ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে দেবতাখুম ভ্রমণ

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৩

চারদিকে সবার ঘোরাঘুরির ছবি, তা দেখে মনটাও ভালো না। মনকে ভীষণ হালকা করতে ইচ্ছে করছিল। কোথাও গিয়ে মনের সব না পাওয়া ঝেড়ে ফেলা দরকার। যেখানে থাকবে শান্ত প্রকৃতির জল, থাকবে না মোবাইলের ব্যস্ততা। আর যদি সেটা হয় কম খরচে তা হলে তো কোনো কথাই নেই।

ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে গেলে নাকি খরচ, দিকনির্দেশনা সবদিক থেকেই সুবিধা। বন্ধুর বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির থেকে ভ্রমণের টিকেট কেটে ফেলি। গন্তব্য বান্দরবনের রোয়াংছড়ি উপজেলার গহীন অরণ্য দেবতাখুম।

jagonews24

আরও পড়ুন: কম খরচে ভারত ভ্রমণে ঘুরে আসুন ত্রিপুরা রাজ্যে 

১৩ অক্টোবর রাত ১১টা। মতিঝিলের আরামবাগ থেকে বাসে চরে সকাল ৭টায় বান্দরবান পৌঁছাই। নামার পর দেখি আমাদের জন্য আরেকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। সারাদিনের জন্য যাওয়া-আসাসহ রিজার্ভ করে রেখেছে এজেন্সি।

বান্দরবান থেকে দেবতাখুম যেতে হলে প্রথমে রোয়াংছড়ি থানায় যেতে হবে। সেখানে গিয়ে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে। এরপর রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্পে।

jagonews24

সেখান থেকে আবার আর্মির অনুমতি নিতে হবে। তবে গাইড এসব কাজ তাড়াতাড়ি সেরে ফেলে। বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ির দূরত্ব ২০ কিলোমিটার ও রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী ৫-৬ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন: যে দেশের রাস্তায় নেই ট্রাফিক সিগনাল, তবুও হয় না যানজট 

আর্মি ক্যাম্পের অনুমতির পর শুরু হয় দেবতাখুমের উদ্দেশে যাত্রা। আমাদের ঘণ্টা দেড়েকের মতো সময় লাগে কচ্ছপতলী থেকে দেবতাখুম পৌঁছাতে। পাহাড়, বন ও ঝিরির পাশ দিয়ে যাওয়ার মুহূর্তগুলো মনে দাগ কেটে গেছে।

jagonews24

ঝিরি পার হয়েছি কয়েকবার। কখনো চড়াই বেয়ে উঠে উতরাই বেয়ে নামছি। তারপর আমরা পৌঁছে যাই শীলবান্ধা পাড়ায়। এখান থেকে নৌকা ঘাটের টিকিট কাউন্টার চোখে পড়ল।

হেঁটে নৌকা ঘাট যেতে সময় লাগল সাত মিনিট। তবে কেউ যদি শিলবান্ধার আশপাশে ঘুরতে চান তাহলে ছোট বড় মিলে ৫-৬টা ঝরনা চোখে পড়বে। দেবতাখুমের ভেতরে ঘুরে দেখার জন্য নৌকা ও ভেলার ব্যবস্থা আছে।

আরও পড়ুন: একদিনেই ঘুরে আসুন বাঁশবাড়িয়া বিলাসী ঝরনায় 

প্রতিটি ভেলায় একজন ও নৌকায় দশজন উঠা যায়। লাইফ জ্যাকেটের সুবিধাও পাওয়া যায়। দেবতাখুম ৫০ ফুট গভীর ও লম্বায় ৬০০ ফুট। দেবতাখুমে যাওয়ার শেষের দিকে রাস্তা খুব বিপজ্জনক।

jagonews24

শেওলা ভরা খাড়া পাথর দিয়ে গাছের শিকড় ধরে প্রায় ঝুলে ঝুলে যেতে হয়। হাত ফসকে পড়ে গেলে সাঁতার না জানলে গভীর জলে ডুবে বা পাথরে মাথা ফেটে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।

তবে আমার কাছে পাহাড়ে ভ্রমণ সব সময়ই রোমাঞ্চকর। আর সেটা যদি পাহাড়ি ঝিরিপথে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে হয়, তবে নিঃসন্দেহে পাওয়া যাবে এক পরশ শান্তি। তখন মনের যত দুঃখ-কষ্টই থাকুক চাঁপা পড়বে প্রকৃতির মাঝে।

আরও পড়ুন: বান্দরবান ভ্রমণে ঘুরে দেখবেন যেসব স্পট 

jagonews24

তবে ভরা বর্ষায় ঝিরি ও খুমে অতিরিক্ত পানি বেড়ে গেলে আর্মিরা তখন দেবতাখুম যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেনা।

এদিকে শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত পানি খুব কমে থাকায় তখনকার পরিবেশ ভালো নাও লাগতে পারে। তাই জুন থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেবতাখুম যাওয়ার উপযুক্ত সময়।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।