নাপিত্তাছড়া ঝরনায় কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন ও খাবেন?
পাহাড়ি ঝরনার নগরী চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার অন্যতম নাপিত্তাছড়া ঝরনা। এই ঝরনার বৈশিষ্ট অন্য ঝরনা থেকে আলাদা। সৌন্দর্যের দিক থেকে এক কথায় অসাধারণ।
আঁকাবাঁকা মেঠো পথ মাড়িয়ে ঝরনায় একটু গা ভেজাতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছেন শত শত ভ্রমণপিপাসু মানুষ। ছুটির দিনে বহুগুণ বেড়ে যায় পর্যটক।
আরও পড়ুন: কুয়াকাটা ট্যুরে কোন কোন স্পট ঘুরে দেখবেন?
এখানে আরো ৪টি শাখা ঝরনা আছে। টিপরাখুম ঝরনা, কুপিটাকুম ঝরনা, মিঠাছড়ি ঝরনা ও বান্দরখুম ঝরনা। প্রথমে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ও প্রচণ্ড গরম পর্যটকদের কিছুটা ক্লান্ত করলেও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখে সেই ক্লান্তি সহজে ভুলে যাবেন যে কেউ।
বড় বড় পাথর আর পানির সঙ্গে আছে পাহাড়ের বিশাল বিশাল খাদ। দু’পাশে পাহাড় আর মাঝখানে সরু রাস্তা। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে এ পথে যাওয়ার সময়। তবে ঝরনায় যাওয়ার এ রাস্তাটির প্রতিটি অংশই অদ্ভুত সুন্দর।
অর্ধেক অংশ পার হওয়ার পর দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে পানি পড়ে। নিজের চোখে না দেখলে দৃশ্যটি সত্যি বলে বোঝানোর মতো নয়। বিশেষ করে বর্ষার সময় এ ঝরনাটি খুব সুন্দর দেখায়।
আরও পড়ুন: দিনাজপুর ভ্রমণে ঘুরে আসুন ‘৬ সাগরে’
ঝরনায় যাওয়ার ঝিরিপথটা অনেক সুন্দর। এই ঝরনাগুলো দেখতে বর্ষার সময় আসাটাই সবচেয়ে ভালো সময়, তাহলে ঝরনার সর্বোচ্চ রূপ উপভোগ করতে পারবেন। নাপিত্তছড়া একটি ঝিরি ঝরনা। কিছুটা হাঁটার অভ্যাস থাকলে যে কেউ একদিনে এসে ঘুরে যেতে পারেন।
গাইড নিয়ে যাওয়া জরুরি। কারণ নতুনদের জন্য অচেনা পথ। আর কোন স্থান দুর্ঘটনা প্রবণ সেটা গাইড জানিয়ে দেবে। ঝরনার গেইটে গাইড আছে। সামান্য টাকার জন্য গাইড নিতে ভুল করবে না।
স্থানীয় গাইড আপনাকে সব ধরনের নির্দেশনা দেবে। তবে খুব বেশি ভারি বর্ষণ হলে এই ঝরনায় না যাওয়া উত্তম। কারণ পাহাড়ি ঢলের স্রোত খুবই তীব্র আকার ধারণ করে। এক বছর পূর্বে ইজারাদারের লোকজনের কথা অমান্য করে ঝরনায় গিয়ে প্রাণ হারান দুই ভাই সহ তিনজন।
আরও পড়ুন: কাশফুল দেখতে ঘুরে আসুন বৃন্দাবনে
কথা হয় ঢাকা থেকে আসা সিডিএম বাসের চালক নুরুল হুদার সাথে। তিনি বলেন, মাসে কয়েকবার মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ঝরনায় আসা লোকজনকে নিয়ে আসেন। রাতুল নামে একজন এই বাস রিজার্ভ করেছেন। ঝরনা থেকে তারা সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত দেখতে যাবেন। এরপর আবার ঢাকায় চলে যাবেন।
নয়দুয়ারিয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে বেশ কয়েকটি বাস, মাইক্রো, প্রাইভেটকার দাঁড়িয়ে আছে। এ যানযাহনে আসা সব মানুষের গন্তব্য নাপিত্তাছড়া ঝরনা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস রিজার্ভ করে এখানে এসেছে ঝরনা দেখতে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা আট বন্ধুর একটি দলের সাথে কথা হয়। তারা সবাই একেখান থেকে লোকাল বাসে এসেছেন। ওই দলের শিহাব, নাজমুল, শান্ত, নজরুল, ইকবাল বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা মিলে কয়েকদিন আগে প্ল্যান করে এখানে এসেছি। নাপিত্তাছড়া ঝরনা অনেক সুন্দর। অন্য ঝরনা চেয়ে আলাদা।’
আরও পড়ুন: পৃথিবীর মাঝে ভিনগ্রহের দ্বীপ ‘সকোত্রা’
ঝরনায় গোসল করে অনেক ভালো লাগছে। তাঁরা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘অনেকে প্লাষ্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেটসহ নানা ধরনের বর্জ্য ছড়ার পানিতে ফেলে দেয়। এতে পরিবেশ নষ্ট হয়। মানুষদের সচেতন হওয়া উচিত এসব বিষয়ে। তবে ইজারাদারদের কিছু দায়িত্বে আছে।’
কীভাবে যাবেন?
দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে মিরসরাই উপজেলার নয়াদুয়ারি বাজারে নামতে হবে। এরপর সিএনজি অথবা রিকশা যোগে রেললাইন পর্যন্ত যাওয়া যাবে। তারপর পায়ে হেঁটে ঝরনায় যেতে হবে।
কোথায় থাকবেন?
মিরসরাইয়ে এখনো আবাসিক হোটেল বা রিসোর্ট গড়ে ওঠেনি। সীতাকুণ্ডে থাকার হোটেল আছে। তবে ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে ঝরনা এলাকা থেকে ৫০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরের এ.কে খান অথবা অলংকার চলে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: শুধু বর্ষা নয়, শরতের টাঙ্গুয়ার হাওর একটু বেশিই সুন্দর
খাবেন কোথায়?
ট্রেইলে যাওয়ার পথে একটা ছোট হোটেল আছে। সেখানে যাওয়ার আগে কী খাবেন তার অর্ডার দিয়ে যেতে হবে। তাহলে রান্না করে রাখবে, ফিরে এসে খেতে পারবেন।
এছাড়া ভালো মানের খাবার খেতে চাইলে কমলদহ ড্রাইভার হোটেল, মিরসরাই সদর ও সীতাকুণ্ডে ভালো মানের খাবার হোটেল আছে।
জেএমএস/জিকেএস