জগদীশের বাড়ি থেকে পদ্মার চর!

ইকরামুল হাসান শাকিল
ইকরামুল হাসান শাকিল ইকরামুল হাসান শাকিল , পর্বতারোহী ও লেখক
প্রকাশিত: ১০:২৮ এএম, ১৫ আগস্ট ২০১৭

‘জাহাজ যেমন ডাকে সেইভাবে ডাক দিও তুমি
তোমার ছাড়ার আগে একবার হর্নখানি দিও
সকল বন্ধন ছিঁড়ে তোমার বন্ধন তুলে নেবো,
একটি সামান্য ব্যাগ কিংবা তাও ফেলে দিতে পারি।’
কবি মহাদেব সাহা কবিতায় হয়তো তার প্রিয়ার ডাকে সামান্য ব্যাগটা ফেলে দিতে পারেন। তবে সেই সামান্য ব্যাগটাই কাঁধে তুলে নিয়েই ঘর ছাড়ার পাগলও কম নেই। তেমনি সেই ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘর ছেড়ে প্রকৃতির প্রেমে সুযোগ পেলেই আমরা বেরিয়ে পড়ি কাছে কিংবা দূরে। হারিয়ে যাই নিজেদের মতো করে।

jagonews24

ঘুরে এলাম জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার রূপ আর স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ি থেকে। ১৪ জনের একটি দল দু’টি নোয়াহ গাড়ি নিয়ে যাই। প্রথমে গাড়ি দু’টি আমাদের সুবিধামতো জায়গা থেকে তুলে নিয়ে আল রাজ্জাক হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে সবাই একত্র হয়ে সকালের নাস্তা করি। দলনেতা মুহিত ভাই এভারেস্ট জয়ী আমাদের আগেই হোটেলে এসে পৌঁছান। খাবার শেষে সকাল ৮টার দিকে আমরা আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করি।

ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে। গাড়ি চলছে। যদিও গান ধরেছি ‘গাড়ি চলে না, চলে না রে...’। পথে চা পানের বিরতি। কে কোন চা খাবে, কার চিনি কম বা বেশি- এসব নিয়ে বেশকিছু সময় কেটে গেল। চা খেয়ে আবার গাড়ি চলতে শুরু করেছে। চলছি সমতল রাস্তায়, গান শুনছি অঞ্জন দত্তের ‘দার্জিলিংয়ের রাস্তায়’। সাড়ে নয়টার মধ্যেই আমরা শ্রীনগর রাঢ়ীখাল স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ি চলে এলাম। জগদীশ বসুকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। এখানে একটি জাদুঘর রয়েছে। যেখানে বসুর বেশকিছু নথিপত্র সংরক্ষণ করা আছে। কমপ্লেক্সের পাশেই ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে তার নামেই ‘স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন ও কলেজ’।

jagonews24

ঘণ্টাখানেক এখানে থাকার পর আমরা ভাগ্যকুল বাজারের উদ্দেশে রওনা হলাম। ঢাকার কাছেই এতো সুন্দর গ্রামীণ পরিবেশ কার না ভালো লাগে। আঁকাবাঁকা পথ আর সবুজের সমারোহ। রোদ আর কুয়াশার মিশেল দিনটাই যেন ঘুরে বেড়ানোর। আধঘণ্টার মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম ভাগ্যকুল বাজারে। এই বাজারে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম, ক্ষেত থেকে তুলে আনা টাটকা সবজি আর নদী থেকে তুলে আনা তাজা তাজা মাছ। এখানে কমদামে টাটকা সবজি পেয়ে আমাদের অনেকেই লাউ, আালু, শাক ইত্যাদি কিনে নিলো। রুপক ভাই তো প্রায় আমার সাইজের একটা লাউ কেনেন। এই এক লাউ দিয়েই কি তিনি পুরো শীতটাই পার করে দেয় কি না কে জানে? কেনাকাটা শেষে আমরা গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে মুন্সীগঞ্জের বিখ্যাত মাঠা খাই। মাঠা অবশ্য শামীম ভাই বেশি খেয়েছে। আমিও খেয়েছি দুই গ্লাস খেয়েছি।

jagonews24

সাড়ে বারোটার দিকে আমরা দোহার মৈনটঘাট পৌঁছাই। বিশাল পদ্মার পাড়ে চিকচিক বালুময় ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে চলছি দূর বালুচরে। দু’চোখ যত দূর যায় শুধু পানি আর পানি। দেখা যাচ্ছে- আকাশ আর পানি এক জায়গায় মিলিত হয়েছে। শীতল বাতাস আর পানির ঢেউ দেখতে দেখতে একসময় বালুময় পদ্মার এক ছোট চরে এলাম। এর আগে কখনো আমি চরে আসিনি। তাই আমার আনন্দটাও অনেক বেশি। এখানে আমাদের দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন মুহিত ভাই। ছেলেদের মধ্যে আমি ও মেয়েদের মধ্যে রত্না আপু প্রথম হই। কত রঙে ঢঙে আমরা ছবি তুলি তার হিসাব নেই। কেউ বসে, কেউ বালু উড়িয়ে আবার কেউ লাফিয়ে শূন্যে ভেসে।

jagonews24

মৈনটঘাট থেকে আমরা চলে আসি বান্দুরা বাজারে। এখানে দুপুরের খাবার খেয়ে এখানকার বড় গির্জা দেখতে যাই। হাসনাবাদের পবিত্র জপমালা রানির গির্জা। এটি ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানেই মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ‘একাত্তরের যিশু’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল। যেহেতু আজ বড়দিন; সেহেতু গির্জায় উৎসব চলছে।

দিনের ক্লান্ত বিকেলে যখন সূর্যটা পশ্চিম আকাশে; তখন আমরা আবার ঢাকার পথে। এবার বাড়ি ফেরার পালা। আরো একটি আনন্দঘন দিনের সমাপ্তি হলো আবারো নতুন কোন গন্তব্যের অপেক্ষায়

এসইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।