৪০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার এক গাছ
নুর উল্লাহ কায়সার
৪০০ বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার একটি গাছ। এই গাছের আসল বয়স কত, সে সম্পর্কে কারও ধারণা নেই। শত শত পাখ-পাখালির আনাগোনা নিয়ে বিশাল এই কড়ই গাছ আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে ডাল-পালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে বিশালাকার এই গাছটি।
ফেনী শহরের ঐতিহাসিক গ্রান্ড ট্রাংক রোডে এই কড়ই গাছের অবস্থান। ফেনী-সোনাগাজী সড়কের দাউদপুর ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় দাড়িয়ে থাকা বৃহদায়তন এ গাছটির সঠিক ইতিহাস স্থানীয়দের কারও জানা নেই। প্রতিদিনই গাছটিতে শত প্রকারের পাখ-পাখালি এসে ভিড় জমায়।
কখনও কখনও ঐতিহাসিক এ গাছটি দেখতে ভিড় জমায় দর্শনার্থীরা। গাছের নিবিড় ছায়া আর মনোমুগ্ধকর পাখ-পাখালির গুঞ্জন তাদেরকে প্রাকৃতির আবহে নিবৃত করে। কথিত আছে, ১৯ শতকের দিকে ফেনীর প্রথম মহকুমা প্রশাসক কবি ও দার্শনিক নবীন চন্দ্র সেন এ বৃক্ষের ছায়াতলে বসে সাহিত্য চর্চা করতেন। এখানে বসেই তিনি রচনা করতেন হরেক রকমের কবিতা।
গাছটি সম্পর্কে এলাকার অষ্টাদশোর্ধ মন্তু মিয়া জানান, পূর্ব পুরুষদের কাছে এ গাছের সম্পর্কে আমরা অনেক গল্প শুনেছি। গাছটির নিছে একসময় দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভ্রমনার্থিরা রাত্রি যাপন করতো, বিশ্রাম নিতো। তৎকালীন সময়ে আশপাশের অভিজাত ব্যক্তিরা বিশ্রামার্থীদের আদর-আপ্যায়নের আয়োজন করতো। তবে এ গাছটির আনুমানিক বয়স জানেন না মন্তু মিয়া।
ননা মিয়া নামের শহরের পশ্চিম উকিল পাড়ার এক বসিন্দা জানান, আমরা শুনেছি এটি বাংলার প্রথম রাজা শের শাহের আমলে পর্তন করা হয়েছে। জন্মের পর থেকেই গাছটিকে আমরা এভাবেই দেখে আসছি। বাবার বাবাও এই গাছটি দেখেছিলেন। এ গাছটি সম্পর্কে দাদা-নানারা অনেক কিচ্ছা কাহিনী শুনাতেন আমাদেরকে। তবে গাছটির ইতিহাস কেউই সঠিকভাবে জানেন না।
গাছটির নিচে ৪৭ বছর ধরে ব্যবসা করছেন কুমিল্লার অধিবাসী শ্রী অভিলাশ কর্মকার। মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে ৪৭ বছর একই জায়গায় তিনি কর্মকারের ব্যবসায় জড়িত আছেন। তার কাছে গাছটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ব্যবসায়ের শুরু থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি।
একটা সময় অত্র এলাকার দোকানপাট কিছুই ছিল না। ভয়ে কোনো মানুষ আসতে সাহস পেত না। ফেনী নদী থেকে প্রবাহিত একটি ডোবার অবস্থান ছিল এখানে। কালক্রমে তা এখন হারিয়ে গেছে। এখন অনেক দোকান পাট হলেও গাছটির আগের মতোই রয়ে গেছে। গাছটি নিয়ে নানান কাহিনীও আমরা শুনেছি।
এদিকে বছরখানেক আগে প্রাচীন এ বৃক্ষটিকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠনের দুই শতাধিক সংগঠক-সদস্য। তারা প্রাচীন গাছটিকে ফেনীর ঐতিহ্য হিসেবে উল্লেখ করে বৃক্ষটিকে বিজ্ঞাপন মুক্ত ঘোষণা করে।
একইসঙ্গে তারা এ বৃক্ষটি রক্ষা করে এর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ফেনী পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। এর আগে বছরজুড়ে গাছটিতে পেরেক দিয়ে বিভিন্ন প্রচার ও বিজ্ঞাপন লাগানো থাকতো।
ইতিহাসের তথ্যানুযায়ী, ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ সালের দিকে শের শাহ সড়ক এ আজম নামে গ্রান্ড ট্রাংক রোড প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময়ে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ঘোড়ার মাধ্যমে যাতায়াত করত।
তৎকালীন সময়ে ট্রাংক রোডের পাশে বিভিন্ন স্থানে বিশ্রামের জন্য এসব গাছ রোপন করা হয়। কালক্রমে সবগুলো গাছ মারা গেলেও ফেনী শহরের দাউদপুর ব্রীজ সংলগ্ন এ কড়ই বৃক্ষটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
লেখক: ফিচার লেখক
জেএমএস/এমকেএইচ