মালয়েশিয়া ভ্রমণে যা যা ঘুরে দেখবেন
অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল মালয়েশিয়ায় যাওয়া। সময় সুযোগের কারণে তা হয়ে উঠেনি। এবার তরুণ উদ্যোক্তা বন্ধু ওমর শরীফ ভাইসহ মনস্থির করলাম মালয়েশিয়া যেতেই হবে। প্রথমে সিঙ্গাপুর ঘুরলাম, সেখানে তিনদিন বেড়ানোর পর বিমানযোগে রওয়ানা হলাম মাহাথির মোহাম্মদের হাতে গড়া দেশ মালয়েশিয়ায়।
কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে নেমে দু’চোখ জুড়িয়ে গেল। অসাধারণ ও অত্যাধুনিক কারুকাজে সুসজ্জিত পুরো বিমানবন্দর। একই সঙ্গে সেখানকার আলোকসজ্জা দেখে চোখ ঝলসে যাবে। তবে একটু বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে নিজের ইমিগ্রেশন ফরম কম্পিউটারে নিজে পূরণ করতে গিয়ে।
সব কাজ শেষ করে রেন্ট এ কার যোগে রওয়ানা হলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে অপরূপ প্রকৃতি সবাইকে মুগ্ধ করবে। ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের বহুতল ভবনগুলো আপনার মনোযোগ কাড়বে।
মালয়েশিয়ায় ঘুরে দেখার মতো অনেক সুন্দর জায়গা আছে। সেখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেশটিকে আরও বেশি সুন্দর করে তুলেছে। মালয়েশিয়া এশিয়ার সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা দেশগুলোর মধ্যে একটি। ব্যায়বহুল দেশ ভ্রমণের মধ্যে সিঙ্গাপুরের পরই মালয়েশিয়া অন্যতম।
তবে সেখানকার সুন্দর, বৈচিত্রময় ও রোমাঞ্চকর জায়গাগুলো মালয়েশিয়া ভ্রমণের চাহিদা আরও বাড়িয়ে তোলে। বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে যে কেউ এ দেশ ভ্রমণ করতে পারেন।
মালয়েশিয়া ভ্রমণের সময় কুয়ালালামপুর অবশ্যই ঘুরে বেড়াবেন। এশিয়ার অন্যান্য বড় শহরের মতো এখানে ভ্রমণকারীরা এসে এ শহরে পৌঁছায়। পরবর্তী সময়ে শহরের বাইরে ভ্রমণে চলে যায় সবাই। যদিও কুয়ালালামপুর ভ্রমণের জন্য একটি সুন্দর জায়গা। যেখানকার প্রতিটি বহুতল ভবনের পরতে পরতে সৌন্দর্য চোখে পড়বে।
- আরও পড়ুন
- সিঙ্গাপুর যেভাবে পরিচ্ছন্ন ও উন্নত দেশে রূপান্তরিত হয়েছে
- সিঙ্গাপুর ভ্রমণে যে ৬ স্পট ঘুরতে একেবারেই ভুলবেন না
এ শহরে আপনার রন্ধনশিল্পীদের কাজের সুযোগ অনেক বেশি। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য কুয়ালালামপুরের প্রধান আকর্ষণের একটি বড় অংশ। শহরের ভেতরে হেঁটে বেড়ালে কিংবা ট্রেনে ভ্রমণ করে এখানকার সব বৈচিত্রময় সংস্কৃতি দেখতে পাবেন।
কুয়ালালামপুরে ঘোরার জন্য টুরিস্ট স্পটের অভাব নেই। পেট্রোনাস টাওয়ার, পেরডানা বোটানিক্যাল গার্ডেন ও মেনারা কেএল টাওয়ার মতো আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান আছে মালয়েশিয়ায়। আরও দূরে যাওয়ার আগে কুয়ালালামপুর ভ্রমণ করা উচিত।
মালয়েশিয়ানরা পশ্চিম উপকূলের একটি বড় দ্বীপ নিয়ে অনেক গর্বিত। ঔপনিবেশিক শহর জর্জটাউন একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। যেখানে আছে যাদুঘর, একটি সমুদ্রতীরবর্তী দুর্গ, ঐতিহাসিক বাড়ি। এমনকি বিখ্যাত সব স্ট্রিট ফুডের স্বাদ নিতে পারবেন সেখানে।
জর্জটাউনের রাস্তায় ম্যুরাল আকারে অসংখ্য শিল্পী তাদের চিহ্ন রেখে গেছেন। সব ধরনের সুস্বাদু স্ট্রিট ফুডের স্বাদ নেওয়ার জন্য পেনাংকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সেরা জায়গা হিসেবে বিবেচিত। পেনাংয়ের গার্নি ড্রাইভ নামে পরিচিত ওয়াটারফ্রন্ট এসপ্ল্যানেডে স্থানীয় মালয়, চাইনিজ ও ভারতীয় খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য খাবারের জন্যও আছে স্টল।
ব্যাকপ্যাকার ও বাজেট সম্পন্ন ভ্রমণকারীদের জন্য মালয়েশিয়ার পারহেন্টিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বিশেষ উপযোগী। বিশেষ করে পারহেন্টিয়ান কেসিল- দুটি দ্বীপের মধ্যে ছোট। এখানে দিনের বেলায় চমৎকার স্নরকেলিং/ডাইভিংও করা হয়।
কাছাকাছি পারহেনশিয়ান বেসার একটি বড় দ্বীপ। পরিবার, দম্পতি ও ভ্রমণকারীদের জন্য আরও বেশি আকর্ষণীয়, বিশেষ করে যারা নীল পানি উপভোগ করতে চান। যে দ্বীপই বেছে নিন না কেন, পারহেন্টিয়ানে যাওয়ার জন্য একটি স্পিডবোট নিতে হবে।
মালয়েশিয়ার মালাক্কার পেরানাকান শহরটি সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও ঔপনিবেশিক স্থানগুলোর মধ্যে একটি। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো মালাক্কাকে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করেছে। মালাক্কার পুরানো শহরটি দেখে ভ্রমণকারীরা সব সময়ই মুগ্ধ হয়। এখানের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ যথেষ্ট মনোরম।
কুয়ালালামপুরের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে বাসে যাওয়া বেশি সহজ। এর পাশাপাশি ট্রেনেও সেখানে যেতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় যেখানে যাবেন বাংলাদেশের মানুষ চোখে পড়বে। আছে বাংলাদেশি খাবারের অনেক রেস্টুরেন্টও। দেশের সব ধরনের বাংলা খাবার এখানে সহজেই পাওয়া যায়। ভ্রমণের জন্য চাইলে সঙ্গে বাংলাদেশি গাইডও নিয়ে যেতে পারেন।
এখানে বেড়াতে আসা তরুণ উদ্যোক্তা ওমর শরীফ ও এমদাদ হোসেন তারিফ বলেন, ‘মালয়েশিয়া অনেক সুন্দর ও উন্নত দেশ। ঘুরে দেখার মতো অনেক পর্যটন স্পট আছে এখানে। খাবার-দাবারেও তেমন সমস্যা হয় না। সব ধরনের দেশীয় খাবার সহজে পাওয়া যায়।’
এমএমডি/জেএমএস/জিকেএস