শিমুলের রক্তরাঙা সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৩৩ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে মায়ার নদী যাদুকাটা আর এপারে রক্তিম ফুলের সমারোহ, অগণিত পাখির কলকাকলি। বসন্ত এলে পুরো বাগানের শিমুল গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে।

ফাগুনের অরুণ আলোয় ফোটে বাগানের শিমুল ফুলগুলো। চোখের তৃষ্ণা মেটাতে প্রতিদিন এই বাগান দেখতে ছুটে আসছেন ১০-১৫ হাজার মানুষ। ফলে এই বাগানকে ঘিরে চাঙা হচ্ছে উত্তরের অর্থনীতি।

কেউ পরেছেন বাসন্তি রঙের শাড়ি, কেউ সাদা নীল। খোঁপায় গুঁজেছেন টকটকে লাল শিমুল। বাসন্তি রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে তাদের সঙ্গে এসেছেন প্রিয়জন।

jagonews24

কেউ তুলছেন ছবি আবার কেউ হাতে হাত রেখে শিমুলের নিচ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কেউবা শিমুলের ফুলের পাপঁড়ি প্রিয়জনের উপরে ছিটিয়ে মেতেছেন ভালোবাসার রঙে।

বসন্তে শিমুলের রক্তরাঙা সৌন্দর্য দেখতে দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা হাজির হচ্ছেন জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে। পুরো এলাকাজুড়ে টকটকে লাল শিমুল ফুল গাইছে বসন্তের গান।

শিমুলের ডালে ডালে কিচির মিচিরে ব্যস্ত পাখিরা আর বাসন্তি হাওয়ায় শিমুলের দোল খাওয়া দেখে হৃদয় জুড়িয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা।

সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে ১০০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে তোলা এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল গাছের বাগান।

jagonews24

২০০২ সালে মানিগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে সৌখিনতার বসে শিমুল গাছ রোপণের উদ্যোগ নেন। তিনি প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন।

আরও পড়ুন

দর্শনীয় এই গ্রামে সেলফি তুলতেও লাগে টাকা 
একদিনে ঘুরে আসুন ডিসি পার্কে ফুলের মেলায় 

দিন দিন বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে শিমুল বাগান। যে বাগানের রক্তিম আভার সৌন্দর্যের ফুল দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।

পর্যটকদের মতে, বসন্তের এই দিনে এমন সুন্দর একটি জায়গা ঘুরতে আসতে পেরে সত্যি খুব ভালো লাগছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নতি হলে পর্যটকরা আরও বেশি বেশি আসবে।

jagonews24

এদিকে এ বছর বাগানের তিন হাজার শিমুল গাছের মধ্যে দুই হাজার ৫০০ শিমুল গাছে ফুল ফুটেছে। বাগানে প্রবেশ করতে জনপ্রতি দিতে হয় ২০ টাকা।

পাশাপাশি বেড়েছে পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা। একই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে ঝড়ে পড়া শিমুল ফুল কুড়িয়ে সেই ফুল দিয়ে মালা গেথে বিক্রি করা গ্রামীণ নারী, শিশু ও ভালোবাসার প্রতীক তৈরি করার কারিগরদের মধ্যে।

jagonews24

এমনকি এই এক বাগানকে ঘিরে হাওরাঞ্চলের মানুষদের যেমন বিভিন্ন কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনই বেচাকেনা বেড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।

শিমুল বাগানের স্বত্বাধিকারী সাবেক চেয়ারম্যান রাকাব উদ্দিন বলেন, ‘শিমুল বাগানের ফুলের সৌন্দর্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে দর্শনার্থীরা এই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমান। তাই পর্যটকের কথা মাথায় রেখে বাগানকে সুসজ্জিত করা হয়।’

‘দর্শনার্থী যাতে আরও নিরিবিলিতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, তাই রিসোর্ট করার পরিকল্পনা আছে। একই সঙ্গে এই বাগানকে ঘিরে এই অঞ্চলের মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।’

চলতি মৌসুমে এই বাগানকে ঘিরে কোটি টাকার উপরে বাণিজ্য হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও বাগান মালিক।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।