একদিনেই পুরান ঢাকার যেসব স্থানে ঘুরতে পারেন

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৫ পিএম, ১৭ জুন ২০২৪
পুরান ঢাকার জনপ্রিয় ৩ স্থান

ঈদের ছুটিতে চাইলেই একদিনে ঘুরে আসতে পারেন পুরান ঢাকার দর্শনীয় কয়েকটি স্থানে। নগরীর চার দেওয়াল থেকে বের হয়ে সবুজ আর নিরিবিলি জায়গায় বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে সবারই ইচ্ছা করে। ঠিক তেমনই নিরিবিলি পরিবেশ, নদী ও সবুজের মধ্যে সময় কাটিয়ে আসুন পুরান ঢাকা থেকে। চাইলে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন পুরান ঢাকার জনপ্রিয় ৩ স্থানে-

আহসান মঞ্জিল

ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঢাকায় নির্মিত ইমারতগুলোর মধ্যে আহসান মঞ্জিল উল্লেখযোগ্য এক শৈল্পিক স্থাপত্য নিদর্শন। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্থাপনাটি।

পূর্বে এটি রাজাদের আবাসস্থল ছিল। বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সমগ্র আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্বপাশের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা হয় প্রসাদ ভবন (রঙমহল) ও পশ্চিমপাশে আবাসিক প্রকোষ্ঠাদি নিয়ে গঠিত ভবনকে বলা হয় ‘জানানা’ বা অন্দরমহল।

প্রাসাদ ভবন আবার দুটি সুষম অংশে বিভক্ত। মাঝখানে গোলাকার কক্ষের ওপর সুউচ্চ অষ্টকোণ গম্বুজটি উত্তোলিত। এর পূর্বাংশে দোতলায় বৈঠকখানা, প্লেয়িং কার্ড রুম, গ্রন্থাগার ও ৩টি মেহমান কক্ষ ও পশ্চিমাংশে একটি নাচঘর।

হিন্দুস্তানি কক্ষসহ ও কয়েকটি আবাসিক কক্ষ আছে। নিচ তলার পূর্বাংশে আছে ডাইনিং হল ও পশ্চিমাংশে দরবার গৃহ, বিলিয়ার্ড কক্ষ এবং কোষাগার। প্রাসাদ ভবনের দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রসারিত বারান্দা ও রাস্তার পাশে নহবতখানাটি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়ায় তা পুনঃনির্মাণ করা হয়।

আহসান মঞ্জিল গেলে সেখানে দেখতে পাবেন জাদুঘরে সংরক্ষিত নবাবদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। সৈনিকদের বর্ম, ফুলদানি, সিন্দুক, জগসহ আরও অনেক কিছু। দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার দিকে প্রাকৃতিক দৃশ্য শোভিত প্রাসাদের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে বসে উপভোগ করতে পারবেন শেষ বিকেলের মনোরম দৃশ্য।

শনিবার থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আপনি আহসান মঞ্জিল প্রবেশ করতে পারবেন। শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিন আহসান মঞ্জিল বন্ধ থাকে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকার যে কোনো জায়গা থেকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এসে বাস, সিএনজি, রিকশা অথবা ঘোড়ার গাড়ি দিয়েও আপনি আহসান মঞ্জিল যেতে পারবেন। ভিক্টর ক্ল্যাসিক, আজমেরী গ্লোরী, এফ আর মোটরস (এসি বাস) দিয়ে সদরঘাট যাবেন। এরপর পায়ে হেঁটেই পৌঁছাতে পারবেন আহসান মঞ্জিল।

আহসান মঞ্জিল ঘুরেই চলে যেতে পারেন বিউটি বোর্ডিংয়ে। আহসান মঞ্জিল থেকে পায়ে হেঁটে বাংলাবাজার মোড় এসে কিছুটা সামনে হাঁটলেই বিউটি বোর্ডিং। চাইলে রিকশা নিয়েও বিউটিবোর্ডিং যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে গুনতে হবে ২০-৩০ টাকা।

আরও পড়ুন

বিউটি বোর্ডিং

পুরান ঢাকার বাংলা বাজারের ১নং শ্রীশদাস লেনে অবস্থিত একটি দোতলা পুরাতন বাড়ি যার নাম বিউটি বোর্ডিং। বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাস জড়িত ও বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির গুণী মানুষদের আড্ডার একটি কেন্দ্র বা ইতিহাসের ভিত্তিভূমি বলা হয় এই বোর্ডিংকে।

১৯৪৯ সালে প্রহ্লাদ সাহা ও তার ভাই নলিনী মোহন সাহা ১১ কাঠা জমির ওপর বিউটি বোর্ডিং গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিউটি বোর্ডিংয়ে আড্ডা দিতেন কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, পরিচালক অভিনেতাসহ বিভিন্ন কিংবদন্তী মানুষজন।

১০ টাকা দিয়ে বোর্ডিংয়ের গেইট দিয়ে প্রবেশ করলেই মনে হবে এক টুকরো সবুজে আপনার পদার্পণ। চাইলে বোর্ডিংয়ে রাতেও থাকা যাবে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে বিউটি বোর্ডিং।

এখানে আছে সকালের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবারের সুব্যবস্থা। বিকেলের নাশতায় আছে লুচি। প্রতি পিস লুচির দাম ১০ টাকা। দুধ চা খেতে চাইলে গুনতে হবে ১৫ টাকা। চাইলে দুপুরের খাবারটা সেরে নিতে পারেন।

ভাত প্রতিবাটি ২০ টাকা, ডাল ১৫ টাকা, সবজি হাফ ৩০টাকা, বেগুন ভাজা ২৫ টাকা, বড়া ১৫ টাকা, চাটনি ২৫ টাকা, খিচুড়ি ৩০ টাকা, আলুর দম ৩৫ টাকা, মুরগির মাংস ১৩০ টাকা, খাসির মাংস ১৫০ টাকা, রুই মাছ ১৮০ টাকা, বোয়াল মাছ ১৮০ টাকা, টেংরা, গোলসা ও বাইলা মাছ ১২০ টাকা।

বিউটি বোর্ডিংয়ের সবুজ থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারবেন আর্মেনিটোলার আর্মেনিয়ামে চার্চে। বিউটি বোর্ডিংয়ের সামনে থেকে অথবা বাংলাবাজার মোড় থেকেও রিকশা নিয়ে যেতে পারবেন।

আর্মেনিয়াম চার্চ

পুরান ঢাকার আর্মেনিটোলায় অবস্থিত আর্মেনিয়াম চার্চ। এর মতো শান্ত, নিরিবিলি জায়গা ঢাকা শহরে খুব কমই আছে। দুই শতকেরও বেশি সময়ের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী এই গির্জা। ১৭৮১ সালে এটি নির্মাণ করেছিলেন জোহাসন কারু পিয়েত। ঐতিহ্যবাহী এই গির্জার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আর্মেনীয়দের ইতিহাস।

এ গির্জায় ঢুকলেই নজরে পড়বে আর্মেনীয়দের কবর। লম্বায় সাড়ে ৭০০ ফুট গির্জাটিতে ৪টি দরজা ও ৭টি জানালা আছে। গির্জায় বৃহৎ আকারের একটি ঘণ্টা ছিল। বলা হতো নগরীর সব জায়গা থেকেই এই ঘণ্টার শব্দ শোনা যেত।

১৮৮০ সালের দিকে গির্জার বিখ্যাত ঘণ্টাটি বন্ধ হয়ে যায়, যা আর কখনো বাজেনি। আপনি চাইলে এইখানে ছবিও তুলতে পারবেন। তবে কবরের ছবি তোলা যাবে না। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গির্জা খোলা থাকে।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।