আঁকাবাঁকা পথে স্বর্ণমন্দির ও নীলাচল

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪৯ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

হুট করেই সিদ্ধান্ত বান্দরবান যাওয়ার। সন্ধ্যায় পরিকল্পনা করে রাতেই সিলেট থেকে চট্টগ্রামমুখী ট্রেনের টিকিট কাটলেন। পরদিন সকাল সোয়া ১০টায় সিলেট রেলস্টেশন থেকে বান্দরবানের উদ্দেশে তাদের যাত্রা শুরু। সঙ্গী আরিয়ান ও আকাশ। ঘুরে এসে লিখেছেন আজহার উদ্দিন শিমুল-

সারা দিন ট্রেন ভ্রমণের পর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম পৌঁছলাম। সারা দিন ধকল গেছে। আকাশ চলে গেল তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধুর বাসায়। আমি আর আরিয়ান স্থানীয় একটি হোটেলে উঠলাম। রেলস্টেশনের আশপাশে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ নিলাম ১ হাজার ২শ’ টাকায়। রাতে খেয়ে সেদিনের মতো শুয়ে পড়ি।

nilachal

পরদিন ভোর পৌনে ৬টায় আমরা তিন জন রেলস্টেশনের পার্শ্ববর্তী নিউ মার্কেট থেকে ২ নম্বর বাসে চড়ে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল চলে যাই। ভাড়া জনপ্রতি আট টাকা। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে গিয়ে বান্দরবানের উদ্দেশে বাসের তিনটি টিকিট কিনি। বান্দরবান যেতে পরিবহনের বাসই যথেষ্ট। ভাড়া ১১০ টাকা।

যাত্রাপথে আঁকাবাঁকা রাস্তা দেখে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম। কারণ তিন জনেরই প্রথম বান্দরবান ভ্রমণ। রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পরিষ্কার। তেমন কোন যানজট না থাকায় আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম।

বান্দরবান পৌঁছে প্রথমেই সকালের নাস্তা সেরে নেই। এরপর ঘুরে বেড়ানোর পালা। আমাদের প্রথম লক্ষ্য স্বর্ণমন্দির। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে পৌঁছে গেলাম স্বর্ণমন্দিরে। মন্দিরের প্রকৃত নাম বুদ্ধধাতু জাদি। লোকমুখে হয়েছে স্বর্ণমন্দির। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উল্লেখযোগ্য উপাসনালয়। মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর আদলে তৈরি। বান্দরবান শহর থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে বালাঘাটের পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। অনেকগুলো সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে হয়। জুতা নিচে রেখে খালি পায়ে প্রবেশ করতে হয়।

nilachal

স্বর্ণমন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন আছে। ধূমপান, উচ্চশব্দে কথা বলা ও ভিডিও ধারণ সম্পূর্ণ নিষেধ। জাদির রেলিং, দেয়াল ও বুদ্ধের আসনে বসা যাবে না। বুদ্ধমূর্তির অনুকরণে ছবি তোলা ও স্পর্শ করা নিষেধ। এছাড়া অনুষ্ঠান চলাকালে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। আমরা নিয়ম মেনে উপাসনালয়টি পর্যবেক্ষণ করেছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও চোখে পড়ার মতো। মন্দিরের আশপাশে সবসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করেন। সোনালি রঙের মন্দিরে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা করে কুপণ নিতে হয়। ঘণ্টাদুয়েক অবস্থান করে ফিরে এলাম বান্দরবান শহরে।

হোটেল হিলভিউ আগেই বুক করা। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। পরবর্তী গন্তব্য ছিল নীলাচল। শহর থেকে অটোরিকশা ও চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করে নীলাচল যাওয়া যায়। আমরা ৪০০ টাকায় নীলাচল যাই। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা। সমতল ভূমি থেকে পাহাড়ের দিকে অটো যখন উঠছিল, তখন সবাই ভয় পেয়েছিলাম। এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করেছে।

nilachal

নীলাচল থেকে বান্দরবান শহর একনজরে দেখা যায়। মেঘমুক্ত আকাশে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এখানকার বাড়তি আকর্ষণ নীল রঙের রিসোর্ট ‘নীলাচল স্কেপ রিসোর্ট’। সাধারণ পর্যটকরা এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতে পারেন। আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি স্পট। সময় স্বল্পতার কারণে বেশি জায়গায় যেতে পারিনি।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান যেতে বেছে নিতে পারেন পরিবহনের যে কোনো একটি বাস। পরিবহনের ভাড়া এসি জনপ্রতি ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। নন-এসির ভাড়া ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়া।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, এমসি কলেজ প্রেসক্লাব, সিলেট।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।