‘পাপের নগরী’ মুহূর্তেই যেভাবে তলিয়ে যায় সমুদ্রের অতলে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২২

বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ শহর হিসেবে এক সময় পরিচিত ছিল জামাইকার পোর্ট রয়্যাল। যত ধরনের কুকর্ম আছে সবই চলতো সেখানে। জলদস্যু, পতিতা ও ক্রীতদাসদের আস্তানা ছিল এই শহর। তবে হঠাৎ এক ভূমিকম্প ও বিরাট জলোচ্ছ্বাসে বিশ্বের নিকৃষ্টতম শহরটি ভূ-গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মারা যায় হাজার হাজার মানুষ।

ইতিহাসবিদদের মতে, পোর্ট রয়্যাল এমন একটি শহর ছিল যেখানে মদ, দাসত্ব ও পতিতাবৃত্তিতে আচ্ছন্ন ছিল। সেখানকার প্রতি ৪ ভবন অন্তর একটি করে বার ও পতিতালয় ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জুনের ১৬৯২ সালের ৭ জুন পাপের এই নগরী হঠাৎ কাঁপতে শুরু করে, এরপর বিরাট জলোচ্ছ্বাসে পুরো শহর চলে যায় সমুদ্রের অতলে।

অসংখ্যা মানুষ মারা যায় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে। যারা এই ঘটনায় বেঁচে গিয়েছিলেন পরবর্তী সময়ে তারাও কঠিন অসুখে ভুগে মারা যান। তবে কেন এমনটি ঘটেছিল তার কোনো কারণ আজও জানতে পারেননি ভূ-তত্ত্ববিদরা। অনেকেরই ধারণা, ঐশ্বরিক প্রতিশোধের কারণেই পাপের এই নগরী তলিয়ে যায় পানিতে।

যেভাবে প্রতিষ্ঠা পায় এই নগরী

জানা যায়, পোর্ট রয়েলের জলদস্যুদের স্প্যানিশ নৌবহরের বিরুদ্ধে নৌ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় হেনরি মরগান। ১৪৯৪-১৬৫৫ সাল পর্যন্ত, এটি একটি ছোট স্প্যানিশ বন্দর ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

১৬৫৫ সালে ইংরেজরা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ইংল্যান্ডের রাজার নামে, বুকানিয়াররা তাদের পছন্দ অনুসারে স্প্যানিশ জাহাজে হয়রানি ও চুরি করা শুরু করে। পোর্ট রয়্যাল এক সময় নামকরা সব জলদস্যু যেমন- ক্যাপ্টেন মরগান, অ্যান বনি, মেরি রিড, ক্যালিকো জ্যাক ও ব্ল্যাকবিয়ার্ডের আয়ত্ত্বে চলে যায়।

জলদস্যু শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পোর্ট রয়্যাল বোস্টনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইংরেজ শহরে পরিণত হয়েছিল। তবে ১৬৯২ সালের মধ্যে, পোর্ট রয়্যালও সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে ওঠে। শহরটি পতিতালয়, সরাইখানা ও মদ্য বেচাকেনা, ক্রীতদাস ও জলদস্যুদের দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল।

একসময় জলদস্যু ক্যাপ্টেন হেনরি মরগান শহরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর হয়েছিলেন। বন্দরের বিশৃঙ্খলায় তিনি জলদস্যুদের দমন করার চেষ্টা করেছিলেন, তবে তার প্রচেষ্টা অকেজো প্রমাণিত হয়েছিল। বিশাল জলোচ্ছ্বাসের প্রায় ৪ বছর আগে তিনি মারা যান।

এই শহরের ট্রেডমার্ক পানীয় ছিল কিল ডেভিল রাম। এই পানীয় এতোটাই শক্তিশালী ছিল যে, এই অ্যালকোহল বিষের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হত।

এই পানীয় গ্রহণের পর ওই ব্যক্তিরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতো। ওই নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি চোখের সামনে কাউকে দেখলেই হাত-পা কেটে ফেলতো কোনো কিছু না ভেবেই।

যেভাবে ডুবলো পাপের নগরী

১৬৯২ সালের ৭ জুন দুপুরের ঠিক আগে শহরে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। পোর্ট রয়্যালের বাড়িগুলো বালির উপর নির্মিত হয়েছিল। যখন ভূমিকম্প আঘাত হানে, তখন বালিগুলো তরল হয়ে যায় ও মাটির নিচে তলিয়ে যায় শহরের ভবন, রাস্তা ও মানুষ।

পুরো শহর যখন মাটির নিচে চলে যায় সঙ্গে সঙ্গে বিশাল এক জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায় শহরের উপর দিয়ে। এমনকি ক্যাপ্টেন মর্গান, যাকে উপদ্বীপে সমাহিত করা হয়েছিল তার কবরও সমুদ্রের নিচে চলে যায় পুরো শহরের সঙ্গে সঙ্গে।

পোর্ট রয়্যাল নগরীর ৩৩ একর এলাকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উধাও হয়ে যায়। ব্রিটিশদের তৈরি করা পাঁচটি দুর্গের মধ্যে চারটি গুঁড়িয়ে যায়। পোর্ট রয়্যালের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ অর্থাৎ এক দিনেই ২ হাজার মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

তবে এখানেই শেষ নয়, এই ঘটনার কয়েক দিন পর থেকেই ওই এলাকায় মৃত লাশের গন্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। পশুদেরকেও পোকামাকড় গ্রাস করে নেয়। শহরের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৩ হাজার মানুষ মারা যায়।

এভাবেই পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ও সবচেয়ে ভয়ংকর শহর ধ্বংস্রপাপ্ত হয়। ১৯৯৯ সালে একটি ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট হিসেবে মনোনীত হয় ধ্বংসপ্রাপ্ত পোর্ট রয়্যাল শহরটি।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি/মিরর ইউকে/অ্যাটলাস অবসকিওর

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।