মিরসরাই-গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ঢল

এম মাঈন উদ্দিন
এম মাঈন উদ্দিন এম মাঈন উদ্দিন , উপজেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২৪
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি

ঈদুল ফিতরের টানা ছুটির সঙ্গে পহেলা বৈশাখের উৎসবও যোগ হওয়ায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে। ঈদের দিন বিকেল থেকে ভ্রমণপিসাসু মানুষের যাতায়াত শুরু হয়।

রবিবার ( ১৪ এপ্রিল) ছিল সবচেয়ে বেশী মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দখিনা হওয়ায় নিজেকে মেশাতে ও সমুদ্রের পানিতে ঘা ভেজাতে এখানে ছুটে আসেন শত শত মানুষ। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল দৃষ্টিনন্দন এই সৈকত।

গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মাধুর্য প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সাড়া দিচ্ছে। সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার পর নতুন লে-আউটে সৈকতটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

মিরসরাই-গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ঢল

নোনা-বালুকাময় বাতাসে শরীর ও মনের আলিঙ্গনে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে সমুদ্রসৈকত। একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সমুদ্র হওয়ায় ভ্রমণপিপাসুদের বাড়তি আগ্রহ দেখা যায় এই অঞ্চলে। ঈদের দিন থেকে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সীতাকুন্ড সদর থেকে গুলিয়াখাল সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত যেন মানুষের মিছিল ছুটছে! সড়কে গাড়ির যানজট লেগে রয়েছে। ছুটি পেয়ে কিছুতেই এমন দর্শনীয় স্থান উপভোগ করতে ভুল করছেন না কেউ।

আরও পড়ুন

পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এসেছেন অনেকে। কেউ সমুদ্রে নেমে গোসল করছেন, কেউ কেউ বসে গল্প করছেন, অনেকে ছবি তুলছেন, আবার অনেকে বোটে করে সাগরে ভ্রমণ করছেন। গত এক বছরের মধ্যে এদিন সর্বোচ্চ মানুষের সমাগম হয়েছে এখানে।

মিরসরাই-গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ঢল

মিরসরাইয়ের হাইতকান্দি থেকে ঘুরতে আসা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সারাবছর ব্যস্ত থাকি। বছরের প্রথম দিন ও ঈদের ছুটি থাকায় বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে এলাম। আজ প্রচুর মানুষ এসেছে।’

চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা নবদম্পতি শাহরিয়ার ও তৃষা বলেন, ‘বিয়ের পর এই প্রথম গুলিয়াখালীতে বেড়াতে এসেছি। আগে অনেক ছবি ও ভিডিও দেখেছি। তবে এখানে এসে দেখলাম এই সমুদ্রসৈকত অনেক সুন্দর।’

কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করে বলেন, বিচ এলাকায় মোটরসাইকেল বেশি বিরক্ত করে। কর্তৃপক্ষের উচিৎ অন্যান্য গাড়ির মতো এখানে আসতে না দেওয়া। তারা ইচ্ছা করে হর্ণ দেয় বালু উড়ায়। এতে অনেকে অস্বস্তিবোধ করেন।’

মিরসরাই-গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ঢল

সীতাকুণ্ড পৌর সদর বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে নামার বাজার রোডে সমুদ্রতীরে বেড়িবাঁধ সংলগ্নে অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত। কেওড়া বাগানের পাশ দিয়ে ১ কিলোমিটার পথটি মাটির চেয়ারে ঢাকা, কাদা ও ঘাসে ঘেরা, এটি ফোমে মোড়ানো প্রাকৃতিক সোফার মতো মনে হয়।

আবার দূর থেকে ঘাসের জমির দিকে তাকালে চোখের সামনে ছোট ছোট টিলার মতো সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন। মনোরম গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, বিভিন্ন সৌন্দর্য ও মাধুর্যে সজ্জিত, দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের তার জাদু জালে আকৃষ্ট করে।

সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের পাশাপাশি বাড়ছে হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা, সৈকতমুখী সড়কে বাড়ছে যাত্রীবাহী গাড়ি। এদিকে পর্যটকদের অভিযোগ, সৈকতে তীরে সন্ধ্যার পর সিএনজি চালকরা বাড়তি ভাড়া দাবি করছেন। আসার সময় ২০০-২৫০ টাকা নেয়।

তবে সন্ধ্যা হলেই ৪০০-৫০০ টাকা না হলে যেতে চাই না চালকরা। অনেকটা বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া সন্ধ্যার পর যেসব পর্যটকরা সমুদ্র বিলাসে ঘুরতে যায় তারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকেন বলেও জানান কয়েকজন পর্যটক। যেহেতু সৈকতে এখনো কোন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।

মিরসরাই-গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ঢল

স্কুল শিক্ষক হামিদা আবেদীন বলেন, ‘নতুন বছরের প্রথমদিন হওয়ায় স্বামী-সন্তান ও আমার বোনের পরিবার সহ ঘুরতে এসেছি। বেশ ভালো লাগছে। অনেক ছবি তুলেছি। আগেও এসেছিলাম, তবে এত দোকানপাট ছিলনা। এছাড়া বিচে যাওয়ার রাস্তাটি ছোট, আরো বড় করা প্রয়োজন। কারণ অনেক বেশী গাড়ি চলাচলের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গুলিয়াখালীতে সব সময় লোকজন ঘুরতে আসেন। এবারের ঈদে আগের তুলনায় অনেক বেশী এসেছেন। বেচা-কেনা অনেক ভালো হয়েছে।’

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।