উত্তাল ঢেউয়ে আনন্দ ভ্রমণ
১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সবাই উপস্থিত প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় নিয়ে। খাওয়া-দাওয়া শেষে উঠলাম রাত ৮টার ট্রেনে। আমরা ১১ জন। চট্টগ্রামে পৌঁছলাম খুব ভোরে। সেখান থেকে সৌদিয়া বাসে পৌঁছলাম বুকিং করা হোটেলের সামনে। তখন সকাল প্রায় সাড়ে ৮টা।
হোটেলে ব্যাগপত্র রেখে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করেই ফুটবল নিয়ে সমুদ্রস্নানের জন্য বের হলাম। সমুদ্রের বিশালতায় হারিয়ে গেলাম। বারবার বিমোহিত হচ্ছিলাম সাগরের গর্জনে। বালুতীরে ফুটবল খেলায় মেতে উঠলাম। বালু অনেক উত্তপ্ত হওয়ায় কিছুক্ষণ খেলাধুলা করে নেমে পড়লাম গভীর জলরাশিতে। দৌড়-ঝাঁপে গা ভিজিয়ে জলের ঢেউয়ে ভেসে যেতে লাগলাম। এর মধ্যে ছবির ক্লিক তো হচ্ছেই, সেটা না-ই বললাম। একটু ঢেউয়ের গভীরে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না, তাই স্পিড বোটে চেপে বসলাম।
সাগরের বিশালতায় জার্নির ক্লান্তি আগেই দূর হয়ে গেছে। দুপুরে খাওয়ার সময় হয়ে গেছে, ফিরে আসলাম হোটেলে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে গেলাম। শেয়ার করে দুই-তিন প্রকারের সামুদ্রিক মাছের স্বাদ নিয়ে খাওয়া শেষ করলাম।
ইউটিউবে দেখা মেরিন ড্রাইভের লোভ সামলাতে পারছিলাম না। এবার সবাই একই রঙের ‘বাকৃবি সাংবাদিক সমিতি’ লেখা গেঞ্জি পরে উঠলাম চান্দের গাড়িতে। চলতে লাগলো গাড়ি, ঝুনঝুনির তালে বাড়তে থাকলো আমাদের দলীয় সংগীতের আওয়াজ। পাহাড় আর সমুদ্রের বিশালতার সঙ্গে সুন্দর রাস্তায় অসাধারণ অনুভূতি।
হিমছড়িতে কিছুটা যাত্রাবিরতি। পাহাড়ের উপরে উঠে ঝটপট কয়েকটা সেলফি ও পাহাড় থেকে সমুদ্র দেখে নেমে পড়লাম। সুর-বেসুরো গানের তালে ছুটে চললাম ইনানী বীচের দিকে। যেতে যেতে বিমোহিত হচ্ছিলাম। বিশাল বালুতীরে সাগরের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। ঢেউয়ের মাঝে পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াতে লাগলাম। চড়লাম বালুর উপর দিয়ে ছুটে চলা গাড়িতে।
আবহাওয়া খারাপ থাকায় সূর্য আমাদের সঙ্গে দেখা করলো না। তার সঙ্গে অভিমান না করে ফিরে এলাম হোটেলের দিকে। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে অভিমান হলো ঠিকই। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সাগরে ৪ নম্বর সংকেত। ফলে কাল জাহাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।
সব আশা ভেস্তে গেলো। তাতে কি? জীবন তো একটাই। প্রচুর আনন্দ করতে হবে। মিটিং বসলো- এখন কী করা যায়, কোথায় ঘুরবো বা কী করবো? সবারই স্বপ্ন সেন্টমার্টিন যাবো, থাকবো, মজা করবো। কিন্তু তা আর হলো না । বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটায়, কেউ রাতের সমুদ্রের গর্জন শুনতে। কয়েকজন চলে গেলাম বার্মিজ মাকের্টে। নাস্তা করা প্রয়োজন। নাস্তা করে ঢুকে পড়লাম মার্কেটে। এক বার্মিজ দোকান থেকে কেনা হলো অনেক কিছু। একজন আচার, চকলেট নিলো ১ হাজার ৬শ’ টাকার। মার্কেট শেষ করে হোটেলে এলাম। প্রচুর ঘুম হবে এখন।
সকালে উঠে নাস্তা করে তৈরি হলাম। সিদ্ধান্ত হলো মহেশখালী দ্বীপে যাবো। মহেশখালীর উদ্দেশে উঠলাম স্পিড বোটে। ছুটে চললো স্পিড বোট। সেতু পার হয়ে আদিত্য মন্দির ও পাহাড়ের ওপর চড়লাম। বিখ্যাত মহেশখালীর পান ও ডাব খেলাম।
একটু দেরি করে রওয়ানা দেওয়ায় অনেক বেলা হয়ে গেছে, তাই বেশি দূরে যাওয়া সম্ভব নয়। অটো নিয়ে ছুটলাম আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে। ফেরার সময় দেখি ভাটা পড়ে গেছে। স্পিড বোটে ওঠা ও যাত্রা শুরুর দারুণ অভিজ্ঞতা হলো।
ফিরে এলাম হোটেলে। সেন্টমার্টিন আর যাওয়া হলো না। ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। তবুও অনেক আ্যাডভেঞ্চার ও আনন্দের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির বাৎসরিক আনন্দ ভ্রমণ।
মো. শাহীন সরদার/এসইউ/আরআইপি