সাড়ে ৩শ’ বছরের হাম্মামখানা
যশোর জেলার কেশবপুরের মীর্জানগর হাম্মামখানা ৩শ’ ৬১ বছরের প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে হাম্মামখানার চারপাশ। সুযোগ পেলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।
অবস্থান
যশোর জেলার কেশবপুর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে কপোতাক্ষ ও বুড়িভদ্রা নদীর মিলনস্থল ত্রিমোহিনীর মীর্জানগর নামক স্থানে অবস্থিত।
নির্মাণের ইতিহাস
সম্রাট আকবরের সময় (১৬৩৯-৬০ খ্রিস্টাব্দ) বাংলার সুবেদার শাহ সুজার শ্যালকপুত্র মীর্জা সাফসি খাঁন ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে যশোরের ফৌজদার নিযুক্ত হন। তাঁর নামানুসারে এলাকাটির নাম হয় মীর্জানগর। তিনি মীর্জানগরে অনেক ভবন নির্মাণ করেন। তাঁর পরেও এখানে অনেক ফৌজদার শাসন ক্ষমতায় আসেন। তাঁরাও এখানে অনেক ভবন নির্মাণ করেন। তাঁদেরই কেউ একজন এখানে সুবিস্তৃত পরিখা খনন করে আট-দশ ফুট উঁচু প্রাচীর তৈরি করে মতিঝিল নামকরণ করেন। এর একাংশে বতকখানা, জোনানাসহ হাম্মামখানা (গোসলখানা) ও দুর্গের পূর্বদিকে সদর তোরণ নির্মাণ করেছিলেন।
বৈশিষ্ট্য
পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা চার কক্ষ বিশিষ্ট এবং একটি কূপসহ হাম্মামখানাটি মোগল স্থাপত্য শৈলীর অনুকরণে নির্মিত। স্থাপনাটি চার গম্বুজ বিশিষ্ট। এর পশ্চিম দিকে পরপর দুটি কক্ষ। পূর্বদিকের কক্ষ দুটি উঁচু চৌবাচ্চা হিসেবে ব্যবহৃত হত। এর জানালাগুলো এমন উঁচু করে তৈরি যাতে অবস্থানকালে বাইরে থেকে শরীরের নিম্নাংশ দেখা না যায়। পূর্বপাশে দেয়াল বেষ্টনীর ভেতরে রয়েছে ৯ ফুট ব্যাসের ইটের নির্মিত সুগভীর কূপ। সেই কূপ থেকে পানি টেনে তুলে এর ছাদের দু’টি চৌবাচ্চায় জমা করে রৌদ্রে গরম করে দেয়াল অভ্যন্তরে স্থাপিত পোড়ামাটির নলের মাধ্যমে স্নানকক্ষে সরবরাহ করা হতো। স্থাপনাটির দক্ষিণপাশে একটি চৌবাচ্চা এবং একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে যা তোষাখানা ছিল বলে অনুমিত হয়।
সংস্কার
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে এবং সংস্কার করে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রেন অথবা বাসযোগে যশোর যেতে হবে। সেখান থেকে পৌঁছতে হবে কেশবপুর। পরে কেশবপুর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই পেয়ে যাবেন হাম্মামখানা। ঢাকা ছাড়াও দেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে সড়কপথে যাওয়া যায়।
এসইউ/এমএস