রহস্যময় আয়নাভূমি গড়ে উঠেছে যেভাবে
পৃথিবীর বিশালতম আয়নাভূমি সালার দে ইউনি। এর আয়তন ১০ হাজার ৫৮২ বর্গকিলোমিটার। বিশাল এ আয়নাভূমির অবস্থান দক্ষিণ পশ্চিম বলিভিয়ায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর অবস্থান ৩৬ হাজার ৫৬৫ মিটার উঁচুতে। প্রকৃতির এক অপার বিস্ময় এই আয়নাভূমি।
লবণ জমেই সৃষ্টি হয়েছে এ সমতল ভূমির। প্রায় ৩০-৪২ হাজার বছর আগে, এ অঞ্চলটি একটি বিশাল প্রাগৈতিহাসিক হ্রদ, মিনচিন হ্রদের অংশ ছিল। পরবর্তীতে হাজারো বছর ধরে ধারাবাহিক পরিবর্তনের ফলে ঐতিহাসিক ওই লেকের পানি শুকিয়ে যায়।
তবে তলানিতে জমে থাকা লবণ ও লিথিয়ামসহ বহু খনিজ পদার্থ পড়ে থাকে। বিশ্বের ৫০-৭০ শতাংশ লিথিয়াম মজুদ রয়েছে এখানে। এই বিস্তৃত অঞ্চলটি বর্ষাকালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক আয়নায় পরিণত হয়। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেখানে বৃষ্টিপাত হয়।
তখন মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আকাশ যেন মাটিতে মিশে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থানটি থাকে সাদা। তখন লবণের মরুভূমিতে পরিণত হয় সালার দে ইউনি। এর উপর দিয়ে তখন যানবাহন চলাচল করতে পারে।
সালার দে ইউনিতে যেকোনো সময়ই চাইলে ঘুরতে যেতে পারেন। নিকটবর্তী শহর থেকে পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত ভাড়ায় লবণভূমিতে যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। প্রতিদিন প্রায় ২০০ গাড়িভর্তি পর্যটক ঘুরতে আসেন আয়নাভূমিতে।
সালার দে ইউনির মাঝে কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। এসব দ্বীপে গেলে মন ভরে যায়! দ্বীপগুলোতে রয়েছে শত শত বছরের পুরনো ক্যাকটাস। সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালার দে ইউনির সৌন্দর্য পৃথিবীর অন্যান্য সুদর্শনীয় স্থানের চেয়েও নৈস্বর্গিক।
এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে বহু হোটেল। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম হলো প্যালাসিও দে স্যাল। যার অর্থ লবণের প্রাসাদ।
২০০৭ সালে গড়ে তোলা হোটেলটি সম্পূর্ণ লবণ দিয়ে তৈরি। হোটিলের মেঝে, দেওয়াল ও ছাদ থেকে শুরু করে খাট, চেয়ার, টেবিলসহ সব আসবাবপত্রই তৈরি করা হয়েছে লবণ দিয়ে। লবণের এই দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করতে ১৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের প্রায় ১০ লাখ লবণের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। সালার দে ইউনি লবণের উন্মুক্ত খনি। ধারণা করা হয়, ১১ কোটি টন লবণ রয়েছে এ খনিতে।
সালার দে ইউনিতে শুধু পর্যটকদেরই আগমন ঘটে না; প্রাণীজগতেরও প্রজননভূমি এ স্থানটি। বিভিন্ন প্রজাতির কানঠুটির প্রধান প্রজননক্ষেত্র স্থানটি। এ আয়নাভূমিতে প্রায় ৮০ প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে। এছাড়াও এটি কাল্পেও, বলিভিয়ান ভিজকাচা, আন্দীয় হাঁস, আন্দীয় হিলস্টার, ভিকুয়াসসহ আরো বহু বিচিত্র প্রাণীর আবাসস্থল।
ন্যাশনালজিওগ্রাফি/জেএমএস/জিকেএস