অবরোধের কারণে পর্যটকশূন্য মহামায়া

এম মাঈন উদ্দিন
এম মাঈন উদ্দিন এম মাঈন উদ্দিন , উপজেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০২৩

বিএনপি জামায়াতের ডাকে টানা তিনদিন অবরোধের কারণে পর্যটকশুন্য হয়ে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া ইকোপার্ক।

যে সময়ে পার্কটি পর্যটকদের পদচারনায় মুখর থাকার কথা ঠিক সে সময়ে শুনশান নিরব আছে। পর্যটকদের ঘিরে গড়ে ওঠা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। কয়েকটি খোলা থাকলেও বেচাকেনা নেই বললেই চলে।

আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড় 

বুধবার (১ নভেম্বর) দুপুরে মহামায়া ইকোপার্ক এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সম্পন্ন ভিন্ন চিত্র। ঠাকুরদীঘি থেকে মহামায়ায় যাওয়ার সড়কে গাড়ির জন্য হাঁটা দায় ছিল।

jagonews24

এখন সে সড়কে ৩০ মিনিটেও কোনো গাড়ির দেখা মেলেনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় আছে এই সড়কে চলাচল করা সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকেরা। হোটেলসহ বিভিন্ন দোকানে মানুষ দেখা যায়নি।

অথচ এখানে সব সময় মানুষের জটলা লেগে থাকে অন্যান্য সময়। পার্কের মূল গেইটের বাইরে গাড়ি পার্কিংয়ে শতাধিক বাস, মাইক্রো, প্রাইভেটকার থাকে সবসময়, অথচ পার্কিংয়ে একটি গাড়িও চোখে পড়েনি।

আরও পড়ুন: কম খরচে হানিমুন সারতে কোথায় যাবেন? 

টিকিট কাউন্টারে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠানের লোকজন। লেকের পাড়ও জনমানব শুন্য। লেকের পানিতে চলাচলা করা ইঞ্জিন চালিত নৌকা, কায়াকিং বোট সব বন্ধ রয়েছে।

jagonews24

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনভিভাগ ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জন্য মহামায়া ইকোপার্ক ১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছে। ইজারা পেয়েছেন এ.আর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০০-৪০০ পর্যটক পার্কে আসেন।

ছুটির দিনে কোন কোন সময় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার পর্যটকও প্রবেশ করে থাকেন। অবরোধের প্রথম দিন মাত্র ৬৪ জন পর্যটক টিকেট নিয়েছেন। দ্বিতীয় দিন দুপুর ১টা পর্যন্ত ৬০ জন ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রতি টিকেট ৩০ টাকা বিক্রি করা হয়।

আরও পড়ুন: যে দেশের নারীরা স্বামীর অবর্তমানে নারীকেই বিয়ে করেন 

আবছার হোটেলের মালিক নুরুল আবছার বলেন, করোনার পর এই প্রথম গত দুইদিন পর্যটক নেই বললে চলে। বেচাকেনা একেবারে কম। অনেকে কাস্টমার না থাকায় দোকান খুলেনি। আমি খুললেও সকাল থেকে ৫০০ টাকাও বিক্রি করতে পারিনি।

মান্নান স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী খায়েজ আহম্মদ বলেন, ‘কালও (মঙ্গলবার) বেচাকেনা ছিল না, আজও নেই। বাড়িতে বসে থেকে কী করবো? তাই দোকান খুলে বসে বসে মোবাইল দেখছি।’

jagonews24

মহামায়ার প্রবেশমুখে সড়কে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় এই রুটেও চলাচল নেই। এক ঘণ্টা বসে থাকার পরও যাত্রী পাচ্ছি না। অথচ প্রতি ৫-১০ মিনিটের মধ্যে একটি গাড়ি চলতো। আশা করি অবরোধ শেষ হলে আগের অবস্থা ফিরে আসবে।’

আরও পড়ুন: একদিনের ট্যুরে কুমিল্লায় গিয়ে কী কী দেখবেন? 

ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালক কামরুল হোসেন বলেন, ‘লেকে ভ্রমনের জন্য এখানে ৪০টি ছোট বড় নৌকা রয়েছে। আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র একটি ছোট নৌকা পর্যটক নিয়ে ঘুরতে গেছে। গতকালও একই অবস্থা ছিল। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।’

কায়াকিং বোট এর দায়িত্বে থাকা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘সব কায়াকিং বোট পাড়ে বেধে রেখেছি। যারা এই বোটে ঘুরে বেড়ায় সবাই বাইরের পর্যটক। অবরোধের কারণে পর্যটকরা আসতে পারছেনা। সকাল থেকে একটি বোটও ভাড়া হয়নি।’

কাটাছরা থেকে ঘুরতে আসা কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান বাদশা বলেন, ‘আমার এক বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে এলাম। এর আগে অনেকবার এসেছি, কিন্তু এমন অবস্থা কখনো দেখিনি। একেবারে নিরব অবস্থা। কোথাও বেড়াতে গেলে মানুষজন না থাকলেও ভালো লাগে না।’

jagonews24

আরও পড়ুন: যে দেশের রাস্তায় নেই ট্রাফিক সিগনাল, তবুও হয় না যানজট 

মহামায়া হান্ডি রেস্টুরেন্টের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘অবরোধের কারণে গত দুইদিন একেবারে বেচাকেনা হয়নি। রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলে খরচ, কিন্তু বেচাকেনা না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

মহামায়া ইকোপার্ক ইজারা পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ.আর এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা মো. জাহেদ হোসেন বলেন, ‘অবরোধের কারণে পর্যটক একেবারে কমে গেছে। মঙ্গলবার সারাদিনে মাত্র ৬৪টি টিকেট বিক্রি হয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৬০টি টিকেট বিক্রি হয়।’

jagonews24

‘পার্কিংয়ে একটি টিকেটও বিক্রি হয়নি দুদিনে। এভাবে চলতে থাকলে লোকসানে পড়তে হবে। তিনি আরো বলেন, এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন বেড়াতে আসেন। কিন্তু অবরোধে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় আসতে পারছে না। অবরোধ যদি আরো বাড়ানো হয় তাহলে ব্যবসার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন: চীনের নিষিদ্ধ শহরে যা দেখে চোখ হবে ছানাবড়া 

মহামায়া ইকোপার্ক ইজারা পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ.আর এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি জামায়াতের অবরোধের প্রভাব দেশের পর্যটন শিল্পেও পড়েছে। এখন ভরা মৌসুম মানুষ বিনোদনের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসবে।’

‘অথচ গত দুইদিনে মাত্র ১২০-১৩০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। আমাদের প্রতিদিন সবকিছু থেকে ৫০ হাজার টাকা কালেকশান করতে হবে। অথচ গত দুইদিনে ১০-১২ হাজার টাকা কালেনশান হয়েছে।’

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।