যে লেকের পানিতে মাছ নয়, ভেসে বেড়ায় কঙ্কাল

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০২২

লেকের পানিতে মাছ সাঁতার কাটার দৃশ্য কমবেশি সবাই দেখেছেন। তবে কখনো কি দেখেছেন কঙ্কাল ভেসে বেড়াচ্ছে লেকের জলে। এমনই এক দৃশ্য আপনি দেখতে পাবেন হিমালয়ের রূপকুন্ড হ্রদে। পাহাড়ের মাঝে লুকায়িত এই লেক।

অদ্ভূত এই লেকের রহস্য অনেকেরই জানা নেই! দীর্ঘদিন ধরে মানুষের হাড় ছড়িয়ে- ছিটিয়ে আছে এই লেকে। একে কঙ্কাল লেকও বলা হয়। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কঙ্কাল লেকের রহস্য-

রূপকুন্ড হলো ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে প্রায় ৫ হাজার ২৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি হিমবাহের হ্রদ। বরফ গলে গেলে সেখানে শত শত মানুষের কঙ্কাল পানিতে ভাসতে দেখা যায়। লেকটি প্রথম ১৯৪২ সালে একটি গেম রিজার্ভ রেঞ্জার দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল।

jagonews24

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, হিমবাহের হ্রদে পাওয়া এই কঙ্কালগুলো বোধ হয় জাপানি সৈন্যদের। পরে অবশ্য ব্রিটিশরা খোঁজ চালান কার কঙ্কাল তা খুঁজে বের করার জন্য। তদন্তের পরে দেখা গেল, মৃতদেহগুলো জাপানি সৈন্যদের নয়, বরং আরও পুরানো।

তাহলে এই হ্রদে কঙ্কালের রহস্য কী?

এর পেছনে অনেক গল্প শোনা যায়। রাজা-রানির গল্প শতবর্ষের। এই হ্রদের কাছে একটি নন্দা দেবীর মন্দির আছে। একবার রাজা-রানি মন্দির দেখার জন্য পাহাড়ে আরোহণের সিদ্ধান্ত নেন বলে ধারণা করা হয়।

তবে তিনি সেখানে একা না গিয়ে চাকরকে সঙ্গে নিয়ে যান। এসব দেখে দেবী রেগে গেলেন। তার ক্রোধ বজ্রপাত হয়ে পড়ায় সবার মৃত্যু ঘটে।

আবার শোনা যায়, হ্রদে ভেসে বেড়ানো নর কঙ্কালগুলো নাকি কোনো এক মহামারিতে মারা যাওয়া মানুষদের। যদিও কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন, এরা সবাই সেনাবাহিনীর লোক। যারা তুষার ঝড়ে পড়ে মারা যায়। বরফের পানি শত শত বছর ধরে তার শরীরকে রক্ষা করেছিল।

jagonews24

মজার বিষয় হলো, হ্রদটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই হিমায়িত থাকে। ঋতু অনুযায়ীও এই হ্রদের আয়তন কখনো কমে আবার কখনো বাড়ে। হ্রদের বরফ গলে গেলে এখানে উপস্থিত মানব কঙ্কাল সহজেই দৃশ্যমান হয়। তাদের একবার দেখলে মানুষ চমকে যেতে পারে।

শুধু তাই নয়, এই হ্রদ এতোটাই ভয়ংকর যে অনেক সময় কঙ্কালের বদলে পূর্ণাঙ্গ মানুষের অংশও পাওয়া যায়। সেগুলো দেখে মনে হয়, এতো বছর ধরে প্রকৃতিই হয়তো তাদের কঙ্কাল সংরক্ষণ করেছে। এ পর্যন্ত ৬০০-৮০০ মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে এই হ্রদে।

গবেষণা কি বলে?

এই রহস্য বের করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহুবার হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে করা একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, এই কঙ্কালগুলো শুধু ভারতের নয়, গ্রিস, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মানুষেরও।

নতুন এক গবেষণার দাবি, এসব কঙ্কাল বিভিন্ন প্রজাতির অন্তর্গত। এর মধ্যে আছে নারী-পুরুষ উভয়ের কঙ্কাল।

রূপকুন্ড দেখার সেরা সময়

মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে সেখানে বেড়াতে যাওয়া ভালো। মে মাসের শুরুতে বরফের উপর ট্রেকিং করা যায়। জুলাই ও আগস্টে সেখানে ভুলেও যাবেন না।

কারণ এ সময় সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অক্টোবরের পরে ঠান্ডার কারণে সাধারণত একা ট্রেক করার পরামর্শ দেওয়া হয় না। নভেম্বরের পরে, তুষারপাতের সম্ভাবনা থাকে।

jagonews24

রূপকুন্ডে কীভাবে যাবেন?

বাই রোডে সেখানে পৌঁছাতে প্রথমে যেতে হবে দিল্লি। তারপর সেখান থেকে দেবাল যেতে হবে। এরপর আবার ৩ দিনের ট্রেকিং করতে হবে সেখান থেকে। দিল্লি থেকে দেবালের দূরত্ব ৪৭৭ কিলোমিটার। সড়কপথে যেতে সময় লাগবে ১৩ ঘণ্টারও বেশি।

অন্যদিকে ট্রেনে যেতে হবে রূপকুন্ড লেকের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল ঋষিকেশে পৌঁছাতে হবে। ঋষিকেশ ও রূপকুন্ডের মধ্যে অনেক বাস ও ব্যক্তিগত ক্যাব চলাচল করে।

চাইলে রূপকুন্ডের ফ্লাইটও ধরতে পারেন। রূপকুন্ডের নিকটতম বিমানবন্দর হলো দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর। এয়ারপোর্ট থেকে আপনি বাস বা গাড়িতে করে দেওয়ালে যেতে পারেন। সেখান থেকে ট্রেক শুরু।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।