রহস্যময় আন্ধারমানিক যে কারণে নিষিদ্ধ

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:১৯ পিএম, ১৯ মে ২০২১

বান্দরবান জুড়েই দর্শনীয় অনেক স্থান আছে। এগুলোর একটির চেয়ে অন্যটি আরও সুন্দর। বান্দরবান গেলেই প্রকৃতির অপার বিস্ময়ে নয়ন জুড়াবে আপনার। তবে জানেন কি, বান্দরবানের অন্যতম সেরা এক দর্শনীয় স্থান হলো আন্ধারমানিক।

প্রত্যন্ত এ স্থানটি বান্দরবানের অনেক গভীরে। সেখানে ঘুরতে যাওয়াও অতটা সহজ বিষয় নয়। তবে প্রকৃতির সবটুকু সৌন্দর্য হয়তো আপনি সেখানে গেলেই উপভোগ করতে পারবেন! কল্পনার রাজ্যের মতো আন্ধারমানিক পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক স্থান।

আন্ধারমানিকের সৌন্দর্য যেমন হৃদয় হরণ করে; ঠিক সেখানকার রহস্য কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দেয়। বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলার বড় মদক এলাকায় অবস্থিত আন্ধারমানিক। বড় মদকের পর আর কোনো সেনা বাহিনী বা বিজিবি ক্যাম্প নেই। এ কারণে নিরাপত্তার খাতিরে আন্ধারমানিকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।

jagonews24

তবুও থেমে নেই পর্যটকরা। সবারই আন্ধারমানিকের অন্ধকারের তীব্র আকর্ষণে। তবে সেখানে যেতে হলে দিনের বেলায় গাইড সঙ্গে নিয়ে ঘুরে আসতে হবে। আন্ধারমানিক যাওয়ার সময় প্রথমে দলিয়ান পাড়া থেকে রেমাক্রি ও ছোট মদক হয়ে বড় মদক যেতে হবে।

রেমাক্রির পরে ওই পথে পর্যটকরা খুবই কম যান। যারা রোমাঞ্চপ্রেমিক কেবল তারাই আন্ধারমানিকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। বড় মদকের দিকেও কেউ যায় না বললেই চলে। তবে দুই-এক জন যারা যায় তারা থানছি বা রেমাক্রি থেকে ট্রলারে করে যান।

ওই পথটিকে অব ট্রেইল বলা যায়। রেমাক্রি থেকে ৮ ঘণ্টার হাঁটা পথ। যার ৬ ঘণ্টা সামান্য উঁচু-নিচু ও নদীর পাড় ধরে হলেও, শেষ ২ ঘণ্টা ঝোপ-ঝাড়পূর্ণ পাহাড়ি পথ। যেভাবেই হোক সন্ধ্যার আগে বড় মদক পৌঁছাতেই হয়। কারণ শেষ ২ ঘণ্টার পথ হেড ল্যাম্পের আলোতে যাওয়া কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়। আর অজানা কিছু ভয় তো থাকেই।

jagonews24

এ পথে বাঙালি কেন আদিবাসীদেরও তেমন একটা দেখা যায় না। খৈসাপ্রু ও চাখাই পাড়ার পর সিঙ্গাফা ও ঠান্ডা ঝিরি সাঙ্গু নদীতে মিলিত হয়েছে। এর কিছুদূর পরে তুর্গ ঝিরি। সেখান থেকে আবার পাহাড়ি পথ শুরু। এই পাহাড়ি পথের মূল সমস্যা শুকনো লতা-পাতার স্তূপ।

অনেক জায়গায় পা ফেলার পর মনে হতে পারে পায়ের নিচে মাটি নেই। তাই চলার পথে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সাবধানে। বড় মদক পৌঁছানোর পর বিজিবি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হয়। তাদের অনুমতি ছাড়া আন্ধারমানিক যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ ক্যাম্প থেকে সরাসরি ট্রলার ঘাট দেখা যায়।

বড় মদক থেকে আন্ধারমানিক পর্যন্ত যাওয়া-আসার জন্য সেখানে আছে নৌকা। ভাড়া প্রায় ২ হাজার টাকা। নদীর বিভিন্ন স্থানে কম পানি থাকায় মাঝে মাঝে নৌকা থেকে নেমে হাঁটতে হয়। এভাবে প্রায় ঘণ্টা দুই লেগে যেতে পারে আন্ধারমানিক পৌঁছাতে।

আন্ধারমানিকের মূল আকর্ষণ হলো নারেসা ঝিরি। এর দুই পাশ প্রায় ৬০/৭০ ফুট পাথরের দেওয়াল। যা সমান্তরাল ভাবে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে। মনে হবে কংক্রিটের ঢালাই দেয়া হয়েছে দু’পাশের পাহাড়ি দেওয়ালে। এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয় সেখানে।

jagonews24

আন্ধারমানিক সত্যিই অন্ধকারে ঢাকা। দিনের বেলাতেও অন্ধকার, ভুতুড়ে পরিবেশ। সূর্যের আলো কম পৌঁছানোর কারণে স্থানটি সবসময় অন্ধকার থাকে। পাহাড়, ঝরনা, পাথর আর সবুজের মায়ায় পড়ে যাবেন আপনি সেখানে গেলে! সেখানকার স্বচ্ছ পানিতে নিজের মুখও দেখতে পারবেন। পানির নিচে পাথর।

যেভাবে যাবেন আন্ধারমানিক

ঢাকা থেকে আন্ধারমানিক যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান যেতে হবে। বাস ভাড়া ৬২০-৮৫০ টাকা পর্যন্তু। বান্দরবান থেকে থানচির বাস ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। থানচি থেকে আন্ধারমানিক যাওয়া-আসা ট্রলার রিজার্ভ বাবদ ১০ হাজার টাকার মতো।

jagonews24

তবে বড় মদক বিজিবি ক্যাম্প থেকে অনুমতি মিললেই আপনি আন্ধারমানিক যেতে পারবেন। দিন চারেকের সময় হাতে রাখলে ভালো করে ঘুরতে পারবেন। থাকার জন্যে রেমাক্রিতে গেস্ট হাউজ আছে।

ছোট মদক ও বড় মদকে আদিবাসীদের ঘরেও কম মূল্যে রাত্রি যাপনের সুযোগ পাবেন। রেমাক্রিতে খাবার পাওয়া গেলেও ছোট-বড় মদকে নিজেদেরকেই চাল-ডাল কিনে রান্না করে খেতে হবে।

জেএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।