আইফেল টাওয়ার ২ বার বিক্রি করেন যে প্রতারক

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:১০ পিএম, ২১ জুন ২০২২

আইফেল টাওয়ার দেখতে প্যারিসে ভিড় করে বিশ্ববাসী। তুমুল জনপ্রিয় এই স্থাপনার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা। এই বিখ্যাত স্থাপনাটি নাকি এক ব্যক্তি বিক্রি করেছিলেন, তাও আবার দু’বার।
অবাক করা বিষয় হলেও সত্যিই যে, ভিক্টর লুস্টিগ নামক এক ব্যক্তি সবার অজান্তেই বিশাল এই স্থাপনা বিক্রি করেছিলেন পর্যটকের কাছে।

জানা যায়, ১৮৯০ সালে চেক শহর হোস্টিনেতে জন্মগ্রহণ করেন ভিক্টর লুস্টিগ। তার ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। তাকে দেখে কেউই মুগ্ধ হতেন।

তার কথা শুনে অনেকেই মোহগ্রস্থ হয়ে পড়তেন। এতোটাই সাবলীলভাবে তিনি অভিনয় করতেন যে, কারও সন্দেহ হতো না যে তিনি মিথ্যা বলছেন।

jagonews24

মানুষ ঠকানোই ছিল তার পেশা। বিভিন্নভাবে তিনি মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করতেন। এসব কাজে একেক সময় তিনি নিজের ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।

কারও সঙ্গে কথা বলা বা আড্ডা দেওয়ার ফাঁকেও নাকি তিনি পকেট মারার ওস্তাদ ছিলেন। তবে তার সবচেয়ে ধূর্ততার উদাহরণ হলো আইফেল টাওয়ার বিক্রি করা।

১৯২৫ সালের দিকে ভিক্টর প্যারিসে ছিলেন। আর তখনই পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় যে, আইফেল টাওয়ার রক্ষণাবেক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। তাহলে কী টাওয়ারটি বিক্রি করে দেওয়া হবে? সংবাদের শেষে এমনটিই লেখা ছিল। আর সেখান থেকেই আইডিয়া পান ভিক্টর।

এরপর তিনি নিজেকে সরকারি অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে আইফেল টাওয়ার বিক্রি করা উচিত নাকি সংরক্ষণ করা উচিত এ বিষয়ে ভোট চান সবার কাছে।

jagonews24

ভিক্টরের প্রস্তাবে আশ্চর্যজনকভাবে সাড়া দিয়েছিল সবাই। এরপর টেন্ডারও ডাকেন তিনি। শহরের সবচেয়ে নামিদামি ৫ সংস্থার মধ্যে থেকে প্রতারক ভিক্টর বেছে নেন আন্দ্রে পয়সনকে।

প্রথম দফায় প্রায় ৭০ হাজার ফ্র্যাঙ্ক অর্থে টাওয়ারটি বিক্রি করেন ভিক্টর। এরপর গোপনে একদল ভাঙারি ব্যবসায়ীকে একটি বিলাসবহুল হোটেলে ডেকে নিজেকে ফ্রান্সের ডাক ও টেলিগ্রাফমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন।

তাদেরকে তিনি বোঝান যে, টাওয়ারটি দেশের জন্য একটা বোঝা। এর পেছনে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় সরকার এটিকে ফেলনা হিসেবে বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন।

ভিক্টর ওই ভাঙারি ব্যবসায়ীদেরকে বিষয়টি গোপন রাখার জন্যও আদেশ করেন। অন্যদিকে আন্দ্রে পয়সন নামক ফরাসি ব্যবসায়ীকে ফাঁদে ফেলে আইফেল টাওয়ারটি কিনতে রাজি করান।

এ কারণে ভিক্টরকে মোটা অঙ্কের ঘুষও দেন পয়সন। প্রায় ৭০ হাজার ফ্র্যাঙ্ক হাতিয়ে নিয়ে প্যারিস ছেড়েছিলেন ভিক্টর।

জানা যায়, তখন তিনি অস্ট্রিয়ায় লুকিয়ে ছিলেন। এরপর কিছুদিন পর আবারও প্যারিস ফিরে ছোটখাট চুরি-প্রতারণা করা শুরু করেন।

jagonews24

ভিক্টর ধরে নিয়েছিলেন, পয়সন লজ্জা ও পুলিশের কাছে ধরা পড়ার ভয়ে কাউকে বিষয়টি জানাবেন না। বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ বিষয়ে কিছু জানতে না পেরে এক সময় তিনি নিশ্চিত হন যে, বিষয়টি সম্পর্কে এখনো কেউ জানেন না।

এবার আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভিক্টর প্যারিসে ফিরে আইফেল টাওয়ার বিক্রির আরেকটি নাটক সাজান। আগের মতোই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেন। এবার ধরা পেরে যায় তার জালিয়াতি। তবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

জানা যায়, ভিক্টরের প্রায় ৪৭টি ছদ্মনাম ও অসংখ্য পাসপোর্ট ছিল। ৫টি ভাষায় কথা বলতেন তিনি। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস তাকে চিহ্নিত করেছিল ‘অভিজাত ব্যক্তি’ হিসেবে। বিশ্বের অন্যতম চালাক ব্যক্তি হিসেবে আজও ইতিহাস তাকে স্মরণ করে।

সূত্র: আমেজিং প্লানেট

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।