রোমাঞ্চকর কেওক্রাডং যাত্রা
ছোটবেলা থেকেই পাহাড়ে চড়তে খুব পছন্দ করতাম। আর সে কারণেই চট্টগ্রাম খুব বেশি যাওয়া হতো আর আশেপাশের সব পাহাড়ে উঠে যেতাম সুযোগ পেলেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন পড়ি, তখন থেকেই জেনে এসেছি কেওক্রাডং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত, যার উচ্চতা ৩১৭২ ফুট। সেইসময় থেকেই মনের মাঝে সুপ্ত ইচ্ছা- কোন একদিন আমি এই সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠবো আর রাত্রিযাপন করবো সেখানে। আমি থাকবো সর্বোচ্চ চূড়ায় আর আমার যতদূর দৃষ্টি যাবে শুধু পাহাড় আর পাহাড় চোখে পড়বে। আমি আকাশ আর পাহাড়ের মাঝে ভেসে বেড়াবো। অবশেষে সেই ইচ্ছেটা পূরণ হলো ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
বারোজনের গ্রুপ তৈরি হলো। যাদের প্রায় সবাই আমার মতো টাইপরা কামলা, মানে ব্যাংকার। শুরু হলো প্রস্তুতি। হালকা শীতের কাপড়, টি-শার্ট, ট্রাউজার, শর্টস, নি-গার্ড, সানগ্লাস, এই ওষুধ সেই ওষুধ। কেনাকাটা আর শেষ হয় না। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল শারীরিকভাবে ফিট থাকা। কারণ পায়ে হেঁটে এত উচ্চতায় ওঠাটা যে খুব সহজ হবে না সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের মাঝে কারো কারো আবার অতি উত্তেজনায় হাঁটার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে পায়ে ফোসকা পরে একাকার।
অবশেষে বাইশ তারিখ বুধবার রাত সাড়ে দশটায় কলাবাগান বাস কাউন্টারে একত্রিত হই আমরা দশজন। বাকি দুইজন যোগ দেয় কুমিল্লা থেকে। একেকজনের প্রস্তুতি আর উত্তেজনা দেখে মনে হচ্ছিল কেওক্রাডং জয় না, আমরা কোন দেশ জয় করার যুদ্ধে সামিল হতে রওনা করছি। শুরু হয় আমাদের যাত্রা। গাড়িতে উঠে প্রিয় আলমগির ভাই যখন ‘চল না ঘুরে আসি অজানাতে’ গান ধরলেন, আমরাও তখন বনে গেলাম গানের শিল্পী! আমাদের উত্তেজনা ছড়িয়ে গেল বাসের অন্য যাত্রীর মাঝেও, তারাও কণ্ঠ মেলালেন আমাদের সঙ্গে।
পরদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ যখন একেএকে সবার ঘুম ভাঙল, বাস তখন চট্টগ্রাম শহরের রাস্তা ছেড়ে বান্দরবানের পাহাড়ি রাস্তায় চলতে শুরু করেছে। মুগ্ধ হয়ে দু’পাশের পাহাড় দেখছিলাম, আর মুখ দিয়ে অস্ফুটে চলে আসে ‘সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’ গানটি। বাস যতই বান্দরবান শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে উত্তেজনাও ততই বাড়ছিল। বান্দরবান শহরে যখন পৌঁছাই সকাল তখন প্রায় আটটা। শহরের স্বর্ণশীলা হোটেলে ফ্রেশ হয়ে ফুড প্যালেস থেকে গোগ্রাসে নাস্তা গিলেছি। খেতে বসে মনে হচ্ছিল, সবাই বুঝি পাহাড় দেখার জন্য রাক্ষস হয়ে গেছি।
এরপরেই শুরু হয় আমাদের মূল যাত্রা। বান্দরবানের পাহাড়ি ঢেউ খেলানো রাস্তা ধরে যখন আমাদের চাদেরগাড়ি ছুটে চলছিল তখন একদিকে চোখে পড়ছিল শুধু পাহাড়ের ঢালে রাস্তা আর অপরদিকে যতদূর চোখ যায় কেবল পাহাড় আর পাহাড়। কিছুদূর গিয়ে পাহাড়ি কলা আর পেপে দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। সেই সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে আসা ছোট ঝরনার পানিতে তৃষ্ণা মেটানো!
ঢেউ খেলানো পাহাড়ি রাস্তায় চাদেরগাড়িতে চলতে চলতে যখন রুমা বাজার পৌঁছাই তখন প্রায় দুপুর। সেখানে সেনাবাহিনীর কাছে নাম লিপিবদ্ধ করতে হয়। রুমা বাজারেই যোগ দেয় আমাদের গাইড সুবল। এখান থেকে লাঞ্চ সেরে শুরু হয় পরবর্তী যাত্রা বগালেকের উদ্দেশ্যে। সামনে থেকে যত পর্যটকদের গাড়ি আসছিল প্রত্যেক পর্যটকই ধুলায় মাখামাখি হয়ে একেকজনকে ভূতের মত মনে হচ্ছিল। বুঝতে বাকি রইলো না যে সামনে কাঁচা রাস্তা।
কিছুদূর যাওয়ার পরে বুঝতে পারি কেবল কাঁচা রাস্তা নয়, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল ভয়ংকর এক আতঙ্কের রাস্তা। হয়তো পৃথিবীর ভয়ংকরতম রাস্তা। জি ঠিকই বলছি, পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকরতম রাস্তা! পুরো রাস্তাটাই ছিল বালুর এবং অবশ্যই বলার অপেক্ষা রাখে না পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠেছে সেই রাস্তা। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর লেগেছে এই কারণে যে রাস্তাটা কোথাও কোথাও পুরো আশি ডিগ্রি এঙ্গেলে উপরে উঠে গেছে। দেখা গেল আশি ডিগ্রি এঙ্গেলে উপরে উঠে ঠিক পর মুহূর্তেই আবার আশি ডিগ্রি এঙ্গেলেই নিচে নামছে! তার উপর আবার এবড়োথেবড়ো পাথরের রাস্তা! এই রাস্তার ছবি বা ভিডিও নেয়াটা অসম্ভব ছিল, কারণ দুই হাতে গাড়ির রড ধরে রাখাটাই ছিল চ্যালেঞ্জিং।
এভাবে টানা চারঘণ্টা চলার পরে পৌঁছাই বগালেক নামক এক মোহময় স্থানে। এই চারঘণ্টা সবাই আল্লাহ আল্লাহ করেছি- যেন জীবন নিয়ে পৌঁছাতে পারি! বগালেকে পৌঁছে যেন সবাই ভয়ংকর এই চারঘণ্টা একদমই ভুলে গেছি, এতোই বিমোহিত করেছে বগালেকের সৌন্দর্য! লেকের একপাশে ছিল আমাদের কটেজ, কটেজের সামনের দিকে ছিল পাহাড়িদের বসবাস এবং কটেজের পেছনেই লেক। আর লেকের ওইপাশে কেবল পাহাড় আর পাহাড়। প্রায় এক হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের কোলে এমন একটি স্বচ্ছ পানির লেক দেখে যেকোন প্রকৃতিপ্রেমীই পাগল হয়ে যেতে চাইবে! মুখ দিয়ে একটি কথাই শুধু বের হয়েছে, ‘সুবহান আল্লাহ, এত্ত সুন্দর! কিভাবে সম্ভব!’
বগালেক নিয়ে অনেক রকমের মিথ প্রচলিত আছে! কেউ কেউ বলেন, এই লেকের মধ্যে ড্রাগন বাস করে। কেউ বলেন, এই লেকে বিশেষ কোন দেবতার বসবাস। আবার কেউ কেউ বলেন, লেকে নাকি কোনো রাক্ষস বাস করে। যে-ই বাস করুক আর না করুক এখানেই গোসল করি আমরা সবাই। গতবছর চারজন একসঙ্গে নেমে আর উঠে আসতে পারেনি, সম্ভবত চোরা পাথরে মাথায় আঘাত পেয়ে মারা গিয়ে থাকবে।
তেইশ তারিখ রাতটা আমরা এখানেই কাটাই। রাতে আয়োজন হয় স্পেশাল বারবিকিউ পার্টির। পাহাড়ের কোলে বারবিকিউ আর গানের আসর, অসাধারণ সেই অনুভূতি। গানের জন্য ছিল আমদের স্বীকৃত শিল্পী আলমগির ভাই, যার কণ্ঠ সত্যিই অসাধারণ। ডিনারে আয়োজন করা হয় পাহাড়ি মোরগ! কী স্বাদ সেই মোরগের!
পরিকল্পনা ছিল সকাল সাতটায় আমাদের প্রধান যাত্রা শুরু করবো। কিন্তু রাত যেন আর কাটছেই না! শরীর এতোই ক্লান্ত ছিল, গল্প করতে করতে কখন যে রাত পার হয়ে যায় টেরই পাইনি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই পাই দুঃসংবাদ, আমাদের গাইড এত তাড়াতাড়ি রওনা করতে পারবে না। কারণ সে সারারাত ঘুমাতে পারেনি। রাতে কাকে যেন জ্বিনে ধরেছে, তাকে নিয়েই সবাই ব্যস্ত ছিল। পরে জানতে পারি, অন্য ট্যুরিস্ট গ্রুপের কেউ একজন পাহাড়ি নেশাদ্রব্য খেয়ে অতিরিক্ত মাতলামি করেছে সারারাত!
অবশেষে সকাল দশটায় শুরু হয় আমাদের বহু প্রতীক্ষিত কেওক্রাডং যাত্রা। গাইডসহ সর্বমোট তেরজনের দল। সবার ব্যাগ কটেজে রেখে ছোট ব্যাগে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর প্রত্যেকের হাতে একটি করে লাঠি (ভর দিয়ে হাঁটার জন্য) নিয়ে রওনা হই আমরা।
মিনিট বিশেক পাহাড়ে ওঠার পরেই আমাদের অবস্থা কাহিল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর অবশ্য ধাতস্থ হয়ে আসে। কিছুক্ষণ হেঁটে সামান্য সময় বিশ্রাম আর সঙ্গে থাকা শুকনো খাবার (খেজুর, কিসমিস, হরেকরকম বাদাম) আর গ্লুকোজ, ওরস্যালাইন। এভাবেই চলছিল, সেইসঙ্গে ছিল পাহাড়ি কলা। আর সেইসঙ্গে চলছিল আল্লাহর সৃষ্টি এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা আর অনবরত সেলফিবাজি। সঙ্গে বোনাস হিসেবে ছিল আমাদের ননস্টপ সম্মিলিত চমকপ্রদ সব গানের পরিবেশনা। পথে চলতে চলতে পাহাড়িদের জীবন দেখে কেবল অবাকই হচ্ছিলাম আমরা। এই খাড়া পাহাড়ের ঢালে কোনো মানুষ বসবাস করতে পারে সেটা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না!
ঘণ্টাদুয়েক চলার পর দেখা হয়ে যায় কেওক্রাডং থেকে ফিরে আসা আশিজনের একটা দলের সঙ্গে যারা এসেছেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির ‘গ্র্যাফিক্স অ্যান্ড ডিজাইন ডিপার্টমেন্ট’ থেকে। তবে সবচেয়ে অবাক হয়েছি দুই দম্পত্তি দেখে যাদের কোলে ছিল ছোট বাচ্চা এবং তারা এই বাচ্চা কোলেই কেওক্রাডং জয় করে এসেছেন! এরমধ্যে আপুটার ছিল ষষ্ঠতম কেওক্রাডং ভ্রমণ।
ধীরে ধীরে যেন আমরা এক স্বপ্নের জগতে চলছিলাম। যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড় কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু পাহাড়। আর বহুদূরে পাহাড়ের ঢালে চোখে পড়ে দুয়েকটা পাহাড়ি ঘর, সেই ঘরগুলো আমাদের চোখে যেন ঘোর তৈরি করছিল। ঘণ্টাতিনেক হাঁটার পরে চোখে পড়ে সেই কেওক্রাডংয়ের চূড়া। দেখে যেন আর তর সইছিলো না। ভেবেছিলাম এই তো কাছেই, হয়তো আর আধাঘণ্টা লাগবে। কিন্তু আরো একঘণ্টা হাঁটার পর মনে হচ্ছিল রাস্তা যেন আরো বাড়ছে! বুঝলাম, আসলে পাহাড়ের ঢাল আর উঁচু-নিচু প্যাচানো রাস্তা হবার কারণে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাই আমাদের জন্য হয়ে গিয়েছিল বিশ কিলোমিটারের সমান।
যখন মনে হচ্ছিল ক্লান্ত হয়ে পড়েছি; তখনই গাইড ঘোষণা দিল আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে যাব দার্জিলিং পাড়ায়। দার্জিলিং পাড়া মানে কেওক্রাডংয়ের পাদদেশে কয়েকটা পাহাড়ি পরিবারের বসবাস। এখানে আধাঘণ্টার মত বিশ্রাম নিয়ে ফের শুরু হয় হাঁটা। খাড়া উপরের দিকে উঠতে হয়েছে বলে শেষ এক কিলোমিটার উঠতে আমাদের লেগেছে প্রায় দেড়ঘণ্টা।
সাড়ে তিনটায় যখন আমরা কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় পৌঁছাই- সবাইই ছিলাম ক্লান্ত। কিন্তু চূড়ায় পৌঁছার পরে সব ক্লান্তি যেন নিমিষেই দূর হয়ে গেল অপার সৌন্দর্য দেখে। মনে হচ্ছিল, বড় কোনো নেয়ামতের মালিক বনে গেছি। আমাদের কটেজটা ছিল একদমই চূড়ায়, যেটার পেছন দরজা খুলে অকস্মাৎ চিৎকার বের হয়ে যায়। আমি তখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায় এবং আমার চারিদিকে কেবল পাহাড় আর পাহাড়! আমার স্বপ্নময় দু’টি মুহূর্তের একটি! ক্যামেরায় জুম দিয়ে দেখা যায় বহুদূরে দুয়েকটা পাহাড়ি গ্রাম, যার একটার নাম সুনসং পাড়া আর আরেকটা ছিল বম পাড়া। ধীরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছিল আর আমাদের ফটোগ্রাফিও চলছিল অনবরত।
সন্ধ্যা যতই এগিয়ে আসছিল শীত যেন ততই জেঁকে বসছিল। সন্ধ্যার পরে মনে হচ্ছিল আমরা যেন বরফের এক গুহায় প্রবেশ করেছি। ফলে বাইরে বেশিক্ষণ থাকার সাহস হয়নি কারোরই। চূড়ায় ছিল কেবল পাহাড়ি রাজা ‘লালা’ সাহেবের পরিবারের বসবাস, একটি আর্মি ক্যাম্প, আর একটি হেলিপ্যাড।
রাত নয়টার মধ্যে ডিনার সেরে কটেজে প্রবেশ করি সবাই। সময় যতই গড়াচ্ছিল শীতের সঙ্গে ভয়টাও যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল আমার! মনে হচ্ছিল এই বুঝি কোন পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এসে আক্রমণ করে বসলো। রাত যখন প্রায় বারোটা কটেজের পাশে খসখস আওয়াজ শুনে ভয়ে হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল কয়েকশ’গুণ। মনে মনে শুধু দোয়া-দরুদ পাঠ করছিলাম। বলাই বাহুল্য, রাতে ভয়ে আমি ঠিকমত ঘুমাতেই পারিনি। সকাল যখন ছয়টা তখন বিছানা ছেড়ে উঠি। জানতে পারি- কেবল আমি না, গ্রুপের সবাই নাকি ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারেনি! ঘুম হোক আর না হোক সকালের সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য মন আর মানছিলো না। অবশেষে পুরো সূর্যোদয়ের দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে পূর্বের দিনের সূর্যাস্ত দেখতে না পারার দুঃখ ঘুচাই। দৃশ্যটা যেন এখনো চোখে ভাসছে, মনে হচ্ছিল পাহাড়ের কোল থেকে ডিমের একটা কুসুম ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসছে।
সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখে আর দেরি করিনি। ফিরতি যাত্রা শুরু হয়ে যায় আমাদের। আসার সময় মনে হচ্ছিল ফেরার পথে হয়তো এত বেশি কষ্ট হবে না, শুধু নিচের দিকে নামতে থাকবো। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো উপরে ওঠার চাইতে নিচে নামাটা ছিল অনেক বেশি কষ্টদায়ক! কারণ তখন প্রেসারটা পরে সরাসরি পায়ের পেশিতে। ফেরার পথে চিংড়ি ঝরনার দেখা পাওয়াটা ছিল বাড়তি পাওনা, যদিও খুব বেশি পানি ছিল না।
যথারীতি এগারটা নাগাদ আবার বগালেক পৌঁছাই। সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আবার ফিরতি পথে রওনা করি আমরা বারোজন। আবার সেই ভয়ংকর রাস্তা। আবার সেই জীবনের ভয়।
ফেরার পথে ভাবছিলাম- পর্যাপ্ত সময় পেলে নীলাচল যাবো সূর্যাস্ত দেখার জন্য। কিন্তু আমাদের জন্য চমক অপেক্ষা করছিল! রুমা বাজারে পৌঁছার পর আমাদের গাইডের পরামর্শে নীলাচল না গিয়ে আমরা চলে যাই রিঝুক ঝরনা, যেটার পাহাড়ি নাম সিসুং সান। যাবার পথে শঙ্খ নদীর অসাধারণ সৌন্দর্য আমাদের কেবল চোখই জুড়িয়ে দিচ্ছিলো না, ভাবনায় ফেলে দিচ্ছিল- আসলেই বাংলাদেশ এত্ত বেশি সুন্দর! দু’পাশে পাহাড় আর মাঝখানে নদী। আগে ভাবতাম এ কেবল স্বপ্নেই সম্ভব! প্রায় পৌনে একঘণ্টা ইঞ্জিনবোটে যাবার পরে পৌঁছাই সেই ঝরনায়। দেখে যেন আর তর সইছিল না আমাদের। আল্লাহর আরেক অবাক সৃষ্টি। ঝরনার বরফঠান্ডা পানি আর শঙ্খ নদীর কুসুম গরম পানিতে গোসল করে যেন মন ভরছিল না।
প্রায় ঘণ্টাখানেক কাটানোর পরে যখন রুমা বাজারে এসে গাড়িতে চেপে বসি তখন যেন ক্লান্তি সবাইকে ধীরে ধীরে চেপে বসছিল। রুমা বাজার থেকে চাদেরগাড়িতে চেপে আবার বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। ততক্ষণে সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। রাস্তাটা এতোটাই নীরব আর জনমানবহীন ছিল, ভয়ে একেকজন কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। সেইসঙ্গে মনে হচ্ছিল পেটের মধ্যে যেন কেউ ইঁদুর ছেড়ে দিয়েছে। বান্দরবান শহরে যখন পোঁছাই; তখন রাত প্রায় আটটা। পৌঁছেই সোজা রেস্তোরাঁয়। একেকজন যেন রাক্ষস হয়ে গিয়েছিলাম!
খাওয়া শেষ করতে করতেই গাড়ি ছাড়ার সময় হয়ে যায়। তিনদিনের পাহাড়ি ভ্রমণ শেষে আবার ইট-কাঠের ঢাকা শহরের পথে আমরা। প্রিয় পাহাড় আবার ফিরে আসবো আমি, হয়তো আরো দূরের কোনো পাহাড়ে। যেখানে সাধারণ মানুষের পা পড়েনি কখনো!
এসইউ/পিআর