প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন ভুটান

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ভুটান! আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ। পাহাড়, নদী আর ঝরনার মিতালিতে সৃষ্ট প্রকৃতির এক অপরূপ নিদর্শন। দেখলে মনে হবে- সবটাই যেন শিল্পীর সুক্ষ্ম রং তুলিতে আঁকা একটা ছবি। ফ্যামিলি ট্যুর, ফ্রেন্ডস ট্যুর, কাপল ট্যুর, মধুচন্দ্রিমা সবকিছুর জন্যই ভুটান হতে পারে প্রথম পছন্দ। কারণ যে কেউ, যেকোনো ধরনের, যেকোনো বয়সের মানুষ এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে বাধ্য! বিস্তারিত জানাচ্ছেন মার্জিয়া রহমান-

vutan-in-(1)

কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রানজিট ভিসা নিয়ে সড়কপথে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে প্রথমে যাওয়ার ডেট ফিক্সড করে ঢাকা টু বুড়িমারি যেকোনো এসি, নন এসি বাসের অ্যাডভান্স টিকিট করতে হবে। বুড়িমারি পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন অফিসের কিছু ফর্মালিটি আছে। সেগুলোর জন্য দালাল ধরাই ভালো। না হলে ইমিগ্রেশন অফিসের সো কলড অফিসাররা আপনার লাগেজের কাপড় একটা একটা করে খুলে চেক করবে। যাতে আপনার সময় নষ্ট তো হবেই, সাথে চূড়ান্ত রকমের মেজাজ খারাপ হবে। তাই দালালকেই কিছু টাকা দিয়ে দিন, সব ঝামেলা চুকে যাবে। ভিসা পাওয়ার পর সবকিছুর ফটোকপি ফাইল আকারে সাথে রাখবেন। যারা জব করেন এন.ও.সি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) সাথে করে অবশ্যই নিয়ে যাবেন। নয়তো পরে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হতে পারেন। এই দালাল আপনাকে ভারত সীমান্ত পার করে দেবে। সেখানে আপনার পাসপোর্টে এন্ট্রি সিল দেওয়া হবে। ভারত সীমান্তে হয়তো জিজ্ঞেস করবে, আপনার কাছে কত বাংলা টাকা আর কত রুপি আছে। ভুলেও দুইটার একটারও নাম নিবেন না। বলবেন, ২০০ ডলার আছে। সীমান্ত পার হয়ে ওখানে দেখবেন ডলার বা টাকা ভাঙানোর প্লেস আছে। ওখান থেকে টাকা ভাঙিয়ে নিন। তারপর সোজা হেঁটে চলে যান মেইন হাইওয়ে রোডে। জয়গাঁ বর্ডার পর্যন্ত রিজার্ভ ট্যাক্সি নিলে ভাড়া পড়বে ১ হাজার ৫০০ রুপি। জয়গাঁ বর্ডারে যাওয়ার একটু আগে, স্টার সিনেমা সংলগ্ন প্লেসে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস। ওখান থেকে এক্সিট সিল নিয়ে তবেই ভুটানের বর্ডার ফুন্টসোলিং প্রবেশ করুন। ফুন্টসোলিং ইমিগ্রেশন অফিস থেকে এন্ট্রি সিল নিয়ে আপনার গন্তব্য যেখানে, চলে যান। চাইলে সেদিন ফুন্টসোলিং থাকতেও পারেন।

vutan-in-(2)

ভিসা প্রসেসিং
টিকিট করার পর পাসপোর্ট আর আপনার বাসের টিকিট দিতে হবে ভিসা পাওয়ার জন্য। ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য কমপক্ষে আট কার্যদিবস মানে দশ থেকে বারো দিন টাইম দিতে হবে। তবে আমার মতে কমপক্ষে বিশ দিন টাইম নিয়ে দেওয়া ভালো। কারণ অনেক সময় ওরা কোনো কারণ ছাড়াই রিজেক্ট করে দেয়, ভিসা দেয় না। সেক্ষেত্রে আপনি কিছুদিন সময় পেলে অন্য ট্যুর প্ল্যান সাজিয়ে নিতে পারবেন।

vutan-in-(3)

প্লেস
কী নেই ভুটানে! পাহাড় আছে, নদী আছে, হিমালয়ের একাংশ আছে। আর কী চাই! ভুটানের সবচেয়ে সুন্দর সিটি হচ্ছে পারো। পারোতে অনেক কিছু আছে দেখার মতো। চেলালা পাস, পারো জং, পারো এয়ারপোর্ট, মিউজিয়াম সবকিছুই মনে রাখার মতো! এত সুন্দর ভিউ, এত সুন্দর ন্যাচারালিটি; একসঙ্গে দুজন হাত ধরাধরি করে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করে দেওয়া যায়। এরপর আসি থিম্পুতে। পারোর পরে সৌন্দর্যের দিক থেকে দ্বিতীয় থিম্পু! থিম্পুর উল্লেখযোগ্য প্লেস হলো দোচালা পাস, অরেঞ্জ গার্ডেন, থিম্পু জং ইত্যাদি। থিম্পুর পরে আরেকটা সুন্দর সিটি আছে আর সেটি হচ্ছে ‘পুনাখা’! থিম্পু থেকে ঘণ্টা চারেকের রাস্তা। কিন্তু বড় সুন্দর! পুনাখা জং, মেইল অ্যান্ড ফিমেইল রিভার আপনার মনে দোলা দিতে বাধ্য। পাশাপাশি জড়াজড়ি করে দুই রঙের দুটো নদী একসাথে ভাবা যায়? এই নদীর ধার ধরে যখন আপনি হেঁটে যাবেন মনে হবে কোন অন্যভূবনে আছেন।

vutan-in-(4)

থাকা-খাওয়া
ভুটান অনেক শীতপ্রধান এলাকা। তাই চেষ্টা করবেন, যেসব হোটেলের উপর সূর্যের আলো পড়ে ওসব হোটেল বেছে নিতে। নয়তো ঠান্ডায় অনেক বেশি কষ্ট হবে। হোটেলে ওঠার আগে জেনে নেবেন গীজার আর রুম হিটার আছে কিনা। অনেক সময় রুম হিটার না থাকলে আলাদা ভাড়া নিতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিরাত ২০০-২৫০ রুপি ভাড়া। সাধারণ মানের হোটেল মোটামুটি এক-দেড় হাজারের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। নিজে একটু যাচাই করে হোটেলে ওঠাই ভালো। শীতপ্রধান এলাকা হওয়ায় ওরা বারবার বিভিন্ন ধরনের গরম লিক্যুইড খাবার খেয়ে থাকে। যা কিনা শরীর গরম রাখতে খুব উপকারী। শুধু লিক্যুইড মিল ছাড়াও ওদের অন্যান্য খাবার একটু গরম টাইপের হয়। গরম মশলার ব্যবহারটা অনেক বেশি। স্যুপ, বিভিন্ন ধরনের চা, কাঁচা সুপারি দিয়ে পান (ওদের ভাষায় ধুমা), গরম মশলার পিঠা ইত্যাদি ওদের উল্লেখযোগ্য খাবার। সকালের নাস্তা মোটামুটি ২০০-২৫০ রুপি হলেই যথেষ্ট। দুপুরের লাঞ্চ আর রাতের ডিনার ৭০০-৮০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে। ওখানে যা-ই খাবেন সব ভেজিটেবল নেবেন। মাংস একদম এড়িয়ে যাবেন। কারণ শুকরের মাংস ওদের প্রধান খাবার!

vutan-in-(5)

ভাষা
ভুটানের লোকদের নিজস্ব ভাষা আছে। কিন্তু ওরা ইংরেজি খুব ভালো জানে এবং বলতে পারে। আপনি ইংরেজিতে অনায়াসে কন্ট্যাক্ট করতে পারেন। কিন্তু তার ওপর আপনি যদি হিন্দি জানেন, সেটা তো আরো ভালো! হিন্দিও ওরা খুব ভালো বোঝে। এই দুই ভাষার যে কোন একটা জানা থাকলেই হবে।

vutan-in-(6)

খরচ
দু’জনের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা হলেই যথেষ্ট। ডলার কিনে আবার ডলার থেকে রুপি করলে সেটা ৩২ হাজার-৩৫ হাজার রুপিতে এসে ঠেকে। তাই যদি স্থলবন্দর ব্যবহার করেন বাংলা টাকা এনে ভাঙালেই বেশি লাভবান হবেন। সেক্ষেত্রে খরচ আরো কমে যাবে। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে সুন্দরভাবে প্ল্যান করতে পারলে অনেক কম খরচেই ঘুরে আসা যায়।

ফয়সাল খান/এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।