রাজস্থানে আনন্দ ভ্রমণ : পর্ব ০৭

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪০ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

অরূপ কুমার ভট্টাচার্য

০৭ অক্টোবর সকালে সোনার কেল্লা ও জয়সালমিরের হাভেলিগুলো দেখে সত্যিই আমরা অভিভূত। রাজস্থানের রাজপুত স্থাপত্য আর শিল্পকলা দেখে খুব গর্ববোধ হলো। কারণ এসবই ভারতবর্ষের গৌরবময় ঐতিহ্য। আর আমি সেই ভারতমাতার সন্তান। মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে যথার্থ বাঙালির মতই একটু বিছানায় গড়িয়ে না নিলে হয় বলুন?

জয়সালমির ওয়ার মিউজিয়াম: বিকেল সাড়ে তিনটায় আমরা চললাম জয়সালমির শহর থেকে ১৫ কি.মি দূরে জয়সালমির ওয়ার মিউজিয়াম দর্শনের জন্য। এখানে যাওয়ার রাস্তা অসাধারণ। পথের দু’ধারে মরুভূমির বালু আর মাঝে মাঝে কাঁটা ঝোঁপের গাছ। ড্রাইভারের মুখে শুনলাম, এ পথ ধরেই গেলে পাকিস্তান বর্ডার। যাই হোক, মিনিট দশের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম মিউজিয়ামে। চারিদিকে মডেল করে রাখা আছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরত্বের নানা কাহিনি। আর এ বিশাল অঙ্গনে রাখা আছে ভারতের জাতীয় পতাকা। বিকেলের মৃদুমন্দ বাতাসে গগনচুম্বি সেই তেরঙা দেখে মনে মনে জাতীয়তাবাদের তৃপ্তির স্বাদ আস্বাদন করলাম। এখানে দশ মিনিটের একটি ভিডিও শো প্রদর্শন হয়, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের। ভারতীয় সৈনিকদের দেশের জন্য আত্মদানের সেই কাহিনি। বেশ অনেক সময় এখানে ঘুরে, দেখে আমরা চললাম গাদীসর লেকের উদ্দেশে।

raj-in-(1)

গাদীসর লেক: মরুভূমির বুকে মরুদ্যান এই গাদীসর লেক। এখানকার প্রাচীনতম সরোবরগুলোর অন্যতম গাদীসর। চৌদ্দ শতকে রাওয়াল ঘাট সিং ত্রিকুট পাহাড়ের নিচে বালি খুঁড়ে এ কৃত্রিম হ্রদ নির্মাণ করান। প্রধানত জয়সালমিরে পানি সরবরাহের জন্য। ওই সময় এটিই ছিল এ অঞ্চলের পানির মুখ্য উৎস। এখন এর চারিদিকে অনেক ছোট-বড় মন্দির, ফুলের বাগান। বর্ষার পানিতে গাদীসর লেক পুষ্ট। স্থানীয় মানুষের মুখে শুনলাম, এবছর ভালো বৃষ্টির কারণে লেকে পানি বেশ ভালোই আছে। আকাশে সূর্য তখন পশ্চিম দিকে বেশ হেলে পড়েছে। তার আলোতে চারিদিকে এক অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এ রকম লেকে নৌ বিহার করব না, তা কখনো হয়? আমরা একটি ১২ সিটের নৌকা ভাড়া করে তাতে চেপে বসলাম। পড়ন্ত সূর্যের আলোতে এ নৌ বিহারের অনুপম অভিজ্ঞতা জীবনে অনেক দিন মনে থাকবে।

raj-in-(1)

সানসেট ভিউ পয়েন্ট: আমি ঠিক করেছিলাম, জয়সালমির এ সানসেট দেখব বড়াবাগ সমাধি সৌধ থেকে। কিন্তু আমাদের ড্রাইভার বলল, সানসেট দেখার জন্য চলুন আপনাদের এক অপূর্ব জায়গায় নিয়ে যাই। প্রথমে আমার ওর কথাটা পছন্দ হয়নি। কিন্তু ড্রাইভার বারবার বলল, স্যার একবার চলুন। কোনো টিকিট লাগবে না। কিন্তু জায়গাটা দারুণ। সেখান থেকে সানসেট দেখার আনন্দটাই আলাদা। আমি ড্রাইভার সুরজের কথামত জায়গাটায় গিয়ে সত্যিই মোহিত হয়ে গেলাম।

raj-in-(1)

জয়সালমিরের আকাশ তখন সোনালি রঙে রঞ্জিত। অনতিদূরে সোনার কেল্লা এক অপূর্ব রঙে সেজে উঠেছে। সকালের আলোতে সোনার কেল্লাকে যে রঙে দেখেছি; এখন আরেক মোহময়ী রূপে যেন রূপসী হয়ে উঠেছে। দু’চোখ ভরে সেই দৃশ্য দেখলাম। দূরে তখন দিন দেব তার শেষ আলোটুকু ছড়িয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে অস্তাচলে গেলেন। হঠাৎ ড্রাইভার সুরজ আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘স্যার, ক্যায়সা লাগা?’ আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না। এতটাই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। শুধু সুরজের হাত দুটো চেপে ধরলাম। আর মনে মনে বললাম, ‘ভাই, ক্ষমা করো। তুমি যখন এ জায়গায় আসবে বলেছিলে, আমি বিশ্বাস করিনি তোমায়। এখন মনে হচ্ছে, না এলে জীবনে এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হওয়া থেকে বঞ্চিত হতাম।

raj-in-(1)

মনের মধ্যে এক অসাধারণ অনুভূতি সঞ্চয় করে আমরা ফিরে এলাম হোটেলে। সকালে গাড়ি বিভ্রাট নিয়ে যতটাই মন অস্থির হয়েছিল, দিনের শেষটা ততটাই তৃপ্তির আনন্দে ভোরে উঠল।

চলবে...

লেখক: সহকারী শিক্ষক, বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম শিক্ষায়তন, হলদিয়া, কলকাতা।

এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।