সুন্দরবনের মতোই হতে পারে ছৈলার চর
সুন্দরবনের মতোই প্রাকৃতিকভাবে কাঁঠালিয়ার অবহেলিত চরাঞ্চলে বেড়ে উঠেছে ছৈলা গাছ। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার ছৈলার চরে সড়কপথে ভ্রমণ করা যায় না। যেকোনো প্রান্ত থেকে কাঁঠালিয়া বন্দরে নেমে নৌকা অথবা ট্রলারে যেতে হয় ছৈলার চরে।
উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির দক্ষিণ জনপদ কাঁঠালিয়ার বিষখালী নদীর তীরে ছৈলার চর। পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও রয়েছে নানা সঙ্কট। তবু সঙ্কট উপেক্ষা করেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম ছৈলার চর পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সুন্দরবনের মতোই দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে ছৈলার চর।
জানা যায়, বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে কাঁঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেতালবুনিয়া মৌজায় বিষখালী নদীতে এক যুগেরও আগে ৩০.৬১ একর জমি নিয়ে জেগে উঠেছে এ বিশাল চর। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক ছৈলা গাছ। আর ছৈলা গাছের নাম থেকেই এ চরের নামকরণ করা হয়েছে ‘ছৈলার চর’। শীতের সময় শুকনো চরে গহীন অরণ্য। চারপাশে নদীঘেরা যেন ছৈলার বনের দ্বীপ। সেখানে ছৈলা গাছে পাখিরা বাসা বেঁধেছে। অতিথি এবং পরিযায়ী পাখিও নিরাপদ স্থান মনে করে আশ্রয় নিয়েছে। দেশীয় পাখির সারি তো আছেই। ছৈলা ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমারোহ।
প্রতিবছর শীত ও শুকনো মৌসুমে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকে ছৈলার চর। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি আয়োজনে জেলাবাসী ছুটে যাচ্ছে ছৈলার চরে। ২০১৪ সালে ছৈলার চরটি পর্যটনস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেখানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং শৌচাগার না থাকায় পর্যটকদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। তবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
বছরখানেক আগে উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ থেকে ছৈলার চরকে পূর্ণাঙ্গ বিনোদনস্পটে রূপ দিতে অভ্যন্তরীণ একটি পুকুরে ঘাটলা, একটি টিউবয়েল, ৩টি শৌচাগার, একটি শেড ও একটি রান্নাঘর স্থাপন করা হয়। গত বছরের ১০ নভেম্বর বুলবুলের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত হলেও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় পর্যটকরা পড়ছেন ভোগান্তিতে। শৌচাগার সঙ্কটের কারণে নারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট থেকে নৌপথে যেতে হয় ছৈলার চরে। আমুয়া বন্দর থেকেও ট্রলারে কিংবা অন্য যেকোনো নৌযানে যাওয়া যায়। সড়কপথে হেতালবুনিয়া আলিম মাদরাসার সামনে কেল্লা পর্যন্ত যাওয়া যায়। পর্যটন এলাকাকে ঘিরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রেস্ট হাউস করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
ছৈলার চরের পর্যটক কলেজছাত্রী জান্নাত খান, সিঙ্গাপুর প্রবাসী কলিন্স খান, উম্মে হান্না নিঝুম ও দুরন্ত ফাউন্ডেশনের সভাপতি তাসীন মৃধা অনিক জানান, সুন্দরবনের মতোই অনেক দৃষ্টিনন্দন এ চর। এখানে পর্যটনের অপার সম্ভবনা আছে। প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য তাদের মন কেড়েছে। পর্যটকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা করে দিলে বিনোদনের মাত্রটা আরও বাড়বে। নিরাপত্তাসহ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে চরের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম কবির সিকদার বলেন, ‘এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। অবকাঠামোগত কিছু না থাকায় সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না। এটি যদি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবে সরকার রাজস্ব পাবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, ‘ছৈলার চরকে নিয়ে প্রশাসনের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ট্যুরিজম বোর্ড ছৈলার চর উন্নয়নের লক্ষ্যে কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলেই এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।’
মো. আতিকুর রহমান/এসইউ/এমএস