পাহাড়ের দৃষ্টিনন্দন বাড়ি দেখতে পর্যটকদের ভিড়
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন বাড়ি এখন অনেকটা পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শখের বসে নির্মাণ করা এই বাড়ি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন মানুষ।
শুধু শৈল্পিক বাড়ি নয়, আশপাশের সবুজ শ্যামল দৃশ্য, ফল-ফুলের বাগান আর পাখ-পাখালির কিচির মিচির শব্দ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। কারো মন খারাপ থাকলে এখানে গেলে মন ভালো হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ বাড়ি
বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে করেরহাট ইউনিয়নের কয়লায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়ি জনপদে এই বাড়ি অবস্থিত।
ওই এলাকার বাসিন্দা কানাডা প্রবাসী ও ব্যবসায়ী আফছার হোসেন চৌধুরী শখের বসে গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। প্রতিনিয়তই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে বাড়িটিকে দেখতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিরসরাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কয়লার পশ্চিম সোনাই গ্রামের মৃত সিরাজুল হক চৌধুরীর ছোট ছেলে কানাডা প্রবাসী ও ব্যবসায়ী আফছার হোসেন চৌধুরী ৬ বছর আগে ২’শ শতক জায়গার উপর শখের বসে তৈরি করেছেন একটি দৃষ্টিনন্দন বাড়ি।
আরও পড়ুন: কম খরচে দার্জিলিং ভ্রমণে কী করণীয়?
পাহাড়ি জনপদে নান্দনিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই বাড়ির নির্মানের পাশাপাশি শখের বসে পালন করছেন টার্কি মুরগিও। যা ভ্রমণপিপাসু মানুষদের মনকে আকৃষ্ট করে তোলে।
মুরগিগুলো পালন করার জন্য বাড়ির ভেতর বিভিন্ন আকৃতির ঘর ও খাঁচা তৈরি করেন। মাঝেমধ্যে টার্কিগুলো বিকট শব্দে ডেকে উঠছে। সাদা ও কালো দুই রঙের টার্কি দেখা গেল।
পুরুষ টার্কিগুলোর ঠোঁটের নিচে লাল রঙের লম্বা শূরের মতো ঝুলে আছে। পুরুষ টার্কিগুলো মাঝে মধ্যে পেখম মেলে স্ত্রী টার্কিগুলোর সঙ্গে খুনসুঁটিতে মেতে উঠছে। শুধু টার্কি মুরগী নয়, হাঁস ও ছাগলের খামারও আছে তার বাড়ির আঙিনায়।
আরও পড়ুন: মালদ্বীপ ভ্রমণে যা করা নিষিদ্ধ
বাড়ির চারপাশে কমলা গাছ, পেয়ারা গাছ, কলা, কাঁঠাল, আম, জাম, পেঁপে, বেল, স্ট্রবেরি, জাম্বুরা, আমলকি, জলপাই, ডালিম, আঁতাপল, লেবু, কাগজিসহ শতাধিক প্রজাতির ফলের চারা লাগানো হয়েছে। এছাড়া দৃষ্টিনন্দন এ বাড়িতে আছে প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রজাতির ফুল গাছ।
এর মধ্যে গাঁদা, গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশন, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যামেলিয়া, স্যালভিয়া, জারবেরা, এজালিয়া, কাঞ্চন (সাদা), জবা, কামিনী, অলকানন্দা বা অ্যালামন্ডা, জয়তী বা জ্যাট্রোফা, হাজারপুটিয়া, নয়নতারাসহ অর্ধ শতাধিক প্রজাতির ফুলের চারা লাগান।
পাশাপাশি বাড়ির ভেতরে শখের বসে একটি সবজি বাগান করেছেন। এখানে শিম, ঢেঁড়স, আঁকড়ি, ধনিয়াপাতা, টমেটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, কাঁচা মরিচ, শসা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: বিশ্বের যে ৮ দেশে এখনো রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই
বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে ৩টি পুকুর খনন করে হাঁস পালনের ঘর ও এগুলোর মধ্যে কই, মাগুর, শিং, রুই, পাবদা, কাতল, মৃগেল, তেলাপিয়া, শোলমাছ, কার্পসহ অনেক প্রজাতির মাছ চাষ করা হচ্ছে। আছে দুই শতাধিক হাঁস পালনের খামার, ছাগলের খামার ও গরুর ফার্ম।
অসাধারণ কারুকাজে নির্মিত বাড়ির ভেতরের অংশও দেখার মতো। বাড়ির দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন। সেখানে বিভিন্ন ধরনের বই, উপন্যাস, গল্পের বইয়ের সমাহার।
এই বাড়িতে বেড়াতে দুবাই প্রবাসী মোরশেদ আজম, শরীফুল ইসলাম খোকন ও তরুণ ব্যবসায়ী আশরাফুল আহসান রাকিব জানান, গ্রামীণ পাহাড়ি জনপদে এমন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি আর চোখে পড়েনি।
আরও পড়ুন: সিলেট ভ্রমণে ঘুরে আসুন লাল শাপলার লেকে
আমরা বিদেশে অনেক বাড়ি দেখেছি। কিন্তু ফুলে, ফলে, পশু-পাখির কলরবে মুগ্ধ করার মতো বাড়ি চোখে পড়েনি। এক কথায় অতুলনীয়। আমরা যখন দেশে এসে এখানে ছুটে আসি। এখানে আসলে সব ক্লান্তি যেন নিমষেই দুর হয়ে যায়।
এ বিষয়ে আফছার চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিদেশে থাকি, ঢাকায় বাড়ি আছে। তবে সর্বশেষ ঠিকানা আমার গ্রাম, জন্মস্থান। বিষয়টি উপলব্ধি করে আমি বাড়ি নির্মাণ করেছি।
দুই বছর আগে শখের বসে বাড়িটি নির্মাণ করায় পাহাড়ের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটে আসে বাড়িটিকে একনজর দেখার জন্য।
আরও পড়ুন: ডোমখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়
সব শ্রেণিপেশার মানুষের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত করা হয়েছে। যাতে মানুষ এখানে এসে কোলাহলময় জীবনে প্রবেশ করে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসার পাশাপাশি এলাকার মানুষের সেবা করতে যখন সময় পাই তখনই ছুটে আসি নিজের হাতে গড়ে তোলা এই বাড়িতে।’
‘বাড়ির ভেতরে যে তালগাছগুলো আছে, সেই গাছে তালের পাতা দিয়ে সুন্দর করে তৈরি করা বাবুই পাখিদের বাঁধা বাসায় তাদের কিচিরমিচির শব্দে সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার।’
এম মাঈন উদ্দিন/জেএমএস/জিকেএস