ডোমখালী সমুদ্রসৈকত যেন চট্টগ্রামের সুন্দরবন

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ডোমখালী উপকূলীয় বনাঞ্চল ও সমুদ্রসৈকত। সবুজের সমারোহ মিলে এক অপার সৌন্দর্যের নীলাভূমি। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষার জন্য’ ৮০ এর দশকে সাগরের কোলজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে হাজার হাজার একর ম্যানগ্রোভ বন।

এখানে আছে কেওড়া, বাইন, গড়ান, গেওয়া, সুন্দরীসহ নানা জাতের বৃক্ষ। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। বাঁধের উত্তর ও পশ্চিমে বয়ে চলা দৃষ্টিনন্দন সমুদ্রসৈকত।

jagonews24

আরও পড়ুন: এ সময় শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে কী দেখবেন, কোথায় থাকবেন? 

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা পশ্চিম দক্ষিণে অবস্থিত ডোমখালী সমুদ্রসৈকতে বেড়িবাঁধ সড়কে চোখে পড়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুদের ঢল। শোনা যায়, সমুদ্রের গর্জন, বনের মধ্যে পাখিদের কলকাকলীর শব্দ। দক্ষিণা নির্মল বাতাসে শীতল করে ক্লান্ত শরীর।

স্থানীয় নুরুল আনোয়ার জানান, খুব ভোরে ও সন্ধ্যাবেলায় ঘাস, লতাপাতা খাওয়ার জন্য বনভূমির বাইরে চরাঞ্চলে চলে আসে হরিণের দল। এছাড়া দিনের বেলায়ও বনের ভেতর প্রবেশ করলে হরিণের আনাগোনা লক্ষ করা যায়।

বনের মধ্যে খাবারের খোঁজে সারা দিন দল বেঁধে ছুটে বেড়ায় মহিষের পাল। ওই অঞ্চলের অনেক মানুষ বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/2-20230912123814.jpg

আরও পড়ুন: কম খরচে কীভাবে ঘুরবেন পান্থুমাই জলপ্রপাতে? 

বনের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় দেখা যায়, কিছুদূর পর পর সাগরের সঙ্গে মিশে যাওয়া ছোট ছোট খালের অবিরাম বয়ে চলা। এ খালগুলো দিয়ে ভরা মৌসুমে জোয়ারের পানি বাঁধের কিনারে চলে আসে।

বনের শেষ প্রান্তে দেখা যায়, কাঁদামাটিতে ছোট ছোট গর্তে লাল কাঁকড়া ও সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ মাথা তুলে বসে থাকা ও ছোটাছুটি করার অপরূপ দৃশ্য। মানুষের আনাগোনার শব্দ পেলেই পালিয়ে যায়।

সমুদ্র তীরে আছে চিংড়ি ঘের ও মাছ চাষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের কারণে ৪ কিলোমিটারের মতো নতুন চর জেগে উঠেছে। তাই ভ্রমণপিপাসুরা খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারেন সাগরের নৈসর্গিক দৃশ্য।

আরও পড়ুন: খাগড়াছড়ি ভ্রমণে ঘুরে আসুন ‘মানিকছড়ি ডিসি পার্কে’ 

বিকেলের সময়টাতে নানা বয়সের মানুষের আগমনে ভিড় জমে সাগরপাড়ে। সমুদ্রের পানির ছোঁয়া দূর করে তাদের মনের ক্লান্তি। ঘাটে বাঁধা থাকে বাহারি রঙের ডিঙি নৌকা। জেলেরা মাছের জাল তুলতে সাগরে ছুটে চলেন।

কেউ আবার সমুদ্রের নানা প্রজাতির তাজা মাছ নিয়ে ঘাটে নৌকা ভেড়ান। এই মাছ বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। অনেক নৌকা ভ্রমণপ্রেমিক জেলে নৌকা নিয়ে পাড়ি দেন সাগরের মোহনায়।

জেলেপল্লির পরিবারের বড়দের সঙ্গে ছোটরাও মাছ ধরতে সাগরে যায়। দুষ্ট ছেলেরা সাগরের পানিতে লাফালাফি করে। বিকেলে সমুদ্রের পাড় থেকে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য অবলোকনের মাধ্যমে সমুদ্রের সৌন্দর্যের তৃষ্ণা মেটান ভ্রমণপিপাসুরা।

jagonews24

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডে অপরূপ ‘৯৯৯’ খেজুর বাগানে 

যদিও অনেক ভ্রমণকারী চান রাত যাপন করতে। কিন্তু ভালো খাবারের হোটেল এবং আবাসিক হোটেল না থাকায় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেনের ভাষ্য, ‘এ যেন সুন্দরবনেরই প্রতিছবি।’ তবে এখানে যাতায়াত সুবিধা এবং ভালো মানের খাবার হোটেল নেই। এসব নিশ্চিত করলে আরও পর্যটক বাড়বে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, মিরসরাই পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এলাকা। একদিকে পাহাড়ি ঝরনা অন্যদিকে সমুদ্রসৈকত মিরসরাইকে অপূর্ব রূপে সাজিয়েছে। পর্যটন স্পট ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি প্রকাশনার কাজ চলছে।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।