ভারতের কঙ্কাল হ্রদের রহস্য কী?

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪৮ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২১

হিমালয়ের পাশেই আছে একটি বরফ উপত্যকা। আর সেখানেই একটি বিশাল হ্রদের অবস্থান। এ হ্রদের মধ্যেই আবিষ্কৃত হয়েছে শত শত মানব কঙ্কাল। রূপকুন্ড হ্রদটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের ভারতের অন্যতম উঁচু পর্বতমালা। ত্রিসুলের সমুদ্রতল থেকে ৫ হাজার ২৯ মিটার উঁচুতে (১৬,৫০০ ফুট) অবস্থিত।

১৯৪৮ সালে একটি টহলরত ব্রিটিশ ফরেস্ট রেঞ্জার ‘কঙ্কালের হ্রদ’ এর চারপাশে মানব কঙ্কালের সন্ধান পান। যেহেতু এ লেকটি সবসময়ই বরফে ঢেকে থাকে, তাই কঙ্কালগুলো বরফের মধ্যেই চাপা থাকে। শুধুমাত্র তুষার গলেই কঙ্কাল দৃশ্যমান হয়।

jagonews24

প্রাকৃতিকভাবেই স্কেলেটন লেকে থাকা কঙ্কালগুলো যুগের পর যুগ ধরে সংরক্ষিত হয়ে আছে। এমনও অনেক কঙ্কাল আছে যেগুলো মমিতে পরিণত হয়েছে। এ পর্যন্ত স্কেলেটন লেকে ৬০০-৮০০টি মানুষের কঙ্কালের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সরকার স্থানটিকে ‘রহস্যের হ্রদ’ হিসাবে বর্ণনা করে। অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে নৃ-তাত্ত্বিক এবং বিজ্ঞানীরা এ লেক নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। তারা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন, মৃত ব্যক্তিরা কারা ছিলেন? তারা কখন মারা গিয়েছিলেন? তারা কীভাবে মারা গেল? তারা কোথা থেকে এসেছে?

jagonews24

একটি প্রচলিত কাহিনি অনুসারে, ভারতীয় এক বাদশাহ, তার স্ত্রী এবং পরিচারকসহ রাজবংশের সবাই না-কি ৮৭০ বছর আগে বরফবর্ষে মারা গিয়েছিলেন। আরেকটি কাহিনি অনুসারে, ১৮১৪ সালে তিব্বত আক্রমণ করার সময় অনেক ভারতীয় সৈন্যদেরকে না-কি পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। বাকিরা হিমালয়ের উপর দিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং পথেই তারা মারা যান।

স্কেলেটন লেক নিয়ে আরও এক গল্প আছে, অনেকের মতে এ স্থানটি ছিল কবরস্থান। যেখানে মহামারিতে মৃত্যুবরণকারীদের কবর দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়াও নানা ধরনের লোকগল্প প্রচলিত আছে এ লেকটি নিয়ে।

jagonews24

এ লেকে পাওয়া কঙ্কালদের প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, মারা যাওয়া বেশিরভাগ লোক লম্বা ছিলেন। তাদের বেশিরভাগই মধ্যবয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক, বয়স ৩৫-৪০ এর মধ্যে। কোনো শিশুদের কঙ্কাল পাওয়া যায়নি। কয়েকজন বৃদ্ধার কঙ্কালও মিলেছে। পরীক্ষার পর জানা যায়, সকলেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন।

দীর্ঘ ৫ বছর ধরে স্কেলেটন লেকের কঙ্কালগুলো নিয়ে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানভিত্তিক ১৬টি প্রতিষ্ঠানসহ ২৮ জন গবেষণারত আছেন। তাদের ধারণা মতে, এসব কাহিনি মোটেও সত্যি নয়।

jagonews24

বিজ্ঞানীরা কঙ্কালগুলোর ডিএনএ বিশ্লেষণ করে জানান, এদের মধ্যে কিছু কিছু কঙ্কালের বয়স প্রায় ১২০০ বছর। মৃতরা উভয়ই জেনেটিকভাবে বৈচিত্র্যময় ছিলেন এবং তাদের মৃত্যুর সময়ের মধ্যেও এক হাজার বছরের ব্যবধান আছে।

গবেষণার প্রধান লেখক এডাওন হার্নি এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডক্টরাল শিক্ষার্থীর মতে, ‘কোনো বিপর্যয় ঘটার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছিল। রূপকুন্ড হ্রদে কী ঘটেছিল তা এখনও জানা যায়নি।’

jagonews24

সেখানে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। হ্রদটি কোনো বাণিজ্য পথে অবস্থিত নয়। জেনেটিক স্টাডিতে এমন কোনো প্রাচীন ব্যাকটেরিয়া বা রোগজীবাণুর উপস্থিতিরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, তীর্থযাত্রার সময় সম্ভবত গণহত্যা হয়েছিল সেখানে। তবে এ হ্রদ নিয়ে এখনো রহস্যের সমাধান হয়নি। উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।

সূত্র: বিবিসি

জেএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।