পর্বতারোহীরা কেন কৈলাস পর্বতে আজও উঠতে পারেননি?
কৈলাস পর্বত যদিও বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের তুলনায় বেশ খানিকটা কম, তবুও এভারেস্ট ‘অজেয়’ পর্বতশৃঙ্গ নয়। অথচ কৈলাস ‘অজেয়’ পর্বতশৃঙ্গ। কৈলাস পর্বতের উচ্চতা ২১ হাজার ৭৭৮ ফুট।
শুধু দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত বলেই নয়, বিভিন্ন ধর্মে তার গুরুত্বের জন্যও যেন এই পর্বতে আরোহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত আছে। তবে কখনোই কি কৈলাস আরোহণের জন্য কেউই চেষ্টা করেননি, আসল রহস্য কী?
কৈলাসে আরোহণের ব্যাপারে উদ্যোগ শুরু হয় ভারত তথা পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশ প্রাধান্য বিস্তারের পর থেকে। তবে তিব্বতের বজ্রযানী বৌদ্ধ ঐতিহ্য জানায়, মহাসাধক মিলারেপাই নাকি একমাত্র মানুষ যিনি কৈলাসশীর্ষে পৌঁছতে পেরেছিলেন। তবে এই কাহিনি অনেকাংশেই কিংবদন্তি-নির্ভর ও প্রতীকী।
কিংবদন্তি যা ই বলুক, কৈলাসে আরোহণের নিষেধাজ্ঞার নেপথ্যে আছে বেশ কিছু বাস্তব সমস্যা। কৈলাস পর্বতের আকৃতি পিরামিডের মতো। তার উপরে সারা বছরই এই পর্বত তুষারাচ্ছন্ন থাকে। খাড়া, পিচ্ছিল পর্বত বেয়ে ওঠা এক প্রকার অসম্ভব।
কৈলাস পর্বতকে আরও বেশি দুর্গম করে রেখেছে সেখানকার ঝোড়ো হাওয়া। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় এই বাতাসের বিপরীতে লড়াই করে বরফাবৃত খাড়া ঢাল বেয়ে এই পর্বতে আরোহণ প্রায় অসম্ভব বলেই স্বীকার করেছেন পর্বতারোহীরা। এ কারণে অনেকেই ব্যর্থ হয়েছন।
ভারত ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শুরু হয় হিমালয় ও তিব্বতের ভূ-প্রকৃতিকে ভালোভাবে জানার প্রচেষ্টা। ১৯২৬ সালে ব্রিটিশ আমলা তথা পর্বতারোহী হিউ রুটলেজ কৈলাসের উত্তর দিকটিকে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি জানান, এই পর্বত আরোহণের অযোগ্য।
রুটলেজের সঙ্গে ছিলেন কর্নেল আরসি উইলসন। তিনি অন্য একদিক থেকে কৈলাসে আরোহণের চেষ্টা করছিলেন। তার সঙ্গী ছিলেন এক শেরপা। তিনি জানান, কৈলাসের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আরোহণ সম্ভব হলেও হতে পারে।
উইলসন পরে জানিয়েছিলেন, তিনি শেরপার কথা মেনে আরোহণ শুরু করেন। তবে বিপুল তুষারপাতের কারণে তিনি ব্যর্থ হন ও কৈলাস অভিযান অসম্ভব বলে স্বীকার করেন।
১৯৩৬ সালে অস্ট্রিয়ান ভূতত্ত্ববিদ ও পর্বতারোহী হারবার্ট টিচি গুরলা মান্ধাতা পর্বতাঞ্চলে অভিযান চালান। তখন তিনি স্থানীয় জনপদগুলিতে খোঁজ নিতে থাকেন কৈলাসের বিষয়ে। তার প্রধান জিজ্ঞাসা ছিল, কৈলাস কি আদৌ আরোহণযোগ্য?
আশির দশকের মাঝামাঝি নাগাদ চিন সরকার ইটালির পর্বতারোহী রেইনহোল্ড মেসনারকে কৈলাস অভিযানের ব্যাপারে উৎসাহ দিতে থাকে। তবে তিনি তাতে রাজি হননি।
এরপর চিন সরকার এক স্পেনীয় অভিযাত্রী দলকে কৈলাস আরোহণের অনুমতি দেয়। তবে সেই অভিযানও ব্যর্থ হয়। ২০২৩ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কোনো মানুষই এ যাবৎকালে কৈলাসশীর্ষে আরোহণ করতে পারেননি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া/তিব্বত ট্যুরস
জেএমএস/জিকেএস