে আগত পর্যটকদের জন্য নাচ-গানের আয়োজন করা হয়। মঞ্চের চারদিকে গোল করে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা বসেন। সেখানে থাকে চা-কফিসহ রাতের খাবারের আয়োজন। মঞ্চে চলে বেলি ড্যান্স, আগুন নিয়ে নৃত্য কিংবা আরবের ট্র্যাডিশনাল নৃত্য।

মিউজিয়াম তো নয়, যেন একটি চোখ

পরদিন দুবাই মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার ভবন দেখতে গেলাম। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে চোখের আকৃতির স্থাপত্যশৈলী। মিউজিয়ামটি শুধু যে মিউজিয়াম তা কিন্তু না, এর মধ্যে আছে গ্লোবাল ইন্টেল্যাকচুয়াল সেন্টার। এছাড়া এটি একটি জীবন্ত গবেষণাগার।

জাদুঘরটি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য নতুন সমাধান তৈরি করতে সহায়তা করতে ডিজাইন করা হয়েছে। জাদুঘরের প্রদর্শনীগুলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আবেগকে জাগিয়ে তুলবে। পুরো মিউজিয়াম ঘুরে দেখলাম। এখানেও দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের ভিড়।

এভাবে পাঁচদিন দুবাই শহর ঘুরে আবারও ফিরে আসি শারজাহ প্রদেশের খোরফাক্কানে আল বিদিয়ায় আমার ভাইয়ের বাসায়। অবশেষে ৪ নভেম্বর শারজাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাত ২টায় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে দেশে চলে আসলাম। ১৬ দিনের আরব আমিরাত সফরে প্রবাসীদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছি। ভালো থাকুন সকল প্রবাসী ভাইয়েরা।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।