ঢাকার প্রাচীন যত দর্শনীয় স্থান

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ২৫ মে ২০২৩

ঢাকা প্রাচীনতম একটি শহর। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম রাজধানী ছিল এটি। প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস এখানে। পর্যটকরা যদি এদেশে আসেন, তাহলে ঢাকা শহরের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু দেখে বিস্মিত হবেন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, আর্মেনিয়ান চার্চ, চন্দ্রিমা উদ্যান , হাতিরঝিল, রমনা পার্ক ইত্যাদি যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এটি পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ শহরও বটে। প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহরে ঘুরে দেখবেন যত প্রাচীন দর্শনীয় স্থান-

jagonews24

আরও পড়ুন: প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসুন ঢাকার আশপাশে 

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ (রায়ের বাজার বধ্যভূমি)। এটি কিংবদন্তি স্থপতি ফরিদ আহমেদ ও জামি আল শাফি দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল।

২৫ মার্চ ও ১৪ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি আর্মিরা দেশকে পঙ্গু করতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিদের হত্যা করে। এতে দেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায় তা কখনো ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।

jagonews24

শহীদদের মধ্যে কয়েকজন সম্মানিত ব্যক্তি হলেন- মুনীর চৌধুরী, মুফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, আলতাফ মাহমুদ, গোবিন্দ চন্দ্র দেবসহ অনেকে।

আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন বালু নদে 

এই স্থান অবশ্যই আপনাকে একটি আশ্চর্যজনক অনুভূতি দেবে। মোহাম্মদপুর থানার রায়ের বাজারে এটি অবস্থিত।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। ১৯৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।

jagonews24

তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়।

মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। জাতীয় এই মসজিদের পরিচিতি বিশ্বজুড়ে।

কার্জন হল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লর্ড কার্জন হল ব্রিটিশ আমলের অন্যতম সেরা স্থাপত্য ভবন। এটি ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরের বছর পূর্ব বাংলা ও আসামের সাথে বাংলা ভাগ হয়। এরপর ঢাকাকে রাজধানী ঘোষণা করা হয়। ১৯১১ সাল থেকে কার্জন হল ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

jagonews24

আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন বাঁশ-কাঠের তৈরি ‘রূপগাঁও রিসোর্টে’ 

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হলে ও এটি বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ভবনে পরিণত হয়। কার্জন হলের স্থাপত্য সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। হলটি একটি সুন্দর বাগান দিয়ে ঘেরা। এতে একটি বড় কেন্দ্রীয় হল আছে, যা একাডেমিক সম্মেলন বা এসব সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়।

একই সময়ে, এটির পশ্চিমে আরও কিছু কক্ষ ও পূর্বদিকে পার্শ্বীয় ডানা আছে। কার্জন হলের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অংশ হলো ভবনের সব পাশে একটি অবিচ্ছিন্ন বারান্দা। আপনি যে কোনো সময় এখানে যেতে পারেন ও সবুজ বাগানে বসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

ঢাকেশ্বরী মন্দির

ঢাকেশ্বরী মন্দির হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। এটি বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানও বটে। সাধারণত ঢাকেশ্বরী হিন্দু সম্প্রদায়ের মতে ‘ঢাকার দেবী’ বোঝায়। এটি আজিমপুর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী সড়কে অবস্থিত।

jagonews24

আরও পড়ুন: এক বিকেলে ঘুরে আসুন ঢাকার কাছের সারিঘাট 

এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের জন্যে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান। ধারণা করা হয়, বল্লাল সেন এটি নির্মাণ শুরু করেছিলেন। এটি তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন। এই প্রাচীন মন্দিরের সৌন্দর্য দেখার জন্য দূরদুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

জাতীয় জাদুঘর যুগে যুগে বাংলাদেশের বেড়ে ওঠার সব স্মৃতি ধরে রেখেছে। ১৯১৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে ঢাকা জাদুঘর হিসেবে আজকের জাতীয় জাদুঘর যাত্রা শুরু করে। এটি ১৯৮৩ সালে সংস্কার করা হয়েছিল। সর্ব সাধারণের প্রবেশযোগ্য একটি স্থান এটি।

jagonews24

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর। এখানে ৪৬টি গ্যালারি আছে যেখানে ৮৩ হাজার মনুমেন্ট ও আইডিওগ্রাফ আছে। এতে বিভিন্ন সময়ের ভাস্কর্য ও চিত্রকর্মের সমৃদ্ধ সংগ্রহ আছে।

আরও পড়ুন: গোলাপ গ্রামে কীভাবে যাবেন ও কী দেখবেন? 

এছাড়া পুরোনো মুদ্রার সংগ্রহ, ধাতব ছবি, শিল্পের বই, সিলভার ফিলিগ্রি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। এটি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে। ছুটির দিনে যেমন ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) সহ বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ছুটির দিনগুলোতেও জাতীয় জাদুঘর খোলা রাখা হয়।

জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন

বাংলাদেশের জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ২০৫ একর জমি নিয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানার পাশে অবস্থিত। এটি ১৯৬১ সালে প্রকৃতি ও গাছপালা সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম উদ্ভিদ সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি।

এটি বৈচিত্র্যময় বোটানিক্যাল সমৃদ্ধির একটি মহান স্থান। তাছাড়া ৫০ হাজার গাছপালা ও ১২০০ প্রজাতির গাছ বাগানটিকে বিশ্বের মধ্যে অসামান্য করে তুলেছে।

এই বোটানিক্যাল গার্ডেনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হল গোলাপ বাগান। জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন সবার জন্য উন্মুক্ত। উল্লেখ্য এটি ঢাকা চিড়িয়াখানা সংলগ্ন পয়েন্ট।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন ঢাকার কাছেই ঐতিহাসিক ৪ স্থানে 

লালবাগের কেল্লা

লালবাগের কেল্লার নকশা করেন শাহ আজম। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব’র ৩য় পুত্র আজম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙগজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান।

jagonews24

ফলে একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়। নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে ঢাকায় এসে পুনরায় দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

তবে শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ দুর্গ অপয়া মনে করা হয় ও শায়েস্তা খান ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন।

এটি পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত। আর সে কারণেই এর নাম হয়েছে ‘লালবাগের কেল্লা’। বিশ্বজুড়ে আছে প্রাচীন এই লালবাগের খ্যাতি।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।