পটুয়াখালীর জাহাজমারা হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র


প্রকাশিত: ০১:০৬ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০১৫

চারদিকে সমুদ্রের জলরাশি। সৈকতের তটরেখায় লাল কাঁকড়াদের ছুটোছুটি। শেষ বিকেলে দিগন্ত রেখায় সূর্যাস্তের দৃশ্য। ভোরে কুয়াশার আভা ভেদ করে পূর্ব আকাশের বুক চিরে লাল সূর্য ওঠার মনোরম দৃশ্য। এরই মাঝে সকাল-দুপুর-বিকেল পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা দ্বীপ। প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দ্বীপটি। নদী আর সাগরের জল আছড়ে পড়েছে এ দ্বীপের চারপাশে। চিকচিক বালিতে যেন ভোরের কোমল সূর্য আলো ছড়ায়।

অস্তগামী সন্ধ্যার লালিমা তেমনি মায়া ঢালে নিভৃতের আঁধারে। এমন একটি জায়গার নাম জাহাজমারা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি হতে পারে বাংলাদেশের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রের একটি। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় সৌন্দর্যের লীলাভূমি শুধু জাহাজমরাই নয়, তার পাশে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি, সোনারচর, চরতুফানিয়া, রূপারচর, শিপের চরসহ আরও কয়েকটি দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। এর প্রত্যেকটিই সাগরের বুক চিরে জেগে উঠেছে প্রকৃতির অনাবিল নিবিড়তা নিয়ে। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের  প্রতীক এই দ্বীপগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করলে পর্যটন শিল্পে এক বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

এটা হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা দ্বীপ জাহাজমারার গল্প। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে নয়নাভিরাম এ দ্বীপ। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের মৌডুবিতে এ দ্বীপের অবস্থান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এটির দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। মৌডুবি বাজারের কাছে বেড়িবাঁধের বাইরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে দেশের সম্ভাবনাময় স্থান জাহাজমারা। সমুদ্রতীরে দীর্ঘ সৈকতের পাশে রয়েছে বন বিভাগের ঘন বনাঞ্চল। সমুদ্রের ঢেউ আর সবুজ প্রকৃতি এ এলাকার পরিবেশকে করে তুলেছে মোহনীয়।

পর্যটন মৌসুম এলেই কিছু ট্রলার পর্যটকদের নিয়ে জাহাজমারায় যাতায়াত করে। কুয়াকাটা থেকে কিংবা রাঙ্গাবালী থেকে এসব স্থানে ট্রলারে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে পর্যটকেরা এসব স্থানে আসেন কিছুটা প্রশান্তির খোঁজে। অথচ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসব স্থানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলে পর্যটকদের যাতায়াত সহজ হতে পারে, আর সরকারও আয় করতে পারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

pt
তবে এখন পর্যন্ত এখানে লোকবসতি গড়ে ওঠেনি। আছে নিবিড় সবুজের সমারোহ। সৈকতে অগণিত লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। সরকার এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা না করলেও প্রতিবছর বেশ কিছু পর্যটকরা এখানে আসছেন। দেখার কেউ না থাকায় ধ্বংস করছেন দ্বীপের সৌন্দর্য। পর্যটন কেন্দ্র করে দ্বীপের নির্দিষ্ট স্থানে পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিলে বাঁচবে পরিবেশ। দ্বীপে রয়েছে সবুজের মনোরম সমারোহ। এই দ্বীপের মূল বাসিন্দাই হচ্ছে লাল কাঁকড়া। যাদের উপস্থিতিতে সমুদ্রের রূপালি সৈকত যেন রক্তিম হয়ে ওঠে। জনমানবশূন্য দ্বীপে হঠাৎ করে মানুষের উপস্থিতি ঘটলে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে কাঁকড়াগুলো। দ্রুত আশ্রয় নেয় গর্তে। আবার অনেক কাঁকড়া ব্যস্ত হয়ে নিজেদের লুকানোর চেষ্টা করে বালুর ভেতরে। মানুষের আনাগোনায় দ্বীপে লাল কাঁকড়ারা নিরাপদ নেই। এদের নিরাপদ আবাসভূমি হুমকির মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, ১৯৭৪-৭৫ ও ২০০৭-০৮ সালে বন বিভাগ দুই দফায় এই দ্বীপে বনায়ন করে। ৫০০ একর বিস্তীর্ণ বনভূমিতে রয়েছে কেওড়া, ছইলা, গেওয়া, বাবলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাগরের বুক চিরে জেগে উঠছে এক সবুজ বনভূমি।

রাঙ্গাবালীর মৌডুবি এলাকার বাসিন্দারা জানান, মৌসুমে অনেক কষ্ট করে এখানে কিছু পর্যটন প্রিয় লোকজন বেড়াতে আসেন। অনেকে আবার আসেন পিকনিক করতে। সড়ক পথে যাতায়াতে সমস্যা বলে এখানে দূরের লোকজন আসেন ট্রলারে করে। সুযোগ করে দিলে বহু পর্যটক আসতে পারেন বলে জানান স্থানীয়রা।

রাঙ্গাবালীর বড়বাইশদিয়া এলাকার চিত্রশিল্পী শাহ আলম বলেন, ‘শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এখানে চাইলেও বাইরে থেকে লোকজন আসতে পারেন না। এসব পর্যটন কেন্দ্রের সম্ভাবনা বিকাশে বিশাল অট্টালিকা বানানোর প্রয়োজন নেই। পর্যটন মৌসুমে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলে আর কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলেই এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘পর্যটন বিকাশে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সড়ক পথ তৈরি যে বাধ্যতামূলক তা নয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে সরাসরি লঞ্চ যোগাযোগের ব্যবস্থা করলে পর্যটকরা আসতে পারেন। অন্তত পর্যটন মৌসুমের কথা বিবেচনায় রেখে এমন ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। পর্যটন বিকাশের মধ্য দিয়ে এ এলাকার উন্নয়ন ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

জাফর খান/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।