‘ডে লং ট্যুরে’ ঘুরে আসতে পারবেন দেশের যে কয়েকটি স্থানে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০২ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪
ঢাকা থেকে একদিনে ঘুরে বেড়াতে পারবেন দেশের কয়েকটি স্থানে

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বাংলাদেশে বেড়ানোর স্থানের অভাব নেই। যদিও অক্টোবর থেকে মার্চ মাস হচ্ছে দেশের মধ্যে বেড়ানোর আদর্শ সময়। তবে এখন ভ্রমণপিপাসুরা ছুটি পেলেই বেরিয়ে পড়েন ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে।

বেশিরভাগ মানুষই কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা ও শ্রীমঙ্গলসহ সিলেট বিভাগের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরতে যান।

তবে যারা একদিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে চান তারা চাইলে ঘুরে আসতে পারে বেশ কয়েকটি স্থান থেকে। বর্তমানে কর্মব্যস্ত মানুষেরা ‘ডে লং ট্যুরে’ যাওয়ার জন্য কাছাকাছি বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটের খোঁজ করেন।

আরও পড়ুন: একদিনের ট্যুরে ঘুরে আসতে পারেন নীলাদ্রি লেকে

তেমনই দেশের কয়েকটি স্থানে আপনি রাতে রওনা দিয়ে সকালে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে সারাদিন দর্শনীয় স্থান ঘুরে আবারও রাতের গাড়িতে ফিরতে পারেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। রইলো তেমনই ৩ জনপ্রিয় স্থানের হদিস-

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান

কুমিল্লা জেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর জন্য সুপরিচিত। জেলার উত্তর পাশের পাহাড়ি অংশ ময়নামতি ও দক্ষিণ পাশ লালমাই নামে পরিচিত।

লালমাই ও ময়নামতির মধ্যবর্তী শালবন বিহার একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। শালবন বিহার ও তার আশপাশে আছে প্রাচীন সভ্যতার বেশ কিছু নিদর্শন।

শালবন বিহার থেকে মাত্র ৫/৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের সমাধিস্থল কুমিল্লার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

আরও পড়ুন: নতুন বছরে ঘুরে আসতে পারেন এই ৫ দেশে

ময়নামতি জাদুঘর হলো কুমিল্লার আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ। এই জাদুঘরে আপনি দেখতে পাবেন প্রাচীন আমলের অস্ত্রশস্ত্র, ব্রোঞ্জের পাত্র, স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা ও ব্রোঞ্জের তৈরি ৮৬ প্রকার দ্রব্যাদি। শুধু তাই নয়, এখানে আরও দেখবেন বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দির থেকে সংগৃহীত ১৫০ এরও বেশি বৌদ্ধমূর্তি।

কুমিল্লা শহরের ৪/৫ কিলোমিটার বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছাকাছি কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সৌন্দর্যও মুগ্ধ করার মতো। কুমিল্লার আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো ধর্মসাগর দীঘি। ধারণা করা হয়, ১৭৫০ কিংবা ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রজাহিতৈষী রাজা ধর্মপালের নামে রাখা হয়েছে এই দীঘিটির নাম।

রাজা ধর্মপাল ছিলেন পাল বংশের রাজা ও প্রজাদরদী মানুষ। দুর্ভিক্ষের সময় দুর্ভিক্ষপীড়িত লোকজনকে পানি দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য এই দীঘিটি খনন করা হয়। রাজার উদ্দেশ্য ছিলো প্রজাদের পানির কষ্ট দূর করা। প্রতিদিন বিকেলে এই দীঘির পাড়ে ভিড় জমান অনেক দর্শনার্থী।

কুমিল্লায় বেড়াতে গিয়ে আর যে বিষয়টি একটুও ভুলবেন না তা হলো দেশসেরা রসমালাইয়ের স্বাদ পরখ করা। এর পাশাপাশি এখানকার খাদি কাপড়ের পরিচিতিও ব্যাপক।

আরও পড়ুন: লামাহাট্টা ভ্রমণে কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ আরও যা দেখে মুগ্ধ হবেন

কিভাবে যাবেন কুমিল্লা ও থাকবেন যেখানে 

দেশের যে কোনো স্থান থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনে উঠে আপনি সহজেই কুমিল্লায় নেমে যেতে পারেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকে বাস সার্ভিস আছে।

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে এশিয়া লাইন, তিশা, বিআরটিসি, ইকোনো সার্ভিস, রয়েল কোচ প্রভৃতি আরামদায়ক বাস আড়াই ঘণ্টার মধ্যে কুমিল্লায় পৌঁছে।

রাতে থাকার জন্য শহরে আছে হোটেল রেড প্রুফ ইন, কানন লেইক রিসোর্ট লিমিটেড, হোটেল বিলাস, হোটেল সাগরিকা, হোটেল পিপাসা, হোটেল গোমতী প্রভৃতি মাঝারি বাজেটের হোটেল।

একটু নিরিবিলি ও আরামদায়ক বসবাসের জন্য আছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) এর গেস্ট হাউস যা ‘রাণীর কুঠি’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন: একদিনেই ঘুরে আসুন মিনি সুন্দরবনে

সোনারগাঁও: ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ

বাংলার প্রাচীন রাজধানী ছিলো সোনারগাঁ। ঢাকা নগরী থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছেই সোনারগাঁর অবস্থান।

দেব রাজবংশের শাসনামলে এটি ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রশাসনিক রাজধানী ছিলো। ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘলদের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত সোনারগাঁ বাংলা সালতানাতের অংশ ছিল।

দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন ভবন ও স্মৃতিচিহ্নের পাশাপাশি প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে আছে দেশের ঐত্যিহ্যসমূহ ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের জন্য নিবেদিত একটি জাদুঘর।

কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের নকশা অনুসারে নির্মিত লোকশিল্প জাদুঘর ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয়ে এক চমৎকার জায়গা যা সপরিবারে ভ্রমণের জন্য আদর্শ।

আরও পড়ুন: বরফের রাজ্যে হারিয়ে গিয়ে যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হলো

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের অফিস এখানেই অবস্থিত। জাদুঘর প্রাঙ্গণের কাছেই আছে একটি দৃষ্টিনন্দন লেক। যেখানে আছে নৌকায় চড়া ও মাছ ধরার সুবিধা।

এর পাশাপাশি আরও আছে কারুশিল্পীদের একটি গ্রাম, ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের নমুনা, রেস্টুরেন্ট ও হস্তশিল্পের দোকান।

এছাড়া দর্শনার্থীরা নিকটবর্তী প্রাচীন আমলের পুরনো শহর পানাম নগর ও সালতানাত আমলের গোলাদিয়া মসজিদ দেখতে যেতে পারেন। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের রয়েছে একটি লাইব্রেরি ও প্রদর্শনী কেন্দ্র।

আরও পড়ুন: ত্রিপুরা ভ্রমণে কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন-খাবেন?

সোনারগাঁও কিভাবে যেতে হয়

ঢাকা থেকে একটি প্রাইভেট কার/মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে সারাদিন সোনারগাঁয় কাটিয়ে বিকেলে ফিরে যেতে পারে। যদি তা না পারেন তাহলে গুলিস্তান, শাহবাগ কিংবা মতিঝিল থেকে বাসে চড়েও যেতে পারেন।

মহাস্থানগড় ভ্রমণ গাইড

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়া-রংপুর সড়কের কাছাকাছি করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত মহাস্থানগড় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক স্থান ও অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। মৌড়, গুপ্ত ও সেন রাজবংশের শাসনামলে এটি রাজধানী ছিলো।

মহাস্থানগড়ে আছে বাংলাদেশের প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্মৃতিচিহ্ন যা নির্মিত হয়েছিলো খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালে। এখানে আপনি আরও দেখতে পাবেন গোবিন্দ ভিটা মন্দির, মানকালির কুন্ড, পরশুরাম প্রাসাদ, জিয়াত কুন্ড প্রভৃতি ঐতিহাসিক স্থান। হিন্দু সম্প্রদায় এখনো এগুলোকে পবিত্র স্থান হিসেবে উপাসনা করে।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন বলধা গার্ডেনে

প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গোটা মহাস্থানগড় জুড়ে। যদি মহাস্থানগড় জাদুঘরে যান তাহলে দেখতে পাবেন টেরাকোটার তৈরি হিন্দু ভাস্কর্য, সোনার গহনা, স্বর্ণমুদ্রা প্রভৃতি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। ভ্রমণের পাশাপশি বগুড়ার বিখ্যাত দই দিয়ে রসনাতৃপ্তি মেটাতে পারেন।

মহাস্থানগড় যাওয়ার উপায়, খরচ

বাস কিংবা ট্রেন যে কোনোটিতেই চড়ে আপনি বগুড়ায় যেতে পারেন। লালমনি এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা-বগুড়া রুটে চলাচল করে।

আর যদি বাসে যেতে চান তাহলে শ্যামলী পরিবহন, এসআর ট্রাভেলস, আলহামরা পরিবহন, নাবিল পরিবহন, ডিপজল এন্টারপ্রাইজ, মানিক এক্সপ্রেস প্রভৃতি থেকে একটিকে বেছে নিতে পারেন।

এছাড়া ঢাকা-রংপুর কিংবা ঢাকা-দিনাজপুর রুটের বাসে চড়েও বগুড়ায় নেমে যেতে পারেন। বগুড়ায় আরামদায়ক বসবাসের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল।

এর পাশাপাশি আছে হোটেল আল আমিন, হোটেল আকবরিয়া, হোটেল আমজাদিয়া, আজাদ গেস্ট হাউস, হোটেল পার্ক, হোটেল সানভিউ প্রভৃতি কম বাজেটের হোটেল ।

জেএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।